যেভাবে প্রেসিডেন্ট হলেন ওবামা

প্রকাশঃ মে ২৬, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩১ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:

okeschool-c88454131833331ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল। একদিন এই স্কুলের শিক্ষিকা ইস ডারমাওয়ান তার ক্লাশে শিক্ষার্থীদের রচনা লিখতে দিলেন। রচনার বিষয় ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’।

সহজ রচনাটা তারা লিখলো, কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বৈমানিক হতে চায়। তবে একটা খাতা দেখে শিক্ষিকা ডারমাওয়ান একটু নয় বেশ খানিকটা অবাক হলেন, মজাও পেলেন। অবাক হবার মতোই। কারণ ব্যারি নামের কোঁকড়া চুলের ছোট্ট একটি ছেলে তার খাতায় লিখেছে- ‘আমি বড় হয়ে প্রেসিডেন্ট হতে চাই’।

তিন বছর পর। ১৯৭১ সালের কথা। সেই আজব ছেলেটি জাকার্তার একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি হলো। এবারও শ্রেণী শিক্ষিকা ফারমিনা ক্যাটারিনা সিনাগা ছাত্রছাত্রীদের একই বিষয়ে রচনা লিখতে দিলেন। সেই কোঁকড়াচুলো ছেলেটি এবারও লিখলো ‘আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই’। সেই ছেলেটিই আমাদের সবার পরিচিত আজকের বারাক ওবামা, আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট।

আর দশটা ছেলেদের চেয়ে একটু আলাদারকম ছিলো সে, চিন্তা-ভাবনাও অন্যরকম। সে ভাবতো, একদিন সে কোন এক দেশের প্রেসিডেন্ট হবে। ঠিক যেনো রূপকথার কোন গল্প। যদিও সে ঠিকমত জানতো না কোন দেশের।

স্কুল শেষ করে নানা-নানিকে ছেড়ে ব্যারি পাড়ি জমান আমেরিকার মূল ভূখণ্ড লস এঞ্জেলসে। সেখানে অক্সিডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। দুই বছর সেখানে পড়ার পর নিউ ইয়র্ক শহরের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলি হয়ে যান। এখানেই তার সাথে পরিচয় হয় মিশেল রবিনসনের সাথে। ১৯৮৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

১৯৮৮ সালে ব্যারি প্রথমবারের মতো ইউরোপ ভ্রমণ করেন। এছাড়া একই বছর তিনি তার পিতৃভূমি কেনিয়ায় যাত্রা করেন প্রথমবারের মতো। সেখানে তার অনেক আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হয়। কেনিয়া থেকে ফিরে এসে জীবনকে নতুন করে উপলদ্ধি করেন ব্যারি। নিজের জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে নতুন করে ভাবতে থাকেন।

ওই একই বছর হার্ভাড ল কলেজে ভর্তি হলেন। কলেজের বছর শেষে তার ঝুলিতে অনেকগুলো সফলতা দেখা গেল। আর তার পুরস্কার হিসেবে হার্ভাড ল রিভিউয়ের সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৯০ সালে সে ল’ রিভিউয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। ল রিভিউয়ের ১০৪ বছরের ইতিহাসে ওবামা প্রথম আফ্রো-আমেরিকান বংশোদ্ভুত তথা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট।

President_Barack_Obama১৯৯২ সালে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ স্কুলে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী একটানা বার বছর সেখানে আইন শিক্ষা দিতে থাকেন। এসব সাফল্যের মাঝে এক গভীর দুঃখ এসে কাঁদিয়ে যায় তাকে।

১৯৯৫ সালের একদিন ছেলের সর্বোচ্চ সাফল্য দেখে যাবার আগেই ক্যান্সারে মারা যান ওবামার মা। এর আগেই হারিয়েছিলো বাবাকে। কাছের মানুষগুলোকে এক এক করে হারাতে থাকেন তিনি। তবে একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েননি।

অনেক চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে ১৯৯৬ সালে ইলিনয়ের সিনেটর নির্বাচিত হন ওবামা। একইভাবে ১৯৯৮ এবং ২০০২ সালেও তিনি পূণর্বার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৪ সালে তার ঝুলিতে জমা হয় আরেকটি সাফল্য। সে বছর বোস্টনে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে এক বক্তৃতা দেন তিনি। সেসময় ওবামার শক্রপক্ষও ওবামার বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করার ক্ষমতাকে স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

এরপর ২০০৪ সালে আমেরিকার সিনেট নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওবামা ৭০% ভোট নিয়ে জিতে যান। এ জয়ের পেছনে তার ২০০৪ সালের বোস্টনের ভাষণের প্রভাব আছে বলে অনেকেই মনে করেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় তার বেষ্ট সেলার মর্যাদা পাওয়া বই ‘অডাসিটি অব হোপ’।

এরপর ২০০৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান ডেমোক্রেটিক দল থেকে। তারপর এলো ২০০৮ সালের ঐতিহাসিক ৪ নভেম্বর। সেদিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিপক্ষ রিপাবলিক দলের পদপার্র্থী জন ম্যাককেইনকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে বিজয়ী হন বারাক ওবামা। সেই সাথে তিনি হয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের মহানায়ক।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G