যেভাবে হত্যা করা হল নিলয়কে

প্রকাশঃ আগস্ট ৮, ২০১৫ সময়ঃ ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

Niloyরাজধানীর উত্তর গোড়ান এলাকায় শুক্রবার নিজ বাসায় ব্লগার নীলান্দ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয় (৪০) দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া সম্পর্কে স্ত্রী আশা মনি বলেন, প্রথমে আঘাত করে দাড়িওয়ালা এক লোক। পরে তার সঙ্গে যোগ দেয় আরো তিনজন। তারা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়।

নিলয়কে যখন কয়েক যুবক উপর্যুপরি কোপাচ্ছিল তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী চিৎকার করেন- বাঁচাও, বাঁচাও বলে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। শুক্রবার রাতে নিলয়ের স্ত্রী আশা মনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

আশামনি আরও বলেন, ‘মাসখানেক আগে আমার স্বামীর মোবাইলে কল করে হত্যার হুমকি দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ব্লগার অনন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে ফেরার পথেও তাকে দুই ব্যক্তি ফলো করেছিল।’

নিলয় হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আশা বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে তার স্বামী বাজার থেকে ফিরে ড্রয়িংরুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসেন। তখন এক যুবক এসে কলিংবেল বাজায়। আমি নিজেই দরজা খুলে দেই। বাসা ভাড়ার কথা বলে ঘর দেখার নাম করে ওই যুবক বাসার ভেতরে ঢোকে। আমরা বাসা ছাড়ছি না এবং বাড়িওয়ালাকেও এ বিষয়ে কিছু জানাইনি বললে ওই যুবক বলে বাড়িওয়ালাই আমাকে দেখে যেতে বলেছেন।’

আশা বলেন, ওই যুবক বাসা দেখার সময় হাতে থাকা মোবাইল টিপছিলেন। মোবাইলে কাউকে এসএমএস করছিলেন বলে মনে হয়েছে। বাসা দেখা শেষ হলেও ওই যুবক বের না হওয়ায় বেডরুমে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকা স্বামী নিলয়কে বিষয়টি জানান আশা।

‘তখন নিলয় এসে ওই যুবককে চলে যেতে বলার সঙ্গে সঙ্গেই আরও তিনজন লোক বাসায় ঢুকে। এদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী একজনের মুখে দাড়ি ছিল। তারা ভেতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর বলে প্রথমে চাপাতি দিয়ে নিলয়ের হাতে কোপ দেয় দাড়িওয়ালা লোকটি।’

আশা বলেন, ‘তিনজনের হাতে রামদা ও একজনের হাতে পিস্তল ছিল। নিলয়কে কোপ দেওয়ার পর চিৎকার করে স্বামীকে না মারতে তিনি ওই লোকের পা জড়িয়ে ধরেন। এরপর তাকে চুল ধরে টেনে নিয়ে একটি বারান্দায় আটকে রাখা হয়।

ছোট বোন ইশরাত তন্নী বৃহস্পতিবার নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসেছে জানিয়ে আশা মনি বলেন, ‘ওই সময় আমার বোন রান্না করছিল। সেও চিৎকার শুরু করলে তারা ওকে অন্য একটি বারান্দায় আটকে রাখে।’

এরপর নিলয়কে মাথা ও ঘাড়ে একের পর এক কোপ দিতে থাকে তারা। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ঘরের বাইরে থেকে দরজা আটকে দিয়ে চলে যায়।’ আশা বলেন, যুবকরা চলে যাওয়ার পর থেকে নিলয়ের ব্যক্তিগত ল্যাপটপটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

হত্যার সময় কেউ এগিয়ে আসেনি অভিযোগ করে আশা বলেন, ‘আমি বারান্দা দিয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলেও কেউ তাকে বাঁচাতে আসেনি। এমনকি হত্যাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর দরজা খুলেছে প্রতিবেশিরা।’

নিলয়কে হত্যার প্রায় চার ঘণ্টা পর [email protected] ঠিকানা থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ঠিকানায় একটি বার্তা পাঠানো হয়, যাতে প্রেরক হিসেবে রয়েছে মুফতি আব্দুল্লাহ আশরাফ নামে এক ব্যক্তির নাম। তিনি নিজেকে আনসার আল ইসলামের মুখপাত্র হিসেবে দাবি করেছেন।

ওই বার্তায় বলা হয়, ‘আলহামদুলিল্লাহ!আনসার-আল-ইসলাম (আল-কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ, বাংলাদেশ শাখা) এর মুজাহিদিনরা হামলা চালিয়ে আল্লাহ তা`আলা ও তাঁর রাসুলের দুশমন নিলয় চৌধুরী নীলকে হত্যা করেছেন।’

প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G