ভ্রমণপিপাসুদের স্বপ্নের ১২ টি গন্তব্য
থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগতটারে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে। অজানাকে জানা আর অদেখাকে দেখার বাসনা মানুষের চিরকালের। আসুন জেনে নেয়া যাক, বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ পিপাসুদের স্বপ্নের কিছু গন্তব্য সম্পর্কে-
১২। গ্রিসের সান্তরিনি দ্বীপ:
এজিয়ান সাগরে অবস্থিত গ্রিক দ্বীপগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সমুদ্র সৈকত, উঁচুনিচু পাহাড়পর্বত আর নীল-সাদা বাড়িঘরের জন্য ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করে। সান্তরিনি দ্বীপটি খ্রিস্টপূর্ব ১৬ শতকে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে বিধ্বস্ত হয়। তারপর থেকেই এটির সৈকত উঁচুনিচু আর এবড়োথেবড়ো রূপ ধারণ করে আছে। ফিরা আর ওইয়া শহরের সাগরপাড়ে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে রয়েছে চমৎকার সব বাড়ি, যেখান থেকে সাগরকে এক অন্য দৃষ্টিতে অবলোকন করা যায়। এর পশ্চিমে রয়েছে লাভায় গঠিত মনোমুগ্ধকর কালো, লাল আর সাদা নুড়িপাথরের বেলাভূমি।
১১। প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়াম:
লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির বিখ্যাত ছবি মোনালিসা সংরক্ষিত আছে প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর বিখ্যাত জাদুঘর। ৭২,৭৩৫ বর্গমিটার আয়তনের এ জাদুঘরে ৩৫,০০০-এর মত দর্শনীয় বস্তু আছে। ১২শ শতকে রাজা ফিলিপ ২ এখানে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। ১৫৪৬ সালে ফ্রান্সিস ১ এর সময় থেকে ফ্রান্সের রাজপ্রাসাদ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হতো। ১৬৮২ সালে রাজা চতুর্দশ লুই ভার্সাইতে বসবাস শুরু করেন। ফরাসি বিপ্লবের পর থেকে ল্যুভর জাদুঘর হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে।
১০। সিডনি অপেরা হাউজ:
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বন্দরে অবস্থিত এ অপেরা হাউজটি দেখতে বছরে প্রায় ৮০ লাখ পর্যটক যান। ১৯৫৯ সালে কাজ শুরু হলেও ১৯৭৩ সালে রানি ২য় এলিজাবেথ এটি উদ্বোধন করেন। পালতোলা জাহাজের মত দেখতে অপেরা হাউজটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থাপনা। ২০০৭ সালে এটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।
৯। মৃত সাগর:
ইসরাইল, পশ্চিম তীর আর জর্ডানের মাঝে অবস্থিত একটি লবনাক্ত হ্রদ যেখানে মানুষ ভেসে থাকতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটি ৪০০ মিটার নিচে অবস্থিত বলে একে পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু ভুমি বলা হয়। খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ মৃত সাগরের মাটি ভেষজ চিকিৎসা ও রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়। মৃত সাগরের চারপাশের মরুভূমিতে অনেক দৃষ্টিনন্দন মরূদ্যান ও ঐতিহাসিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
৮। আগ্রার তাজমহল:
ভারতের আগ্রা নগরীতে যমুনা নদীর দক্ষিণ পাড়ে মার্বেল ও শ্বেতপাথরে নির্মিত সমাধি স্তম্ভ। ১৬৩২ সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয়তম স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকর্মটি নির্মাণ করেন। সেই যুগে প্রায় ৩.২ কোটি রুপি ব্যয়ে এই সুরম্য সমাধিস্থলটি নির্মাণ করতে ২০,০০০ শ্রমিক ১০ বছর ধরে লাগে। নির্মাণের পর থেকেই সারা বিশ্বের কবি, সাহিত্যিক আর পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে আগ্রার তাজমহল।
৭। গিজার গ্রেট পিরামিড:
রহস্যময় খুফুর পিরামিড বা গিজার গ্রেট পিরামিড মিশরের সবচেয়ে বড় আর প্রাচীন পিরামিড। প্রাচীনকালের সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে এটিই একমাত্র এখনো বহাল তবিয়তে টিকে আছে। প্রাচীন মিশরের গবেষকদের মতে খ্রিস্টপূর্ব ২৫৬০ সালে ফারাও খুফুর আমলে এটি নির্মিত হয়। এর উচ্চতা ৪৮১ ফুট, যা প্রায় ৩৮০০ বছর ধরে মনুষ্যনির্মিত সবচে উঁচু স্থাপনা হিসেবে বিদ্যমান ছিল। পিরামিডটি কোন প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়, তা আজো বিজ্ঞানীদের গবেষনার বিষয়।
৬। পিসার হেলানো মিনার:
ইতালির পিসার বিখ্যাত হেলানো মিনার মধ্যযুগের ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন। এটির উচ্চতা ৬০ মিটার এবং এটি মাটির সাথে ১০ ডিগ্রি কোণে হেলে আছে। এর নির্মাণকাজ ১১৭৩ সালে শুরু হয়ে তিন ধাপে ১৩৭২ সালে শেষ হয়। এই মিনারে ২৯৭টি সিঁড়ি রয়েছে। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এটি একটি আশ্চর্যজনক ও আকর্ষণীয় গন্তব্য।
৫। চীনের মহাপ্রাচীর:
এটি পৃথিবীর একমাত্র স্থাপনা যা চাঁদ থেকে দেখা যায়। খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকে উত্তরের মঙ্গল আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য চীনের সম্রাটরা এটি নির্মাণ শুরু করে। ২২০-২০৬ খ্রিস্টপূর্বে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দেয়ালগুলো নির্মাণ করা হয়। পূর্বে ডাংডং থকে শুরু করে পশ্চিমে লপ লেক পর্যন্ত ৮৮৫০ কিমি. দিরঘ এ দেয়ালটির বিস্তৃতি।
৪। লাস ভেগাস:
লাস ভেগাস তার ক্যাসিনো, হোটেল আর রাতভর রঙিন জীবনযাপনের জাদুতে সারা বিশ্বের মানুষকে কাছে টানে। খোদ শহরটির কর্তৃপক্ষ একে ‘বিশ্বের বিনোদন রাজধানী’ বলে ডাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিনোদনে সয়লাব এ শহরকে কেউ কেউ ‘সিন সিটি’ বা ‘পাপের নগরী’ও বলে থাকে। যে যাই বলুক না কেন প্রত্যেক ভ্রমণপিপাসুর জীবনের স্বপ্ন লাস ভেগাসে একটি রাত কাটানো।
৩। আফ্রিকান সাফারি:
অনির্বচনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যময় প্রাণীজগত- আফ্রিকায় একবার সাফারি ট্যুরে গেলে তা আপনার জিবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জিরাফ, গণ্ডার কিংবা গরিলা- আফ্রিকায় যা আছে পৃথিবীর আর কোথাও তা নেই। আদিবাসীদের অকৃত্রিম জীবন দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির অকল্পনীয় সৌন্দর্যের ভিড়ে।
২। আইফেল টাওয়ার:
প্যারিসকে বলা হয় শিল্প-সাহিত্য আর সংস্কৃতির তীর্থস্থান। আর প্যারিসের কথা বললে যে স্থাপনাটির কথা সবার আগে ভেসে উঠে তা হল আইফেল টাওয়ার। ১৮৮৯ সালে বাণিজ্য মেলার স্মারক হিসেবে তৈরি হলেও এখন তা সমগ্র ফ্রান্সের ‘আইকন’-এ পরিণত হয়েছে। টাওয়ারটির উচ্চতা ১০৬৩ ফুট যা ৮১ তলা ভবনের সমান। ৪১ বছর ধরে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা গৌরব ধরে রেখেছিল। এখানে রেস্টুরেন্ট আছে, লিফটের মাধ্যমে আপনি উপরে উঠতে পারবেন। ৯০৬ ফুট উঁচুতে আছে পর্যটকদের জন্য ওয়াচ টাওয়ার।
১।নর্দার্ন লাইটস:
নর্দার্ন লাইটস হল উত্তর মেরুর আকাশে গ্যাসীয় কণার সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন রঙবেরঙের আলোর খেলা। ‘রাতের রংধনু’ কিংবা ‘আলোর নাচন’ যা ই বলুন না কেন প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য স্বচক্ষে অবলোকন এক স্বর্গীয় তীব্র শীত, বিরূপ আবহাওয়া, প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে প্রতিবছর উচ্চাকাঙ্ক্ষী পর্যটকরা ঠিকই ভিড় জমাচ্ছে উত্তর মেরুতে। কানাডা, আলাস্কা, স্ক্যান্ডিনেভিয়া কিবা আইসল্যান্ডে স্থানীয়ভাবে ‘অরোরা’ নামে এই বিরল দৃশ্য দেখা যায়। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত কোন ক্যামেরায় এর প্রকৃত ছবি ধারণ করা সম্ভব নয়, তাই এটি দেখতে হলে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে উত্তর মেরুর কোন এক দেশে।
প্রতিক্ষণ/এডি/নাজমুল