মদীনায় হিজরতের পথে

প্রকাশঃ মার্চ ২৪, ২০১৫ সময়ঃ ১:১০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:১০ অপরাহ্ণ

ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

madinaবারা ইবনু আযেব (রা:) তাঁর পিতা হ’তে বর্ণনা করেন যে, একদা আযেব (রা:) আবূ বকর (রা:)-কে বললেন, হে আবূ বকর! যে রাতে আপনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে (হিজরতের উদ্দেশ্যে) সফর করেছিলেন, সে রাতে আপনারা কি করেছিলেন আমাকে অবহিত করুন।

আবূ বকর (রা:) বললেন, আমরা একদিন এক রাত পথ চলার পর যখন দ্বিপ্রহর হ’ল এবং পথ-ঘাট এমন শূন্য হ’ল যে, কাউকেও চোখে পড়ছিল না। এমন সময় একটি লম্বা পাথর আমাদের নযরে আসল। তার পাশে যথেষ্ট ছায়া ছিল। সেখানে রোদ পড়ত না।

আমরা সেখানে অবতরণ করলাম এবং আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য কিছু জায়গা সমান করলাম, যাতে তিনি শয়ন করতে পারেন।

এরপর একটি চাদর বিছিয়ে দিয়ে তাঁকে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি ঘুমান। আমি আপনাকে পাহারা দিচ্ছি ও সবদিক খেয়াল রাখছি। তিনি ঘুমিয়ে পড়লে আমি বের হয়ে চতুর্দিক থেকে তাকে পাহারা দিতে থাকলাম। তাঁকে পাহারা দেওয়ার সময় হঠাৎ দেখি একজন মেষচারক আমাদের ন্যায় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য পাথরটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বকরীগুলিতে দুধ আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তুমি কি তা (আমাদের জন্য) দোহন করবে? সে বলল, হ্যাঁ। অতঃপর সে একটি বকরী ধরে এনে একটি পাত্রে সামান্য দুধ দোহন করল। আমার নিকট একটি পাত্র ছিল, যা আমি রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর জন্য এনেছিলাম, যেন তা দিয়ে তিনি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করতে এবং ওযূ করতে পারেন। অতঃপর আমি দুধ নিয়ে রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর নিকটে এসে তাঁকে ঘুম থেকে জাগানো ভাল মনে করলাম না।

কিছুক্ষণ পরে তাঁকে জাগ্রত অবস্থায় পেলাম। তখন দুধ ঠান্ডা করার জন্য তাতে পানি মিশালাম, ফলে দুধের নিম্নভাগ পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেল। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! পান করুন। তিনি পান করলেন। এতে আমি খুব সন্তুষ্ট হলাম।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাদের রওনা হওয়ার সময় হয়েছে কি ? আমি বললাম, ‘হ্যাঁ। আবূ বকর (রা:) বলেন, সূর্য ঢলে যাওয়ার পর আমরা রওনা হলাম। এদিকে সুরাকা ইবনু মালেক আমাদের অনুসরণ করছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! আমাদের নিকটে শত্রু এসে পড়েছে। তিনি বললেন,চিন্তা কর না, আল্লাহ্‌ আমাদের সঙ্গে আছেন’ (তওবা ৪০)।

এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সুরাকার জন্য বদদোয়া করলেন, ফলে তার ঘোড়াটি তাকে নিয়ে শক্ত মাটিতে পেট পর্যন্ত দেবে গেল। তখন সুরাকা বলল, ‘আমার বিশ্বাস তোমরা আমার জন্য বদদোআ করেছ। তোমরা আল্লাহ্‌র নিকট আমার জন্য দোআ কর, আল্লাহ্‌ তোমাদের সাহায্যকারী হবেন। আমি তোমাদের নিকট অঙ্গীকার করছি যে, তোমাদের অন্বেষণকারীদেরকে (শত্রুদের) আমি ফিরিয়ে দিব। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার জন্য দোআ করলে সে মুক্তি পায়। অতঃপর যার সাথেই সুরাকার দেখা হয়েছে, তাকেই সে বলেছে, ‘আমি তোমাদের কাজ সেরে এসেছি। এদিকে তারা কেউ নেই। এমনিভাবে যার সাথেই তার সাক্ষাৎ হত, তাকেই সে ফিরিয়ে দিত ।
[ বুখারী হা/৩৬১৫, মুসলিম হা/২০০৯, মিশকাত হা/৫৮৬৯ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’অধ্যায়; ‘মুজিযা’অনুচেছদ ]
শিক্ষা:

১. সর্বক্ষেত্রে যথাযথভাবে নেতার আনুগত্য করা। প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত থাকা।

২. বিশেষ ক্ষেত্রে মহৎ ব্যক্তিগণকে ঘুম থেকে না ডাকা বিচক্ষণতার পরিচয়।

৩. যে কোন বিপদে একমাত্র মহান আল্লাহ্‌র প্রতি অবিচল আস্থা রাখা।

৪. আল্লাহ্‌ তাআলা শত্রু বা যালেমদেরকে অনেক সময় প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে থাকেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G