রাখাইন রাজ্যে নিহতের সংখ্যা ৪০০
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৪০০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ জন সাধারণ নাগরিক।
গত ২৪ আগস্ট রাখাইন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের’ লড়াই শুরু হওয়ার পর গত এক সপ্তাহে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মিয়ানমার থেকে সহায়-সম্বলহীনভাবে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের একটি বড় অংশ এসে জড়ো হয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাস্তার পাশে শরণার্থীরা অবস্থান করছে।
পালিয়ে আসাদের মধ্যে কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে নদী ও সমুদ্রপথে বাংলাদেশে প্রবেশে চেষ্টা করছেন। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে নৌকাডুবিতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এ পর্যন্ত নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৪০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালের জুনেও রাখাইন রাজ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত হয়েছিল। তখন প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হন। ওই সময় দাঙ্গার কবলে পড়ে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
রোহিঙ্গা সেনাবাহিনীর তরফে দাবি করা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে’ অভিযান চলছে। অপরদিকে সেখান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভাষ্য, সেনাবাহিনী সেখানে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে।
জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এক পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ