মাগুরায় আলো ছড়াচ্ছে ‘তুষ্টলাল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’

প্রকাশঃ জানুয়ারি ৩, ২০২০ সময়ঃ ৫:১২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:১৪ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রাম কুচিয়ামোড়াতে ২০১২ সালে গড়ে উঠে ঐ অঞ্চলের প্রথম প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্কুল ‘কুচিয়ামোড়া তুষ্টলাল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’।

প্রথমে ৫২ জন প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিদ্যালয়টি চালু হলেও বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৩৩ জন। জীবনযাত্রার মান ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই অঞ্চলে জেলার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের সংখ্যা একটু বেশি। মোট হিসাব করে দেখা যায় এই ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের সংখ্যা ৭০০ জন। কুচিয়ামোড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী বিষ্ণুপদ রায় নিজের প্রতিবন্ধী বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রথমে ১০ শতক জায়গার উপর এই বিদ্যালয়টি নির্মাণ করেন। পরে তিনি আরো ১৫ শতক জায়গা এই বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে এই বিদ্যালয়টি দেখাশোনা করছেন।

শ্রী বিষ্ণুপদ রায় বলেন “বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে, যেহেতু প্রতিবন্ধীরাও এদেশেরই নাগরিক তাই তাদের মৌলিক অধিকার গুলো নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব”।

এক ঝাঁক শিক্ষিত তরুণ দায়িত্বশীল শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই বিদ্যালয়টির শিক্ষা দেওয়ার ভার গ্রহণ করেছেন, সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ও বিনা পারিশ্রমিকে বছরের পর বছর এই প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়মিত পাঠদান করে যাচ্ছেন। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ১৭ জন শিক্ষক ও ০৮ অন্যান্য কর্মচারী রয়েছে। শিক্ষার মান ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অভিভাবকরা বেশ সন্তুষ্ট।

প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকরা বলেন “আগে বাচ্চাদের নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হতো, এই বাচ্চাদের কিভাবে পড়াশোনা করাতে হয় তা আমরা জানি না, কিন্তু এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে সে অনেক কিছু শিখতে পারছে”।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার সরকার বলেন “এই স্কুলটি এ অঞ্চলের প্রতিবন্ধীদের একমাত্র বাতিঘর, আমরা বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের পাঠদান করে যাচ্ছি। যেহেতু বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছেন ও স্কুলগুলোকে সরকারীকরণে কাজ করে যাচ্ছেন তাই আমরা আশা করি এই স্কুলটির দিকেও সরকার বিশেষ নজর দিবেন”।

নিতাই মজুমদার (৩২) নামের এক প্রতিবন্ধী এই স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানে এই গ্রামেই মুদিখানার দোকান করেছেন ও নিজে স্বাবলম্বী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, নিতাই প্রমাণ করেছেন প্রতিবন্ধীরা একটু সুযোগ পেলে তারা আর সমাজে বোঝা হয়ে থাকবে না। নিতাই মজুমদারের মত আরো আলো এই সমাজে ছড়িয়ে পড়ুক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অপুষ্ট ও অল্প ওজনে জন্ম নেওয়া শিশুরা অধিকাংশ প্রতিবন্ধীর শিকার হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ প্রতিবন্ধী, ইউনিসেফ ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব মতে দেশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ছড়াও দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রয়েছে।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G