মাদকাসক্তিঃ পরিবারেই হোক প্রতিরোধ
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
২৬ জুন, রবিবার জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী দিবস। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণী দিয়েছেন। তিনি তার বাণীতে বলেছেন, মাদকাশক্তি একটি বহুমাত্রিক একটি সামাজিক সমস্যা। তিনি বলেন, সমাজের অর্থলোভী ও অবিবেচক মানুষের সৃষ্ট এই সমস্যা পরিবার এবং সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলাকে চরমভাবে বিঘ্নিত করে। বিশেষ করে তরুণদের একটি অংশের মধ্যে মাদকাশক্তির প্রবণতা লক্ষ্যণীয়।
মাদকের প্রতি নির্ভরতা যে কোন বয়সেই আসতে পারলেই মাদকাসক্তির ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকে কিশোর-তরুনরা। পরিবারের এই কনিষ্ঠ সদস্যদের মাদক থেকে দূরে রাখা কিন্তু খুব কঠিন কাজ নয়। পিতা-মাতা ও পরিবারের বড়রা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মাধ্যমেই তা করতে পারেন।
একজন মানুষের সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা, সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল তার পরিবার। তাই পরিবারের কোন কিশোর-তরুণ কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যাতে মাদকের বিষাক্ত ছোবলের শিকার না হয়, সে বিষয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা পরিবারই রাখতে পারে।
এবারের আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী দিবসের থিম বা মূল ভাবনা হচ্ছে “লিসেন ফার্স্ট”। অর্থ্যাৎ বলা হচ্ছে যে, পরিবারের শিশু ও যুবকদের কথা শোনাটাই তাদের স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বেড়ে ওঠার পথে প্রথম পদক্ষেপ।
সন্তানদের মাদক থেকে দূরে রাখতে হলে বাবা-মা ও পরিবারের বড়দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই ধৈর্য ধরে সন্তানদের সব কথা শোনার জন্য অভিভাবকরা নিজেদের প্রস্তুত করবেন। সন্তানদের মঙ্গলের জন্য পরিবারের সদস্যরা যথেষ্ট সময় দেবেন। সন্তানদের সামাজিক, মানসিক, লেখাপড়া সংক্রান্ত অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো যথাসম্ভব মেটাতে হবে, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিয়ে তাদের প্রত্যাশা বাড়তে দেয়া যাবে না। পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, প্রায়ই তারা সবাই মিলে আনন্দদায়ক কিছু কার্যকলাপের পরিকল্পনা করবেন এবং পরিবারের সবাই মিলে সুন্দর সময় কাটাবেন। এছাড়া ‘গুড প্যারেন্টিং’ বিষয়ে জ্ঞান নিতে হবে বাবা-মাকে।
পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে ধূমপানমুক্ত। যদি বাবা বা পরিবারের অন্য কোন সদস্যকে ছোটরা ধূমপান করতে দেখে তবে তাদের সিগারেট বা অন্যান্য মাদকের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হতে পারে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকসেবীদের একটি বড় অংশ কৌতূহলে থেকেই মাদক গ্রহণের দিকে ঝুঁকে থাকে।
বলে দাতব্য সংস্থা আহসানিয়া মিশন একটি জরিপ থেকে জানাচ্ছে, প্রায় ৪২ শতাংশ মাদকসেবী প্রথমে নিজ আগ্রহেই মাদক গ্রহণ করে।
মাদকাসক্তদের চিকিৎসা কেন্দ্র মুক্তির ড. আলী আসকর কুরায়েশি বলছেন, “কিশোর বয়সে বা শৈশবে নতুন কিছু নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাওয়ার মধ্যে দিয়ে অনেক সময় এর শুরু।” তিনি আরো বলেন, “যেহেতু মাদক দ্রব্য একটি নিষিদ্ধ দ্রব্য। আর নিষিদ্ধ দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ কিশোর বয়সে একটু বেশি থাকে।”
তাই কোনভাবেই বাড়িতে এমন পরিবেশ রাখা যাবে না যাতে সন্তান মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। বরং মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে পরিবারের ছোটদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। পরিবারের সব সদস্যই ড্রাগের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবেন।সন্তানদের কার্যকলাপ এবং সঙ্গীদের ব্যাপারে খবর রাখতে হবে। সন্তানরা যেসব জায়গায় সবসময় যাওয়া-আসা করে সে জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যাতে করে তারাই নিজে থেকে তাদের বন্ধু-বান্ধব ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করে।
অত্যধিক শাসন এবং অত্যধিক স্বাধীনতা দুটোই আপনার সন্তানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই এ দুয়ের মাঝে খুব সাবধানতার সাথে সমন্বয় রক্ষা করে চলতে হবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এই দিবসকে সামনে রেখে তাঁর বাণীতে বলেছেন, “আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী দিবসের এই দিনে আমি দেশ ও গোষ্ঠীগুলোকে অনুরোধ করছি, যাদের জীবন মাদকের অপব্যবহারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বাস্থ্য, মানবাধিকার এবং টেকসই উন্নয়নের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপের মাধ্যমে জনগনের নিরাপত্তা দৃঢ়ীকরণের দ্বারা তাদের জীবনমান উন্নীত করতে কাজ করে যাওয়ার জন্য।”
এ উক্তি থেকেই বোঝা যায়, সমগ্র বিশ্বের মাদকের সমস্যা কী ভয়াবহ আকার নিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। এ ভয়ংকর সমস্যার সমাধানের সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে নিজের ঘর মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু করা।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া