রহস্যে ঘেরা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল
নিজস্ব প্রতিবেদক
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভূজ নামেও পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল, যেখান বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার গল্প আমরা শুনি।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে প্রায়ই নৌযান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এর উপর দিয়ে বিমান উড়ে গেলে তার আর হদিস পাওয়া যায় না।
এই এলাকায় কম্পাসের কাঁটা এলোমেলো দিক নির্দেশনা দেয়। এসকল গল্প বহু বছর ধরে চলছে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে তা অন্য কোথাও এত বেশি এতো বেশি ঘটেনি। মাঝে মাঝে সময় এবং অবস্থান ওলট-পালট হয়ে যায়। একজন পাইলট আকস্মিকভাবে দুই ঘন্টার পথ চোখের নিমেষে পাড়ি দিয়ে ফেলেছেন এমনটাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে ঘটতে শোনা যায় ।
মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এ এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছিল।
১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫টি যুদ্ধ বিমান প্রশিক্ষণ নেবার জন্য উপরে ওঠে । কিছুক্ষণ পরেই তারা সেই ভয়ংকর বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাছে চলে যায় এবং কেন্দ্রে ম্যাসেজ দেয় যে তারা সামনে আর কিছুই দেখতে পারছে না যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধুই কুয়াশা । অদৃশ্য হবার শেষ মুহূর্তে তাদের শেষ কথা ছিল আমাদের বাঁচাও, উদ্ধার কর এখান থেকে আকাশের কুয়াশা আমাদের কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।
এর পর আর তাদের কাছ কোন ধরনের ম্যাসেজ পাওয়া যায়নি । পরবর্তীতে তাদের উদ্ধার করার জন্য একটি উদ্ধারকারী দল সেদিকে পাঠানো হয় কিন্তু তাদেরকেও আর খুঁজে পাওয়া যায় নি । এর পরপরই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় । ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে অ্যাসোসিয়েট প্রেসের এক প্রবন্ধে সাংবাদিক ই ভি ডাবলিউ জোনস বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে অস্বাভাবিক ঘটনার কথা লিখে একে বিশ্ববাসীর নজরে আনেন । ১৯৫২ সালে ‘ফেট’ ম্যাগাজিন-এর জর্জ এক্স সান্ড লিখেন “সি মিসট্রি অ্যাট আওয়ার ব্যাক ডোর”। জর্জ এক্স সান্ড ৫ জন ইউএস নেভি সহ ১৯ নং ফ্লাইটের নিখোঁজ সংবাদ ছাপেন । শুরু হয় বারমুডা রহস্য।
১৯৫৯ সালের ১৭ জানুয়ারী স্টার এরিয়েল নামের একটি বিমান লন্ডন থেকে জ্যামাইকা যাচ্ছিল । সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে এটি বারমুডার আকাশে উড়ল । তখন আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিক ও সুন্দর । আর সমুদ্র ছিল শান্ত । ওড়ার ৫৫ মিনিট পর বিমানটি অদৃশ্য হয়ে গেল । এ নিয়ে অনেক অনুসন্ধান হলো । কিন্তু সমুদ্রের কোথাও বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেল না । বিমানটি অদৃশ্য হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি রাতে । ১৮ তারিখ রাতে এক অনুসন্ধানী দল জানাল, সেখানকার সমুদ্রের বিশেষ বিশেষ একটি জায়গা থেকে অদ্ভূত একটি আলোর আভাস দেখা যাচ্ছে । এ ঘটনার এক বছর আগে সেখান থেকে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল একটি ডিসি-৩ বিমান । সেটি যাচ্ছিল সানজুয়ান থেকে সিয়ামি । এছাড়াও অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ আছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে নিয়ে ।
আর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে না পাবার ব্যপারে বিজ্ঞানীরা বলেন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে সমুদ্রের গভীরতা এতোটাই বেশি যে এখানে যদি কোন বিমান বা জাহাজ হারিয়ে যায় বা বিধ্বস্ত হয় তবে তার ধংসাবশেষ খুজে পাওয়া খুবই অসাধ্য একটি ব্যাপার । বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন স্যাটেলাইট ব্যবহার করে যদি এর চিহ্ন খুজে পাওয়া যায় তারপরেও সেটি উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার ।
https://www.youtube.com/watch?t=640&v=SaNj6Kr14Qk
প্রতিক্ষণ/এডি/এমএস