রাবির শিক্ষক তানভিরের ফেসবুক স্ট্যাটাস
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমদকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন আকতার জাহান জলি। এ দম্পতির এক পুত্র সন্তান রয়েছে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছায় ২০১০ সালে। ২০১১ সাল থেকে স্বামী-স্ত্রী পৃথকভাবে বসবাস শুরু করেন। আর চূড়ান্তভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় ২০১৩ সালে। এরপর আকতার জাহান জলি আর বিয়ে না করলেও পরবর্তী সময়ে তানভীর আহমেদ বিয়ে করেছেন তাঁর ছাত্রী ও একই বিভাগের প্রভাষক সোমা দেবকে।
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাদের প্রিয় শিক্ষক জলির মৃত্যুর জন্য দায়ী করে তানভীর আহমদকে ইঙ্গিত করে লিখছেন।
এ অবস্থায় শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন তানভীর আহমেদ। তাঁর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমদকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন আকতার জাহান জলি। এ দম্পতির এক পুত্র সন্তান রয়েছে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছায় ২০১০ সালে। ২০১১ সাল থেকে স্বামী-স্ত্রী পৃথকভাবে বসবাস শুরু করেন। আর চূড়ান্তভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় ২০১৩ সালে। এরপর আকতার জাহান জলি আর বিয়ে না করলেও পরবর্তী সময়ে তানভীর আহমেদ বিয়ে করেছেন তাঁর ছাত্রী ও একই বিভাগের প্রভাষক সোমা দেবকে।
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাদের প্রিয় শিক্ষক জলির মৃত্যুর জন্য দায়ী করে তানভীর আহমদকে ইঙ্গিত করে লিখছেন।
এ অবস্থায় শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন তানভীর আহমেদ। তাঁর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গতকাল থেকে মিডিয়াসহ অনেকেরই কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। তাই কিছু উত্তর এখানে দিয়ে রাখলাম :
আমাদের জীবনে সমস্যার সূত্রপাত ২০১০ সালে। আমার সাবেক স্ত্রী আকতার জাহান বিভাগের এক জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চান। বিষয়টি আমার সহকর্মীরাসহ ক্যাম্পাসের অনেকেই জানেন। ফলে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমরা মিউচুয়ালি আলাদা হয়ে যাই। তিনি আমাদের সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু প্রায় ২ সপ্তাহ পরই ছেলেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন এবং জানান যে, শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি ছেলের দায়িত্ব নিতে পারছেন না। আমাদের ছেলে তখন ক্লাস ফোরে উঠেছে। পরবর্তী বছরগুলোতে আমি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনুরোধ জানালেও নিজের অসুস্থতার কারণে তিনি ছেলেকে নিজের কাছে নিতে অপরাগতা জানিয়েছিলেন। তখন থেকে ২০১৬ এর ৩০ মে পর্যন্ত ছেলে আমার কাছেই ছিল। তবে প্রতিটি ঈদ ও স্কুলের ভ্যাকেশনে মায়ের সাথে নানির বাড়িতে যেত। সে রাজশাহীর প্যারামাউন্ট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। সম্প্রতি তার মা তাকে ঢাকার স্কুলে পড়াশোনা করানোর ইচ্ছে আমার মায়ের কাছে জানান। আমার কাছেও এটি সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ভালো প্রস্তাব মনে হয়। ঢাকার স্কুলটিতে সেশন জানুয়ারিতে শুরু হওয়ায় আগামী জানুয়ারিতে তার ক্লাস নাইনে ভর্তি হওয়ার কথা।’
২০১১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আকতার জাহানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ ছিল না। উল্লেখ্য, গত ২৬.০৮.২০১৩ তারিখে তিনি অফিশিয়ালি ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠান। আমিও তাতে সম্মতি দেই। এই পাঁচ বছরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন-যাপন, ভালো-মন্দ কোনো কিছুর সাথেই আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। তিনি নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমি তাতে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে চাইনি।’
‘তিনি নিঃসন্দেহে একজন ভালো শিক্ষক, সহকর্মীদের কাছে একজন ভালো সহকর্মী এবং ছাত্রদের কাছে মাতৃতুল্য অভিভাবক। আমার সাথে তাঁর বহু আগেই শেষ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিগত সম্পর্কের থেকে মুখ্য হলো তিনি এই পাঁচ বছরে যাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁর বর্তমান সময়ের সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে তাঁরাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি মোটেই সঠিক ব্যক্তি নই।’
তানভীর আহমদের এই স্ট্যাটাস নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাবেক শিক্ষার্থী-সাংবাদিকরা। স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম মন্তব্য লেখেন তার সাবেক শিক্ষার্থী রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ও রাইজিংবিডি ডটকমের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক তানজিমুল হক। এতে তিনি লেখেন, ‘স্যার কোনো কমেন্ট করছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার কিছু আগে ম্যাম জয়েন করেছেন। তবে সাংবাদিকতার কারণে অনেক কিছুই আমাদের নজরে রয়েছে। এ কারণে কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না। তবে আপনারা শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু আপনাদের সম্পর্কে যেসব কথাবার্তা ক্যাম্পাসে চাউর হয়, তা অত্যন্ত বেদনায়ক। সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এগুলো আমাদের কাম্য নয়।’
শিক্ষক জলি জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন, তানভীর আহমদের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করে প্রথম আলোর বাগমারা উপজেলা প্রতিনিধি মামুন-অর-রশিদ লিখেছেন, ‘স্যার আপনি নিজের অবস্থান জানিয়েছেন ভালো, তবে একটি বিষয় না লিখলেই পারতেন।’
প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলাম লিখেছেন, ‘বি কুল’।
সমকালের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান সৌরভ হাবিব লেখেন, ‘স্যার জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের কোনো প্রমাণ আপনার হাতে কি আছে? থাকলে দিন এবং তার পরিচয়টা জানান। একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এমন মন্তব্য খুবই প্রতিহিংসামূলক মনে হলো। তা ছাড়া আপনার সহকর্মীরা বলছেন, জীবিত অবস্থাতেও জলি আপা আপনার এমন মন্তব্য থেকে রক্ষা পাননি। তাহলে কি বুঝব? এই আত্মহত্যার পেছনে প্ররোচনাদানকারী যে মানুষটির কথা উঠে আসছে তিনি কি…?’
শাহাজাদী সুলতানার মন্তব্য, ‘একটা অংক মিলছে না। আপনার ভাষ্যমতে, ম্যাডামের সাথে সমস্যা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে- ম্যাডামের কারণে! তো আপনার বর্তমান বউ তো ২০১০ এর অনেক আগেই পাস করে চলে যাওয়ার কথা। তাইলে পাইলেন কেমনে?? অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বুঝি?! আপনারা অনেক জ্ঞানী! তাই বলে আমরা কী অনেক বোকা??? মিনতি করি- মৃত মানুষটিকে মুক্তি দিন। তিনি আপনার সন্তানের মা। নিজের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ছেলেটাকে কতটা কষ্ট আর লজ্জায় ফেলছেন একটু ভাবুন!’
শবনম আয়েশা নামের একজন লিখেছেন, ‘জীবন বেছে নেওয়ার অধিকার অবশ্যই আছে তবে তা কাউকে দমিয়ে নয় বিশেষ করে যখন কেউ এর ফলে প্রতিনিয়ত তিলে তিলে দগ্ধ হবে। সাধারণ মানুষও বোধ করি এ ধরনের মানবীয় নিয়ম মেনে চলে। একই বিভাগে প্রাক্তন ও বর্তমানকে নিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে/ডোন্ট কেয়ার চলার নাম যদিও আধুনিকতা হয় এর ভেতরে মানবিকতার ছিটেফোটাঁও নেই। আমাদের সমাজ সংস্কার যদিও আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তিত কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ তো সব হারায়নি। তাই নয় কি স্যার?’
মুরাদ সালাউদ্দিন নামের একজনের মন্তব্য, ‘বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাইনি কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, যেহেতু বিষয়টি খুবই ব্যক্তিগত কিন্তু Tanveer Ahmad সেটিকে আর ব্যক্তিগত রাখেননি, শুধু একটি প্রশ্ন, আপনার সাবেক স্ত্রীকে নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন তা যদি সত্যি হয় তবে সে কেন আপনার মতো করল না, আর আপনার ২য় স্ত্রীকে আমি খুব ভালো করে চিনি, তারও তো একটা অতীত ছিল সেটা অনেকেই জানে। এই ভাঙ্গা-গড়ার শেষ কোথায়????’
পারভেজ হাসান লিখেছেন, “‘হয়তো তোমাদের টানেই, তোমাদের ভালোবাসাতেই আমি ভালো আছি, বেঁচে আছি।’ আমার সাথে কয়েক মাস আগে বিভাগের করিডরে জলি ম্যামের এটিই ছিল শেষ কথা। কী নিদারুণ কষ্ট আর অভিমান বুকে চেপে মুহূর্তের সুখ খুঁজে ভালো থাকার চেষ্টা করতেন সেই মানুষটি, সেদিন সে কথার মমার্থ না বুঝলেও আজ আমরা সবাই বুঝে গেছি। স্যার, এই ভালোবাসাময় মানুষটিই তো আপনার ছিল। আর আজ তার বিদেহী আত্মাকেও কি কষ্ট দিতে আপনি ছাড়বেন না? আমি, আমরা আপনার কাছে মিনতি করছি (অবশ্যই ক্ষোভের সাথে) যে মানুষটির সাথে জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন, তাঁকে আমাদের কাছে অসম্মানিত করার স্পর্ধা আর একটিবারও দেখাবেন না প্লিজ।’
=====