মৃত্যুদন্ডের নানা পদ্ধতি
কোন অপরাধের বিচারিক সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৯৮টি দেশ দন্ড হিসেবে মৃত্যুদন্ড বাতিল করেছে। আর মৃত্যুদণ্ড থাকলেও তার প্রয়োগ নেই এমন দেশের সংখ্যা ৪২টি। তাই বিশ্বের ১৪০টি দেশে এখন আর মৃত্যুদন্ড নেই।
অপরাধীর সাজা মৃত্যুদন্ড একই মনে হলেও তা কার্যকরের পদ্ধতি একরকম নয়। দেশে দেশে প্রধানত নয়টি উপায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর মধ্যে দড়িতে ঝুলিয়ে ফাঁসি, লেথাল ইনজেকশন, ফায়ারিং স্কোয়াড, ফায়ারিং, শিরশ্ছেদ, বৈদ্যুতিক চেয়ার, গ্যাস চেম্বার,পাথর ছোঁড়া, উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দেয়া।
বন্দুকের গুলি:
ইন্দোনেশিয়া, চীন, সৌদি আরব, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে তাকে বসিয়ে বা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়৷ এরপর সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য একের পর এক গুলি করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে৷
ইনজেকশন:
অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য সোডিয়াম পেন্টোনাল, সম্পূর্ণ অক্ষম করার জন্য প্যানকিউরোনিয়াম ব্রোমাইড আর হৃদযন্ত্র থামিয়ে দেয়ার জন্য পটাশিয়াম ক্লোরাইড নামের তিনটি রাসায়নিক উপাদান ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়ে অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভিয়েতনামে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়৷
বৈদ্যুতিক চেয়ার:
এতে শক্ত কাঠের চেয়ার ব্যবহার করা হয় যাতে বিশেষ পদ্ধতিতে ইলেকট্রিক লাইন দেয়া থাকে। দন্ডিতকে সে চেয়ারে বসিয়ে হাত পা বুক ফিতা দিয়ে বাঁধা হয়। তার মাথায় মেটালিক হেলমেট পরানো হয়। ১০০০ থেকে ২৩০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়। প্রতিবার ৩০ সেকেন্ড করে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কয়েকবার এভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়৷ এই পদ্ধতিটা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত৷
ফায়ারিং স্কোয়াড :
একটি ঘরের মধ্যে হাত পা মুখ বাঁধা অবস্থায় একটি চেয়ারে বসানো হয়। ২০ ফুট দূরে একটা দেয়াল থাকে যাতে ফাঁকা জায়গা করা থাকে। পরপর পাঁচ বার গুলি করা হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পুরনো পদ্ধতি। পাঁচটি রাইফেলের চারটিতে তাজা গুলি একটিতে ফাঁকা গুলি থাকে। অর্থাৎ নিহত ব্যক্তি চারটি গুলির আঘাতে মারা যায়। অন্যদিকে পাঁচজন শুটারের মাঝে একজন শুটার তার হত্যাকারী নয়। কে হত্যাকারী নন তা নির্ণয় করাও সম্ভব নয়। ফলে সবাই দাবী করতে পারে নিহত ব্যক্তি অন্তত তার গুলিতে মারা যায়নি।
গ্যাস চেম্বার:
আবদ্ধ ঘরের মতো যাতে একটি চেয়ার ও একটি সিলিন্ডার থাকে। সিলিন্ডারে সায়ানাইডের বড়ি থাকে এবং নীচে একটি পাত্রে সালফিউরিক এসিড থাকে। চেয়ারে বসিয়ে দন্ডিতের হাত পা বেঁধে দেয়া হয়। এবার বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে তিনটি বিস্ফোরন ঘটানো হয়। এতে সিলিন্ডারের সায়ানাইড, সালফিউরিক এসিডে পড়ে। মুহুর্তেই বিষাক্ত গ্যাস তৈরী হয়, যা মানুষকে কিছুক্ষনের মধ্যে অচেতন করে ফেলে, এতে খিঁচুনি শুরু হয় এবং মৃত্যু ঘটে। আসামীর মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর সেই চেম্বার বিষাক্ত গ্যাস মুক্ত করা হয়। ৩০ মিনিট পর সেই চেম্বার খুলে মৃত দেহ বের করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, মিসৌরী ও আ্যারিজোনায় এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
দড়িতে ঝুলিয়ে ফাঁসি:
বাংলাদেশ,আফগানিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, জাপান, মালয়েশিয়া ও কুয়েতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রচলন রয়েছে৷
শিরশ্ছেদ:
কয়েক হাজার বছর ধরেই শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে৷ তবে বর্তমানে শুধু সৌদি আরবে এই পদ্ধতিটি চালু আছে৷ সাধারণত শুক্রবার জুমআ’র নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গনে ধারাল অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হয়। এই পদ্ধতিতে একবারে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়।
পাথর ছুঁড়ে মারা:
মাটিতে পুঁতে বা কোন কিছুর সঙ্গে বেঁধে পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরেরও প্রচলন আছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরানে এই পদ্ধতি আংশিকভাবে চালু রয়েছে।
অন্যান্য উপায়:
অনেক উঁচু থেকে অভিযুক্তকে নিচে ফেলে দেয়ার মাধ্যমেও কোথাও কোথাও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ইরানে এই পদ্ধতির কথা শোনা যায়। আবার সুদানে কাউকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে অভিযুক্তকেও একই ভাবে হত্যা করা হয়।
প্রতিক্ষণ/এডি/নুর/বাদল