মানুষের ভালো, মন্দ হওয়ার কারণ

প্রকাশঃ জুন ২৬, ২০১৬ সময়ঃ ২:৪১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৫০ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

maxresdefault (1)

 

কিছু মানুষ উদার, সহযোগিতাপরায়ণ, দয়ালু অর্থ্যাৎ ভালো হয় কেন আর কিছু মানুষ ঈর্ষাকাতর, কঠোর হৃদয়, মায়াহীন অর্থ্যাৎ খারাপ হয় কেন তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আসছেন। সম্প্রতি পাওয়া গেছে এর উত্তর।

আমাদের আশেপাশের অনেককেই মনে হয় তারা যেন অন্যদের সহযোগিতা করার জন্য জিনগতভাবেই বুঝি প্রোগ্রাম করা। এমনকি অন্যরা তাদের এই উদারতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে বিভিন্নভাবে শোষণ করা সত্ত্বেও তারা পরোপকার থেকে বিরত হন না। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন একদল গবেষক। ঐ গবেষক দল জেনেটিক পলিমরফিজম বা জিনগত বহুরুপতার ধারণাটি বুঝার জন্য সামাজিক বিবর্তনের একটি অভিনব মডেল উদ্ভাবন করেছেন।

মানুষের আচরণ সাধারণত খুবই নমনীয় হয়ে থাকে। আর চারপাশের দুনিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াজাতকরনের পর মানুষেরা যা দেখে তার উপর ভিত্তি করেই তাদের উপলব্ধি তৈরি হয়।

তবে, অনেক প্রজাতিই উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত জিনগত নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করেই কী করতে হবে সে সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আর এ ধরনের প্রজাতির প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন সদস্যও তারা যে ধরনের জিনগত বৈশিষ্ট নিয়ে জন্মায় সে অনুযায়ীই আচরণ করে থাকে। এমনটাই মত দিয়েছেন গবেষক শাসা ডাল। তিনি ব্রিটেনের এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রভাষক।

গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মাঝে সাধারণত চারপাশের পরিবেশ পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার প্রবণতাই বেশি দেখা যায়, অনুভূতি বা অভিজ্ঞতার দ্বারা নয়।

এমনকি স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের আচরণ অনেক সময় উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত তাদের জিনগত বৈশিষ্টের বিশেষ প্রবণতার দ্বারাও নির্ধারিত হয়। এই প্রবণতা তাদের সামাজিক সম্পর্ককেও নির্নীত করে। এমনকি কোনো ব্যক্তির জিনগত বৈশিষ্ট সে তার সম্প্রদায়ের বা চারপাশের কোন সদস্যের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত মনে করবে তাও পূর্ব থেকেই নির্ধারিত করে দেয়। এক্ষেত্রে তাদের অনুভূতি বা অভিজ্ঞতাও কোনো কাজে আসে না।

পিএলওএস কম্পিউটেশনাল বায়োলজি জার্নালে ওই গবষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। গবেষণাটির মূল লক্ষ্য ছিল বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ভালো হয়ে ওঠার জন্য কোনো কোনো ব্যক্তি জিনগতভাবেই প্রোগ্রাম করা থাকে কেন আবার কেউ কেউ খারাপই রয়ে যায় কেন তা উদঘাটন করা।

স্বজন নির্বাচন তত্ত্ব আত্মীয়-স্বজনের মাঝে সহযোগিতার বিবর্তনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে। এই তত্ত্বটি ব্যবহার করা যায় তখন যখন কোনো বিশেষ সামাজিক গোষ্ঠীতে ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গ, বয়স ও পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে জিনগত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বিবর্তিত গুনাবলী সম্পন্ন মানুষের সমাহার ঘটে। কিন্তু সহযোগিতামূলক আচরণের ক্ষেত্রে যখন জিনগত বহুরুপতার বিষয়টি কাজ করে তখন আর এই তত্ত্ব কাজে লাগে না।

নেতৃস্থানীয় গবেষক স্টকহোম বিশ্বিবদ্যালয়ের অধ্যাপক ওলোফ লেইমার বলেন, ‘সামাজিক বিবর্তন তত্ত্ব এর আগে জিনগত বহুরুপতার ধারণা নিয়ে কোনো কাজ করেনি। আমরা এমন একটি মডেলের উন্নয়ন ঘটিয়েছি যার মাধ্যমে অন্যান্য আচরণগত প্রভাবকের পাশাপাশি একটি সাধারণ ফ্রেমওয়ার্ক বা গঠনকাঠামোর মধ্যেই আমরা বিষয়টি উদঘাটন করতে পারব’।

গবেষণায় একটি গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজাতির সামাজিক আচরণও পরীক্ষা করে দেখা হয়। সামাজিকতার বিবর্তন বোঝার জন্যই পরীক্ষাটি চালানো হয়।

গবেষক শাসা ডাল বলেন, ‘গবেষণায় আমরা দেখাতে সক্ষম হয়েছি কী করে কেউ এমন পরিস্থিতি পায় যেখানে সে স্বতন্ত্র মাত্রায় জিনগতভাবে নির্ধারিত ভালোমানুষি অর্জন করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সহাবস্থান করে’।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G