ভয়ঙ্কর সুন্দর এ্যানাকোন্ডা
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপ এ্যানাকোন্ডা। এ্যানাকোন্ডা কয়েক ধরনের রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলো গ্রিন এ্যানাকোন্ডা। ভারি সাপ হিসেবেও গ্রিন এ্যানাকোন্ডাই বেশি পরিচিত। প্রায় ১৫০ থেকে ২২৭ কেজি ওজনের গ্রিন এ্যানাকোন্ডা লম্বায় ২৭ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
শীতল রক্তবিশিষ্ট এই প্রাণীটি রাতে শিকারে বের হয়। যদিও এটি মোটেও বিষধর নয়; তবে শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে হত্যা করার জন্য বিশেষ কুখ্যাতি আছে এ্যানাকোন্ডার।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বন আমাজন রেইনফরেস্ট। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, পেরু, কলাম্বিয়া, ইকুয়েডর, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, সুরিনাম, গায়ানা এবং ফ্রেঞ্চ গায়ানা- এই নয়টি দেশজুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি। সারাবিশ্বের প্রায় অর্ধেক অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে এই বন। আর এই বিশাল বনে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিচিত্র, ভয়ঙ্কর আর সুন্দর অসংখ্য প্রাণী। এদের মধ্যে এমন কিছু প্রাণী আছে, যাদের রয়েছে বেশকিছু বিশেষত্ব আছে যা কিনা তাদের করে তোলে আরও ভয়ঙ্কর সুন্দর। আমাজনের এমনই ভয়ঙ্কর সুন্দর প্রাণীটির নাম এ্যানাকোন্ডা।
ভয়ঙ্কর সুন্দর এ্যানাকোন্ডা
এ্যানাকোন্ডা! একটা ভয়ঙ্কর প্রজাতির সাপ, এই কথা বললে একে অপমানই করা হয়। এ্যানাকোন্ডা নামটা শুনলেই ভয়, আতঙ্ক, বিস্ময় মেশানো একটা বিচিত্র অনুভূতি জেগে ওঠে যে কারও মনে, আমাজনের অধিবাসীদের কাছে অবশ্য সেটা বিশুদ্ধ আতঙ্ক। এই একটা প্রাণীকে নিয়ে যত উপকথা আর ভয়ঙ্কর গুজব আছে, পৃথিবীর আর কোন প্রাণীই তার ধারে কাছেও যাবে না, এ্যানাকোন্ডা যেন এক অশরীরী কিংবদন্তি। নিঃশব্দ চলাচল, দৈর্ঘ্য, অস্বাভাবিক শক্তি আর হিংস্র স্বভাব নিয়ে এ্যানাকোন্ডা আমাজনের বাসিন্দাদের কাছে অশুভ এক প্রেতাত্মারই নামান্তর।
এ্যানাকোন্ডার শিকার ধরার পদ্ধতি অন্যান্য সাপের মতো নয়। এটি তার শিকারকে ছোবল দিয়ে মারে না, কারণ এদর বিষ নেই। যদিও ছোবল দেয়ার জন্য যথেষ্ট বড় বড় দাঁত রয়েছে। এটি তার শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে একেবারে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলে। এরপর আস্তে আস্তে পুরো শরীরটাই গিলে নেয়।
এ্যানাকোন্ডার মূলত চার প্রকারের প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। দেখতে ভয়ঙ্কর এই প্রজাতিগুলো হচ্ছে সবুজ এ্যানাকোন্ডা, হলুদ এ্যানাকোন্ডা, ডার্ক স্পটেড এ্যানাকোন্ডা এবং বলিভিয়ান এ্যানাকোন্ডা।
সবুজ এ্যানাকোন্ডা (এ্যানাকোন্ডা সাপের প্রধান প্রজাতি) হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপ। এটি সর্বোচ্চ ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এর ওজন হতে পারে ২২৭ কেজি পর্যন্ত। একটি পূর্ণবয়স্ক ভেড়া/ছাগল/শুকর খাওয়ার পর একটি এ্যানাকোন্ডা প্রায় এক মাস না খেয়ে থাকতে পারে। এর মাঝে কোন প্রকার খাবারের প্রয়োজন পড়ে না। যদি শিকার খুঁজে না পাওয়া যায় তবে একটি এ্যানাকোন্ডা বড় একটি শিকারের পর অন্যকিছু না খেয়েও ১ বছর কাটিয়ে দিতে পারে।
এ্যানাকোন্ডা পানির নিচে একটানা মিনিট দশেক পর্যন্ত দম না নিয়ে থাকতে পারে! এরপর অক্সিজেনের প্রয়োজনে একে পানির উপরিভাগে চলে এসে শ্বাস নেয়। মহিলা এ্যানাকোন্ডা পুরুষ এ্যানাকোন্ডার চেয়ে সাইজে বড় হয়। অন্যান্য সাপের সঙ্গে এ্যানাকোন্ডার আরও একটি অমিল রয়েছে। অন্যান্য সাপ যেখানে ডিম পাড়ে (পাইথন, কোবরা ইত্যাদি) সেখানে এই এ্যানাকোন্ডা সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়!
শুধু তাই নয়, এরা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিকার ধরা শুরু করে। একটা স্ত্রী এ্যানাকোন্ডা একসঙ্গে ২৫-৩০টি পর্যন্ত বাচ্চা সাপ প্রসব করতে পারে। একটি বাচ্চা এ্যানাকোন্ডা জন্মের সময়ই ২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে এবং সাঁতার কাটতে পারে।
সবচেয়ে বড় এ্যানাকোন্ডা
ব্রাজিলের ৩৩ বছর বয়সের এক মহিলা ফটোগ্রাফার দেখতে পেয়েছিলেন সবচেয়ে বড় এক এ্যানাকোন্ডা। ফটোগ্রাফারের নাম কারিনা ওলিয়ানি। তাঁর কাজই হলো ভয়ানক সব ছবি তোলা। কিন্তু কিছুতেই ক্যামেরায় ধরা দিচ্ছিল না সেই বড় অজগর বা এ্যানাকোন্ডা। চারদিন অপেক্ষার পর এ্যানাকোন্ডার খোঁজে জলে ঝাঁপ দিল কারিনা। কিছুক্ষণ জলের নিচে ঘোরাঘুরির পর সন্ধান পেল এ্যানাকোন্ডার ডেরার।
তারপর সেই ডেরা থেকে বেরিয়ে এলো মস্তবড় এক বড় অজগর। কারিনার আন্দাজ সেই এ্যানাকন্ডার ওজন ৪০০ কেজি। সেই বড় অজগরের পুরোটা দেখতে পায় নি এই মহিলা ফটোগ্রাফার। সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘সত্যি বলতে অনেকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল এই মনে হয় আমায় খেতে এলো।’
অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিশ মিনিট ধরে সেই এ্যানাকোন্ডার ছবি তোলে সে। দাবি করা হচ্ছে, জলের নিচে ক্যামেরায় ধরা পড়া এটাই নাকি ‘সবচেয়ে বড়’ এ্যানাকোন্ডা।
প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি