রহস্যে ঘেরা ’ম্যাগনেটিক হিল’
আপনি গাড়ি নিয়ে কোন পাহাড়ে বেড়াতে গেলেন। যখন পাহাড়ি পথ দিয়ে ফিরে আসছেন ঠিক তখনই কোন কারণে থামলেন। এবং থামার পর যা দেখলেন, আপনার গাড়িটি কোন কারণ ছাড়াই নিজে নিজে পাহাড়ের ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে যা একেবারেই অকল্পনীয়। ঠিক তেমনই হচ্ছে যা মধ্যাকর্ষন শক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত! আর এমনটি ঘটলে আপনি নিঃসন্দেহে ভেবাচেকায় পড়তেই পারেন।নিঃসন্দেহে এমন অদ্ভুদ স্থান সম্বন্ধে পূর্ব হতে জেনে না থাকলে যেকোনো সময় আপনিও না সেই রহস্যময়তার জালে ডুবে যেতে পারেন অনায়াসে। বলছিলাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর লাদাখের কথা।নানান রূপের অধিকারী লাদাখে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। কিন্তু লাদাখে প্রাকৃতির সৌন্দর্য্যের বাইরেও প্রকৃতির যে রহস্যময়তা আছে তা আরও অনেক বেশি আকর্ষণীয় মানুষের জন্য। লাদাখের লেহ অঞ্চল থেকে কারগিলের দিকে যেতে ত্রিশ কিলোমিটার দূরত্বেই আছে সেই রহস্যময় চুম্বক পাহাড়। শ্রীনগর-লেহ মূলসড়ক দিয়ে খুব সহজেই ওই পাহাড়টি দেখা যায় এবং সড়কটিও ওই পাহাড়ের উপর দিয়েই গেছে। ওই সড়কে গেলেই সাক্ষী হওয়া যাবে এক রহস্যময় ঘটনার। আপনি যদি আপনার গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখেন, তাহলে কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পাবেন যে আপনার সাধের গাড়িটি ক্রমশ সামনের দিকে যাচ্ছে। ঘণ্টায় বিশ কিলোমিটার গতিতে আপনার গাড়িটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে যেন অদৃশ্য কেউ। শুধু গাড়িই নয়, লাদাখের এই অঞ্চলের উপর দিয়ে কোনো বিমান যাওয়ার সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিমানের গতিপথ যাতে পাল্টে না যায় সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয় পাইলটকে। আর সড়কপথে পর্যটকরা চাইলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে অনায়াসে বিশ কিলোমিটার গতিবেগে পুরো পরিবেশটিই অবলোকন করতে পারেন। এই চুম্বক পাহাড় নিয়ে স্থানীয়দের ভেতর নানান গল্প চালু আছে। তবে সবগুলো গল্পই সেই ঐশ্বরিক বা অতিপ্রাকৃত শক্তির বর্ননায় শেষ হয়। অবশ্য, পৃথিবীতে যতগুলো এরকম স্থান আছে তার সবগুলোর স্থানীয় জনতার বিশ্বাসও মূলত ওই অতিপ্রাকৃত শক্তি কেন্দ্রিক।
লাদাখের এই চুম্বক পাহাড় স্থানীয় জনতার বাইরে ভিন্নাঞ্চলের মানুষের কাছে আবিষ্কৃত হয় অনেক পরে। তৎকালীন সময়ে কাশ্মির কর্তৃপক্ষ ওই চৌম্বকিয় ক্ষেত্র সম্পর্কে সাধারণকে জানানোর কোনো প্রয়োজন মনে করেনি। কিন্তু বেশকিছু মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটনার পর পরিস্থিতি পালটে যায় রাতারাতি। এছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কারগিল যুদ্ধ হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলের সার্বিক চিত্রই অনেকটা পাল্টে যায়। বর্তমানে লাদাখ কর্তৃপক্ষ ওই সড়কটির দুই প্রান্তেই সাইনবোর্ড বসিয়ে দিয়েছে, যাতে কেউ দুর্ঘটনায় পতিত না হয়। তবে চুম্বক পাহাড়ের ওই অঞ্চলের চৌম্বকিয় ক্ষেত্রের কার্যকারণ যে শুধুমাত্র লোহার বস্তু কেন্দ্রিকই দৃশ্যমান, তা নয়। রাস্তার ধারে বা কিছুটা উচু স্থানে দাড়ালে তীক্ষ্ণ এক শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন এই শব্দকে ঐশ্বরিক বলে ধারণা করা হলেও, পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে এধরণের গ্রাভিটি হিল রয়েছে সেখানে চৌম্বকিয় ক্ষেত্রের তরঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ওই শব্দ উৎপাদিত হয়। এছাড়াও এমনও অনেক সময় দেখা যায়, লাদাখের ওই চুম্বক পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পানিও গ্রাভিটির সূত্র ধরে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হওয়ার চেষ্টা করে।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাসিব