ভারতে বিদ্যালয়ে হিন্দু শাস্ত্রের শ্লোক মুসলিমদেরও পালন করার নির্দেশ
ভারতে অবশ্য পালনীয় প্রভাত প্রার্থনায় হিন্দু শাস্ত্রের ‘সাংস্কৃতিক শ্লোক’ এবার মুসলিমদেরও পালন করতে হবে। সম্প্রতি এমনই নির্দেশ দেওয়া হয় দেশটির কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলিতে। নিয়মের ব্যত্যয় হলে সাজার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দেশের সর্বভারতীয় মুসলিম সংগঠন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। যদিও সর্বোচ্চ আদালত আবেদনটি গ্রহণ করেনি, তবে পরবর্তী শুনানির সময় বিষয়টি নিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চের সামনে তাদের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেওয়া হবে।
জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ তাদের আবেদনপত্রে জানিয়েছে, এ নিয়ম সংবিধান বিরোধী। ভারতীয় সংবিধানে সবধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের প্রধান মূলনীতি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র সঙ্গে আদেশটি সাংঘর্ষিক। অন্য ধর্মের সাংস্কৃতিক বিষয় মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
আবেদন পত্রে বলা হয়, সংবিধানের ৯২ এর ১০ম অনুচ্ছেদের সাধারণ প্রার্থনাকে নতুন করে সংশোধিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলোর জন্য। এটি হিন্দু ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও অহিন্দুদের বাধ্যতামূলকভাবে উপাসনা, গান করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষকরা শাস্তি দেবেন। যেহেতু উল্লেখিত প্রার্থনা মূলত হিন্দুধর্মের ওপরই ভিত্তি করে, সেহেতু অন্যান্য সংখালঘু সম্প্রদায়ের উপর তা চাপিয়ে দেওয়ায় আমরা মর্মাহত।
ইতোপূর্বে, মধ্যপ্রদেশের এক আইনজীবী বিনায়ক শাহ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়। সুপ্রিম কোর্ট ঐ আবেদন গ্রহণ করে।
বিচারপতি ফলি নরিম্যান এবং বিচারপতি নবীন সিনহার বেঞ্চ আবেদনকারীর বক্তব্য শোনার পর বিষয়টির নিষ্পত্তি বৃহত্তর সংবিধান বেঞ্চে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।
আবেদনকারী বলেন, ঐ নির্দেশের ফলে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা। তাছাড়া জোর করে একটি বিশেষ ধর্মের শাস্ত্রীয় গান কেন সরকারি স্কুলে বাধ্যতামূলক হবে। এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সরকারের অর্থে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন বিশেষ ধর্মের গুণকীর্তন করা যায় না। এটা নিয়ে আদালতে রায় রয়েছে। তাছাড়া সংস্কৃত ভাষাকেও প্রকারান্তরে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হচ্ছে সব ধর্মের ছাত্রছাত্রীদের জন্য।
আবেদনকারীর আইনজীবী বিনায়ক শাহ বলেন, রাষ্ট্র এভাবে বিশেষ ধর্মের বিধান সব ধর্মের ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না।
তিনি বলেন, ধর্মাশ্রিত কোন প্রার্থনা, গান ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বাল্যকাল থেকেই প্রভাব বিস্তার করবে। বিশেষ করে অহিন্দু পড়ুয়ারা ভাবতে পারে তাদের ওপর জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্য ধর্মের নিয়ম। এটা সংবিধানের ২৮(১) ধারার বিরোধী।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় স্কুলে এ ধরনের নিয়ম চালু করার পর কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন সমর্থক ভূমিকা নেওয়া হয়নি বরং বিতর্কটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকার পক্ষ থেকে আদালতের কাছে জানানো হয় যেহেতু কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, তাই এই নির্দেশ নিয়ে সরকারের কিছু করার নেই।
প্রতিক্ষণ/এডি/অনু