ভাষার সাথে কি ভালোবাসা নেই?
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
সকালে ছোট খালা এসেছে বাসায়। হুড়মুড় করে তার ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে বলছে, “আমার মোবাইলটা একটু দেখ তো… ভুল ওয়েলকাম টোন এসে পড়েছে আমার মোবাইলে”। আমি তার মোবাইলে ফোন দিয়ে দেখি, “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে” বাজছে। আমি বললাম ‘সমস্যা কি এতে?’
সে বলল “এটা তো ফেব্রুয়ারি মাস… এখন এই গান কেন বাজবে ভোদাই? …সামনের মাসের গান এই মাসে সেট হয়ে গেছে… এইটা কিছু হইলো?’ সে নিজেই আমার সামনে বসে কিছুক্ষণ মোবাইল টিপাটিপি করল। টিপাটিপির পর এখন সেট হয়ে গেছে, ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা…অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’। “এইটা কি হইলো? মার্চ পার হয়ে এপ্রিলে চলে গেছে… ব্যাক করা… ব্যাক করা”
আমি বললাম, ‘টিপ মাইরে বইসে থাকো… তা না তাহলে এপ্রিল পার হয়ে পহেলা-মে শ্রমদিবসের ফকির আলমগিরের গান সেট হয়ে যেতে পারে…তুমি তো পুরা ফাপড়ে পড়ে যাবে তখন … বুয়া মালি ড্রাইভাররা তো তোমাকে ফোন করে এই ওয়েলকাম টিউন শুনে ইমোশনাল হয়ে যাবে… মে মাস ছাড়া এদের নিয়ে ইমশোনাল হওয়াটা ঠিক হবে কি?’
“কি সর্বনাশ… ব্যাক করা… ব্যাক করা…”
… ১২ মাসে ১৩ পার্বণের দেশ এই বাংলাদেশ কিন্তু আমরা উৎসবগুলোকে, ওয়েলকাম টিউন এবং চুড়ি-শাড়ি-পাঞ্জাবীর রঙের ভিতর আঁটকে ফেলেছি ধরেই নিয়েছি মার্চের গান বছরের অন্য সময় বাজতে পারবে না। ধরেই নিয়েছি সাম্যের গান, তা তো একটা নির্দিষ্ট দিনের জন্যই। অন্য দিন বেজে উঠলে মনে করি, মাথা বুঝি আউলে গেছে। কেন আমি একুশে ফেব্রুয়ারির দিন সাদা না পরে ভ্যালেন্টাইন ডে’র জন্য রাখা লাল পাঞ্জাবী পরে বের হতে পারব না? ভাষার সাথে কি ভালোবাসা নেই? ভালোবাসা থেকেই তো এই লড়াই। কেন আমি ফাগুনের দিন কমলা না পরে সাদা পরতে পারব না? ফাগুনের সাথে কি শুভ্রতা নেই?
উৎসবকে উৎসবের রঙে রাঙিয়ে, তার ভিতর ঢুকে না যাই… বরং উৎসবকে নিজের রঙে সাজিয়ে, তাকে নিজের ভিতরে ঢুকাই। তখন, জুন মাসেও “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে” গানটা বেমানান লাগবে না। আমরা তো মানুষ… ক্যালেন্ডার না ভাউ।
আরিফ আর হোসেইনের ফেসবুক পাতা থেকে উপরের এই লাইনগুলো হুবহু নেয়া হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি