যে লেকের পানি স্পর্শ করলেই মমি !
রাকিব হাসান :
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম লেকটি আফ্রিকায়। এ লেকের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে মুহূর্তেই যেকোন পর্যটকের চোখ জুড়িয়ে যায়। রাজ্যের সব স্বপ্ন এসে বাসা বাঁধে, আর কবিতা এসে ভর করে। ইচ্ছে করে গলা ছেড়ে গান গাইতে, আর প্রিয়তমার হাত ধরে যুগল নৃত্য করতে। এরকম স্বর্গীয় অনুভূতি এনে দেবার কারণে লেকটিকে অনেকে বেহেস্তের সাথেও তুলনা করেছেন। লেকের বাহারি রং আর স্বচ্ছ পানির ধারা দেখে যে কারো ইচ্ছে করবে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে কিছুক্ষণ সাঁতার কেটে আসতে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি এই লেকে ভুলেও ঝাঁপ দেয়া নিষেধ।
এই লেকে কোন প্রাণী পড়ার পর পরই প্রাকৃতিক ভাবেই রুপান্তরিত হয়ে যায় প্রাণহীন মমিতে। পানি স্পর্শ করার সাথে সাথে আপনি হয়ে যাবেন মমি। কি ভয়ংকর ব্যাপার ! এবার নিশ্চয় আপনার রুপকথার গল্প মনে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভয়ংকর সৌন্দর্যের এই লেকটির অস্তিত্ব আমাদের পৃথিবীতেই। পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ারার উত্তর প্রান্তে কেনিয়া আর তানজানিয়া সীমান্তের মাঝে অবস্থিত এই লেকের নাম ন্যাট্রন। লেকের আশপাশে এবং পানিতে প্রায়ই এমন সব মৃত পশুপাখির দেহ পাওয়া যায় যেগুলো অনেকটা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
মাঝে মাঝে ফেমিঙ্গো বা অন্য প্রাণী পানিতে পড়ার সাথে সাথে মারা যায়। তাদের দেহের টিস্যুগুলো ক্যালসিয়ামে পরিণত হওয়ায় তারা ক্যালসিয়ামের মূর্তি হয়ে যায়। একে বলে ক্যালসিফিকেশন। বিজ্ঞানীরা আজো জানে না, কেন ফেমিঙ্গো পাখিগুলো লেকের পানিতে পড়ে। তবে সম্ভাব্য ব্যখ্যা হলো, লেকের পানিতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হলে সেটা ফেমিঙ্গো পাখিকে আকৃষ্ট করে। এর ফলে তারা পানিতে ঝাঁপ দেয়, যার পরিণতি হয় করুণ। লেকটির তীরজুড়ে ফেমিঙ্গো, স্টার্লিং, হর্নবিল, ঘুঘুসহ অনেক পাখির মৃতদেহ এমনভাবে পড়ে থাকে- দেখলে মনে হয় যেন তাদের মমি করে রাখা হয়েছে। এর পানি এতটাই ভয়ংকর যে, জীবন্ত মানুষকে ফেলে দেবার কিছুক্ষণের মধ্যে ঐ মানুষটিও পাখিদের মতো মমি হয়ে যাবে।
প্রাচীন মিশরীয়দের ইতিহাসে জানা যায়, ফারাওদের মৃতদেহগুলো সরাসরি মাটি চাপা না দিয়ে মমি তৈরি করে পিরামিড বা সমাধিসৌধ নির্মাণ করত তারা। সেই সময়ে ফারাওদের মরদেহ পেঁচিয়ে দিতো রাসায়নিকে ভেজানো লিনেনে। আর সেই রাসায়নিকের কারণেই দেহগুলো হয়ে উঠত মমি। এই লেকের সন্ধাত যদি তারা পেতো তবে হয়তো এত কষ্ট করতে হতো না ! লেকের পানিতে চুবিয়ে দিলেই খেলা শেষ।
করুণ পরিণতির কারনেই মূলত এটি ‘মমি লেক’ হিসেবে পরিচিত। প্রায় একহাজার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকাব্যাপী লেকটি দেখতে আর দশটি সাধারণ লেকের মতো হলেও এর রয়েছে ভয়াবহ কিছু উপাদান। এর তলদেশের মাটিতে রযেছে সোডিয়াম কার্বনেট আর সোডিয়াম বাই কার্বনেট যা সৃষ্টি করে অতিরিক্ত তাপমাত্রা। অতিরিক্ত এই তাপমাত্রার কারণে লেকের পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে থাকে।
এর পানির তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট । মাঝে মাঝে এটি ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করে। এছাড়া এই লেকের পানির পিএইচ এর মাত্রা ৯-১০.৫ , যা সমুদ্রের পানির পিএইচ থেকেও বেশি। লেক এলাকায় বার্ষিক মেঘের পরিমাণ ৪০০ মিলিলিটার।
আশার কথা হচ্ছে লেকটি নিয়ে গবেষণা চলছে। বছরের কিছু কিছু সময় মৌসুমী ফসলও এখানে হয়। লেকটির পাশে ইওয়াসো কেনিয়া সীমান্তের এনজিরো নদীতে হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে লেকটি এখনো পর্যটকদের জন্য নিরাপদ করা সম্ভব হয়নি।
এরকম আরো কিছু নিউজঃ
# যে হোটেলের কর্মীরা কখনও ছুটি নেয় না!
# শুক্রাণু দিয়ে তৈরি হচ্ছে কসমেটিক
# চালকের কাছে ‘দুঃস্বপ্ন’ যে ব্রিজ!
পাভেল/ প্রতিক্ষণ/এডি/রাকিব