যা ভাবছেন তা ঠিক আছে তো?
শারমিন আকতার:
আমরা কত কী ভাবি? তার সব কি ভাবার সময় অন্যদেরও হয়েছে কিনা তা নিয়ে আর ভাবি না। এ নিয়েই আমার এবারের মনোজগতের লেখা, ‘যা ভাবছেন তা ঠিক আছে তো’? নিজে পড়ুন আর ভুলগুলো সংশোধন করুন। আর সময় হলে আপনার মতো করে কনিষ্ঠজনেরাও ভাবতে শুরু করবে। একটু তো ধৈর্য ধরতে হবে সে সময়টার জন্য। আপনার সময় আর তাদের সময় কি এক হবে?
সঠিক কাজ সঠিক সময়ের উপর নির্ভর করে। আপনি আজকে যা নিয়ে ভাবছেন, গতকালও তা আপনার ভাবনার মধ্যে ছিল না। এটাই স্বাভাবিক। ঠিক তেমনি আপনার আশপাশের ছোট-বড়-সমবয়সী সবার কাছ থেকে একই উপলব্ধি আশা করবেন না। কারণ তাদের ক্ষেত্রে যথোপোযুক্ত সময় এখনও হয়নি। কিন্তু তাই বলে আপনি ঠিক আর বাদবাকিরা ভুল তা একেবারেই ভাবতে যাবেন না। নিজের ছেলেবেলাকার কথা স্মরণ করুন। আর তার সাথে পরিবারের ছোট সদস্যকে মিলিয়ে দেখুন। দেখবেন আপনিতো এমনই ছিলেন। আর এখন?
আপনি যখন যা করবেন শুধু তা সঠিক আর বাকি সব বেঠিক এবং সবাইকে সেটাই করা উচিত যা আপনি করছেন; এমন মানসিকতা খুব দু:খজনক। হতে পারে আপনি যা ভাবছেন কিংবা বলছেন অথবা অন্যকে বোঝাতে চাইছেন তা সঠিক। কিন্তু তারপরও অনেকগুলো কথা থেকে যায়। সময়-পরিস্থিতি-পরিবেশ আজ যেখানে দাঁড় করিয়েছে আপনাকে; অন্য অনেককে সে জায়গায়, সে সময়ে কিংবা সে পরিস্থিতিতে এখনও দাঁড়াতেই হয়নি। তাহলে সে বা তারা কী করে বুঝবে আপনার কথা; যা বুঝাতে চায়ছেন? এমন এক সময়তো আপনিও অতিক্রম করে এসেছেন; তখন কি পেরেছিলেন আজকের মতো ভাবতে?
দ্বিতীয়ত, আপনি আজ যা বুঝতে পারছেন; গতকাল কি তা নিজেও বুঝেছিলেন? তখন যা ভাবেননি তা সঠিকও মনে করেননি। আজ ভাবছেন তাই সঠিকও মনে করছেন। এ কথা ভুলে যাবেন না যে, আগামীকাল নতুন আরও অনেককিছু ভাবতে পারেন; যা আজ টেরই পাচ্ছেন না।
তৃতীয়ত, আপনার আশপাশেরজনদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হচ্ছে। আপনার মতো তাদেরও প্রতিনিয়ত চিন্তার পরিবর্তন হচ্ছে; বয়স-সময় এবং পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে। তাদের ভাবনাগুলোকে এখনই ভুল বলা কিংবা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়াটা বুদ্ধিমানের পরিচয় বহন করবে না। তাদেরও সময় দিন। যথাসময়ে তারাও আপনার বয়স-অভিজ্ঞতা এবং সময়ের মুখোমুখি হবে। ততদিন একটু ধৈর্য ধরুন। যেভাবে অন্য কেউ আপনাকে দেখে এভাবেই অপেক্ষা করেছিল সঠিক সময়ের জন্য।
একটু উদাহরণ দিলে আশা করছি স্পষ্ট হয়ে উঠবে বিষয়টি। এমন একটা সময় হয়তো ছিল যখন আপনি খুব ফ্যাশনেবল তরুণ কিংবা তরুণী ছিলেন। আপনার সাজসজ্জা দেখে হয়তো পরিবারের বড়দের অপছন্দ হতো। খরচের পর খরচ করে যেতেন অন্য সদস্যদের কথা না ভেবেই। বেহিসেবী এই স্বভাবের জন্য হয়তো বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনেক কথা শুনতে হতো; যা আপনার একটুও ভালো লাগতো না।
কিন্তু আজ আপনি এসব থেকে পুরোপুরিই বেরিয়ে এসেছেন। হয়তো এখন আর ভালোই লাগে না নিজের জন্য কোনো কেনাকাটা করতে। হয়তো এখন আপনি জাগতিক ভাবনা থেকে সরে এসে মনোনিবেশ করছেন মহা জাগতিকের দিকে। এটাই সময়ের সত্যতা।
যৌবন যখন বার্ধক্যকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বারংবার; মনের অস্থিরতা কাটিয়ে এক স্থির ধ্রুব সত্যালোকের দিকে এগিয়ে চলার তাড়না অনুভবও করছেন ইদানিং বড় বেশি। সবকিছু তুচ্ছ মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যের চেয়ে। এটাইতো হবার কথা ছিল। আপনার আগে যারা আছেন তাদেরও এমনই উপলব্ধি হয়েছে। আর যারা পরের সারিতে আছেন; তারাও একসময় এভাবেই ভাববে। কারণ সময় তাদেরকেও আপনার মতো করেই ভাবতে বাধ্য করবে।
জীবনটা এমনই এক ঘূর্ণায়মান গোলাকার বৃত্ত; যেখানে সবাই শুধু ঘুরেছে, ঘুরছে এবং ঘুরবে। তাই এত ভাবনা কিসের। নিজেকে যত পারুন সত্য, সুন্দর ও অহিংস করে তুলুন। দেখবেন নতুনেরা আপনার মতো করে এমনিতেই ভাবতে শুরু করছে। শুধু নিজের বুদ্ধি আর বিবেককে সজাগ রাখুন। সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কাউকে প্রমাণ ছাড়া কখনও বিশ্বাস করবেন না। দেখবেন অহেতুক ভুল করা থেকে অনেকটাই দূরে থাকতে পারবেন। নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন, তাহলে অন্যকেও বুঝতে সহজ হবে।
======