ভালোবাসায় সিক্ত হলেন অনুপ চেটিয়া

প্রকাশঃ নভেম্বর ১৯, ২০১৫ সময়ঃ ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

onup1দীর্ঘ ২৪ বছর পরে উলফার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া গত বুধবার আসামে পা রাখলেন । ১১ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ সিবি আইয়ের হাতে চেটিয়ার দায়িত্ব  তুলে দেয়। ১২ নভেম্বর দিল্লির বিশেষ সিবি আই আদালত তাকে ৬ দিনের ট্রানজিট রিমান্ড দেয়।

অনুপ চেটিয়া আসবেন জেনে বুধবার সকাল থেকেই তার স্ত্রী-পুত্র, এমন কী পুলিশ কর্তারাও গুয়াহাটি বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বিকেল অবধি তিনি আসেননি। পরে উলফার তরফে জানানো হয়, ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে যাত্রীবিমানে আনতে সমস্যা হয়েছিল। বিএসএফের বিশেষ বিমানে চেটিয়াকে গুয়াহাটি আনা হয়। বিমানবন্দরের পেছনের ভিআইপি দরজা দিয়ে ৫টি গাড়ির কনভয় তাকে নিয়ে সিজেএম আদালতে রওনা হয়। বিস্তর দৌড়ঝাঁপ করেও বিমানবন্দরে তার দেখা পাননি মণিকাদেবী ও উলফা নেতারা।

বুধবার বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে নীল জামা, কালো প্যান্ট আর লালচে চুলের চেটিয়াকে নিয়ে কনভয় সোজা ঢুকে যায় আদালত চত্বরে। সিবি আইয়ের বিশেষ আদালতে বিচারক সঙ্গীতা হালৈয়ের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই প্রদীববাবু, উলফার বিদেশ সচিব শশধর চৌধুরী, অর্থসচিব চিত্রবন হাজরিকা, সহ-সেনাধ্যক্ষ রাজু বরুয়া, নেতা প্রাণজিৎ শইকিয়া এবং মণিকাদেবী চেটিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।

চেটিয়া ছেলেদের মতো স্ত্রীর এমন চুলের ছাঁট দেখে প্রথমটায় চিনতেই পারেননি! আদালতের ভেতরে গিজগিজে ভিড়ে একান্তে কথা বলা সম্ভব ছিল না। তবু তার মধ্যেও স্বামী-স্ত্রীর কথা বলার খানিক সুযোগ করে দিয়েছিলেন সিবি আই অফিসাররা। প্রায় দেড় দশক পরে প্রথম দেখা। প্রথম দর্শনে স্বামী অনুপ চেটিয়ার কাছে যে নিজের পরিচয় দিতে হবে ভাবতেই পারেননি মণিকা বরা চেটিয়া। পরে দুজনই হেসে ফেলেন।

এই প্রথম বাবাকে দেখল ২২ বছরের জুমন। এতদিন নিজেকে কারাবন্দি ব্যক্তির সন্তান হিসেবেই দেখে এসেছে সে। আজ বিমানবন্দর থেকে আদালত অবধি বাবাকে ঘিরে সংবাদমাধ্যম ও আমজনতার যে উচ্ছ্বাস চাক্ষুষ করল তা দেখে তিনি অবাক। নিজেও ১৮ বছর জেলে ছিলেন।

প্রদীপ গগৈ তার পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে হাজির হন গুয়াহাটির সিজেএম আদালতে। এজলাসে তোলার আগে অনুপকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন উলফার সহ-সভাপতি প্রদীপ গগৈ। কুশল বিনিময়ের পরে অনুপের সামনের ফোকলা দাঁত আর বেড়ে যাওয়া বয়স নিয়ে কিঞ্চিত হাসি-ঠাট্টা হলো। বাইরে এসে প্রদীপবাবু জানান, শরীরের বয়স বাড়লেও অনুপ মনের দিক থেকে একই রকম শক্ত আছেন। তার কথায়, ‘২৪ নভেম্বর উলফার সঙ্গে কেন্দ্রের শান্তি আলোচনা রয়েছে। আশা করি অনুপও বৈঠকে থাকবে। অনুপকে দেখার জন্য এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে দিল উলফা আজও সমান প্রাসঙ্গিক।’ কিন্তু, আত্মসমর্পণকারী উলফার একাংশ দাবি করেছে, পরেশ বরুয়াকে না ফেরাতে পারলে আলোচনা অর্থহীন।onup

সিবি আই সূত্রে জানা গিয়েছে, চেটিয়ার সঙ্গে কারাগার থেকেই পরেশ বরুয়া ও দৃষ্টি রাজখোয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তবে কী পরেশকে ফেরাতে অনুপকে কাজে লাগাবে উলফা? প্রদীপবাবু বলেন, ‘এত কথা হয়নি। অনুপ অবিভক্ত উলফার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং আছেন। তিনি জনতার সামনে আসতে চান। অংশ নিতে চান শান্তি আলোচনায়।’

পৌনে দুটো নাগাদ বেরিয়ে আসেন চেটিয়া। অপেক্ষমান জনতার দিকে হাত নেড়ে হাসতেই সিবি আই অফিসারেরা দ্রুত, মাথা চেপে তাকে গাড়িতে ঢুকিয়ে দেন। এনএসজি কমান্ডোরা কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেননি। চেটিয়াকে বিমানে ফের দিল্লি নিয়ে যায় সিবি আই।

১৯৮৬ সালের হত্যার ঘটনা নিয়ে ১৯৮৮ সালে একটি মামলা দায়ের করেছিল সিবি আই। বুধবার ওই মামলায় সিবি আইয়ের আইনজীবী ১৪ দিনের জন্য চেটিয়াকে হেফাজতে চান। চেটিয়ার আইনজীবী বিজন মহাজন দাবি করেন, ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছিল সিবি আই। এত বছর পরে ওই মামলায় চেটিয়াকে আটকে রাখা অযৌক্তিক।

দুইপক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক চেটিয়াকে পাঁচ দিনের জন্য সিবি আইয়ের হেফাজতে দেন। আরো বলেন, অনুপ অসুস্থ। তাই প্রতিদিন তার ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ভাল খাদ্য দিতে হবে।

অনুপ চেটিয়ার মুক্তির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্যান্য আলোচনাপন্থী নেতার মতো আলোচনার স্বার্থে তাকেও ছাড় দেওয়া যেতে পারে। তবে এটি আদালতের বিচারাধীন বিষয়।’ সন্ধ্যায় পরেশ বরুয়া সংবাদমাধ্যমে ফোন করে বলেন, ‘অনুপ ঘরের মাটিতে ফেরায় আমরাও খুশি। ওর সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।’

কিন্তু উলফা সূত্রে খবর ছিল, চেটিয়াকে ভারতে ফিরতে নিষেধ করেছিলেন পরেশ। চেটিয়া নিষেধ না শোনায় তিনি অসন্তুষ্ট। অবশ্য পরেশ বলেন, ‘উলফায় অনুপের অবদান পর্বতসম। আমরা সকলেই ওকে শ্রদ্ধা করি।’

চেটিয়া নিজে তাকে শান্তি আলোচনায় ডাকলে তিনি কি আসবেন? পরেশ বলেন, ‘আমরা কখনই আলোচনা বা শান্তির বিপক্ষে নই। তবে আমাদের দাবি একটাই। স্বাধীন আসাম। সেই দাবি মেনে নিয়ে ভারত যদি সসম্মানে আলোচনার আহ্বান জানায়, তবে অবশ্যই ভেবে দেখব। এখন চেটিয়া শত্রু শিবিরে। আগে তিনি মুক্তি পান। সুস্থ হোন। এই সব বিষয় পরে ভাবা যাবে।’

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G