যুবলীগ নেতা হত্যার ঘটনায় লংগদুতে অগ্নিসংযোগ, ১৪৪ ধারা

প্রকাশঃ জুন ২, ২০১৭ সময়ঃ ৩:৪০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৪০ অপরাহ্ণ

সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি

রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় যুবলীগের এক নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে লংগদুবাসির ব্যানারে আয়োজিত এক মিছিল থেকে পাহাাড়িদের অসংখ্য বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার পর লংগদু উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার লংগদু উপজেলা থেকে ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক ও স্থানীয় সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন দুইজন যাত্রী নিয়ে দীঘিনালার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু দুপুরের পর দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে সন্ধ্যায় ফেসবুকে তার মৃতদেহের ছবি দেখে সনাক্ত করে পরিবার ও বন্ধুরা।

শুক্রবার সকালে নয়নের লাশ লংগদুতে তার গ্রামের বাড়ি বাইট্টাপাড়া আনা হয়। সেখান থেকে লংগদু বাসির ব্যানারে কয়েক হাজার বাঙালির একটি বিশাল শোক মিছিল উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিলো জানাজার উদ্দেশ্যে। হঠাৎ একই উপজেলার ঝর্ণাটিলা এলাকায় মারফত আলী নামের এক বাঙালির বাড়িতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে এমন খবর পেয়ে এই মিছিল থেকেই প্রধান সড়কের পাশের লংগদু উপজেলা জনসংহতি সমিতির কার্যালয় সহ আশেপাশের পাহাড়িদের বাড়িঘরে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করা শুরু হয়। আগের দিন রাতেই স্থানীয় পাহাড়িরা সম্ভাব্য গোলযোগের শংকায় সড়ে পড়ায় কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও পাহাড়ি অধ্যুষিত তিনটিলা পাড়ার ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তারাও নিরূপায় হয়ে পড়েন।

পরে উপজেলা পরিষদ মাঠে নয়নের জানাজা ও শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাজ্জ্বল হোসেন, ভাইস

চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জানে আলম, পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি আলমগীর হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাাদক শফিকুল ইসলাম, সমঅধিকার নেতা এডভোকেট আবছার আলী। এখানে এসে বক্তব্য প্রদান কালে সেনাবাহিনীর লংগদু জোন কমান্ডার লে: কর্নেল আ: আলীম চৌধুরী ও লংগদু থানার অফিসার মোমিনুল ইসলাম, সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানান এবং নয়নের খুনিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।

তিনটিলা এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমা জানিয়েছেন, আমাদের পাড়ার একটি ঘরও অবশিষ্ট নেই। প্রায় দুইশতাধিক বাড়িঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এই হত্যার ঘটনার সাথে তো আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই, আমরা তো কিছুই জানি না, তবুও কেনো আমাদের বাড়ি ঘর আগুনে পোড়ানো হলো জানিনা। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ১৯৮৯ সালে একবার নিঃস্ব হয়েছিলাম আগুনে, আবার নিঃস্ব হলাম। তিনিসহ অসংখ্য মানুষ স্থানীয় বনবিহারে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

লংগদু উপজেলা সমঅধিকার আন্দোলনের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, আমরা লংগদুবাসির ব্যানারে সর্বদলীয়ভাবে নয়নের লাশ গোসল শেষে জানাজার জন্য উপজেলা সদরের মাঠের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ খবর আসে ঝর্ণাটিলায় একটি বাঙালী বাড়ীতে অগ্নিসংযোগের খবর আসায় মিছিলের উত্তেজিত লোকজন জনসংহতি সমিতির কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে, পরে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানিয়েছেন, আমি বিষয়টি জানার সাথে সাথেই লংগদু উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছি। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে এবং আইনশৃংখলাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় আছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে এই তিনটিলা এলাকায় তৎকালিন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরপর বিক্ষুদ্ধ বাঙালীরা এই পাড়ায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করেন এবং ওই এলাকার পাহাড়ীরা দীর্ঘদিন ভারতে উদ্বাস্তু হিসেবে ছিলেন এবং ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার পর দেশে ফেরত আসেন।

এদিকে যুবলীগ নেতা নয়নকে হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটি জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এবং পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ। দুপুরে শহরের বনরূপা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে বনরূপায় এসে সমাবেশ করে। জেলা যুবলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সম্পাদক নুর মোহাম্মদ কাজলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছাওয়াল উদ্দিন, পৌর যুবলীগের সভাপতি আবুল খায়ের, জেলা মৎসজীবি লীগের সভাপতি উদয়ন বড়–য়া, কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক উদয় শংকর চাকমা। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার জানানো হয়। দ্রুত নয়নের হত্যাকারিদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানানো হয়, অন্যথায় কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে বলে জানানো হয়।

একই ঘটনার প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ। শহরের কাঠালতলি থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বনরূপায় সমাবেশ করে। জেলা সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সভাপতি হাবিবুর রহমান, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের আহবায়ক নূরজাহান বেগম,তুহিন প্রমূখ। সমাবেশ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নয়নের খুনিদের গ্রেফতার করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

প্রতিক্ষণ/এডি/রন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G