মন ভরিয়ে দেয় হামহাম ঝর্ণা

প্রকাশঃ মার্চ ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪৬ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

hamham4কাঁচের মত স্বচ্ছ পানি পাহাড়ের শরীর বেঁয়ে আছড়ে পড়ছে বড় বড় পাথরের গায়ে, গুড়ি গুড়ি জলকনা আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি করছে কুয়াশার আভা। বুনো পাহাড়ের দেড়শ ফুট উপর হতে গড়িয়ে পড়া স্রোতধারা কলকল শব্দ করে এগিয়ে যাচ্ছে পাথরের পর পাথর কেটে সামনের দিকে তার গন্তব্যে। চারিপাশ গাছ গাছালি আর নাম না জানা হাজারো প্রজাতীর লাত পাতা ও লতা গুল্মে আচ্ছাদিত হয়ে আছে পাহাড়ী শরীর।

স্রোতধারা সে লতাগুল্মকে ভেদ করে গড়িয়ে পড়ছে ভুমিতে। তৈরি করছে স্রোতস্বিনী জলধারা। সে যে কি এক বুনোপরিবেশ না দেখলে বিশ্বাস করানো সম্ভব নয়। শ্রাবনের প্রবল বর্ষনে যখন পুরো জঙ্গল ফিরে পায় তার চিরসবুজ, হয়ে উঠে সতেজ আর নবেযৌবনা। হামহাম ঝর্না তখন ফিরে পায় তার আদিরূপ। অপরুপ সৌন্দর্য। ঝর্নার সতেজতায় পাহাড়ী ঝিরিগুলো হয়ে উঠে কর্মচঞ্চল। সাঁই সাঁই করে ধেয়ে চলে ঝিরির জলরাশি। স্বচ্ছ জলস্রোত যখন পা গলিয়ে চলে যায় নদীর দিকে সে জলের কোমল পরশে শরীর জুড়িয়ে যায় মূহুর্তেই।

বলছি হামহাম ঝর্ণার কথা। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিটের গহিন অরণ্যঘেরা দুর্গম পাহাড়ী এলাকার রযেছে অপূর্ব এই জলপ্রপাত। স্থানীয় বাসিন্দারা একে হামহাম ঝর্ণা বা অনেকে হাম্মাম ঝর্ণা বলে ডাকে। এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটক যারা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন কেবল তাদের জন্যই এই ঝর্ণা দর্শন। কেবল দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা নয় পথের দুপাশের বুনো গাছের সজ্জা দৃষ্টি কেড়ে নেবে অনায়েসে। জারুল, চিকরাশি ও কদম গাছের ফাঁকে ফাঁকে রঙিন ডানা মেলে দেয় হাজারো প্রজাপতি।

humhum-2চারদিকে গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক বাঁশবনে ভরপুর এ বনাঞ্চল। ডলু, মুলি, মিটিংগা, কালি ইত্যাদি অদ্ভুত নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ এ বাগানগুলোকে দিয়েছে ভিন্ন একরূপ।

পাথুরে পাহাড়ের ঝিরি পথে হেঁটে যেতে যেতে সুমধুর পাখির কলরব আপনার মনকে ভাললাগার অনুভূতিতে ভরিয়ে দেবে। দূর থেকে কানে ভেসে আসবে বিপন্ন বনমানুষের ডাক।

কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর শুরুতে আপনার দু’চোখের সামনে ভেসে উঠবে পাহাড় থেকে ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা ভেসে উঠার অপূর্ব দৃশ্য। মনে হবে যেন ওই নয়নাভিরাম পাহাড় আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এভাবেই হাটতে হাটতে একসময় আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার কাঙ্খিত হামহাম জলপ্রপাতের খুব কাছাকাছি। কিছু দূর এগুলেই শুনতে পাবেন হামহাম জলপ্রপাতের শব্দ। কাছে গিয়ে দেখতে পাবেন প্রায় ১৩০ ফিট ওপর হতে আসা জলপ্রপাতের সেই অপূর্ব দৃশ্য । প্রবল ধারায় উপর হতে গড়িয়ে পরছে ঝর্ণার পানি নিচে থাকা পাথরের উপর। পাথরের আঘাতে জলকনা বাতাসে মিলিয়ে গিয়ে তৈরি করছে কুয়াশা।

চারিদিকে এক শীতল শান্ত পরিবেশ। ডানে বামে চোখ ফেরানোর উপায় নেই। কেবলই ইচ্ছে করবে তাকিয়ে থাকি সৃষ্টিকর্তার এই অনন্য সৃষ্টির জন্য। জঙ্গলে উল্লুক, বানর আর হাজার পাখির ডাকাডাকির সাথে ঝর্ণার ঝড়ে পড়ার শব্দ মিলে মিশে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ। ক্ষণিকের জন্য ভূলেই যেতে হবে কোথায় আছি, কিভাবে আছি। উপরে আকাশ, চারিদিকে বন, পায়ের নিচে ঝিরির স্বচ্ছ জল আর সম্মুখে অপরূপ ঝর্ণা। নিজেকে না হারিয়ে আর কি কোন উপায় আছে?

যেভাবে যেতে হবে
প্রথমেই আপনাকে যেকোন স্থান হতে গিয়ে পৌছতে হবে সিলেট, শ্রেীমঙ্গল কিংবা সরাসরি মৌলভীবাজার। সেখান হতে কমলগঞ্জ। ট্রেনে করে আপনি যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল। সেখান থেকে জিপ রিজার্ভ করে কলাবনপাড়া। মৌলভীবাজার হয়ে যেতে চাইলে প্রথমেই যেতে হবে কমলগঞ্জ। এটি মৌলভীবাজারের একটি উপজেলা। যাই হোক যোকোন ভাবেই আপনি পৌছে যেতে পারেন কমলগঞ্জ।

কমলগঞ্জ হতে আদমপুর বাজার পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে ১০ টাকা। সেখান থেকে ২০০ থেকে ২৫০টাকা ভাড়ায় সিএনজি যোগে আপনি অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারেন আদিবাসী বস্তি তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবন বস্তি পর্যন্ত । সেখান থেকে আরও প্রায় ৮ কিঃমিঃ পথ পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে কাংখিত সেই হামহাম জলপ্রপাতের।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G