রেশম চাষে সম্ভাবনা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাঙালির জীবনযাত্রায় রেশমের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।রেশম থেকে প্রস্তুত পোশাকের মধ্যে শাড়ি ছাড়াও রয়েছে কামিজ, থ্রি পিস, লেহেঙ্গা, ওড়না, শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, স্কার্ফ, রুমাল, টাই, বেবি অয়্যার ইত্যাদি। শাড়ি ও অন্যান্য তৈরি পোশাকে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিভিন্ন নকশা করা হয়। এসব নকশায় রঙ, রঙিন সুতা, জরি, পুঁতি, কাচ, প্লাস্টিকসহ বহুবিধ উপকরণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
রেশমের ঐতিহ্যবাহী ও অতি জনপ্রিয় শাড়ির নাম গরদ। রাজশাহী অঞ্চলে বোনা এই শাড়ি রেশমের স্বাভাবিক রঙের জমিনের বিপরীতে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লাল বা সবুজ এবং কখনো সোনালি জড়ির কাজ করা পাড় থাকে।রেশমের তৈরি আরেকটি জনপ্রিয় শাড়ির নাম ঢাকার কাতান।
সম্ভাবনা:
বর্তমানে চীন রেশম চাষ সংকোচন করায় আন্তর্জাতিক বাজারে রেশম সুতার দাম বেড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত ও ভিয়েতনাম রেশম চাষ সম্প্রসারণ করছে। বাংলাদেশও এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রেশম চাষে ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটাতে পারে। এ জন্য যুগোপযোগী গবেষণা ও প্রশিক্ষণ দরকার। রেশম বোর্ড প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর দেশের ৩৬টি জেলার ১৯০টি থানায় রেশম চাষের বিস্তার ঘটিয়েছে।
ইতোমধ্যে রেশমশিল্প উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। রেশম বোর্ড ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে দেশের ১০৪টি উপজেলায় রেশম চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশে তুঁত চাষ বৃদ্ধিসহ রেশমশিল্পের ব্যাপক বিস্তার ঘটানো যাবে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের উচ্চফলনশীল তুঁত বাগান তৈরি ও উন্নতমানের রেশমগুঁটি উৎপাদনে সহায়তা প্রদানসহ তাদের উদ্বুদ্ধকরণের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে মডেল হিসেবে ২০টি রেশমপল্লি (পাঁচটি আশ্রয়ণ, আবাসন ও ১৫টি আইডিয়াল রেশমপল্লি) স্থাপন, রেশমশিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে দতা বৃদ্ধির জন্য ২ হাজার ৫৩০ জনকে রেশমের আধুনিক কলাকৌশলের ওপর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান, রেশম চাষ ও শিল্পের সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৫০ হাজার হতদরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করা হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আবহাওয়া, মাটি ও আর্থসামাজিক অবস্থা রেশম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তা সত্ত্বেও রেশম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান অনেক নিচে।
এ সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার:
বিশ্ববাজারে রেশম আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাই এ শিল্পটি পুনরুজ্জীবিত করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ জন্য এর প্রতিটি স্তরে সৃষ্ট সমস্যা খুঁজে বের করে উত্তরণের চেষ্টা চালাতে হবে। রেশমশিল্পের উন্নয়নের জন্য অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যেমন:
১.রেশমচাষিদের স্বল্প বা বিনাসুদে ঋণ দেওয়া।
২.রেশম চাষের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি।
৩.মানসম্মত গুঁটি উৎপাদন।
৪.উন্নত ডিম সরবরাহ, উৎপাদিত গুঁটির দামের প্রতি খেয়াল রাখা।
৫.মানসম্মত সুতা উৎপাদন।
৬.সুতা চোরাচালান বন্ধ প্রভৃতি।
সর্বোপরি রেশম নগরী রাজশাহীর ৭২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু করার জন্য রেশম বোর্ডের সহযোগিতায় ২৩টি রেশম প্রকল্পের মাধ্যমে সুতা সংগ্রহ, কুপন তৈরি ও সুতা উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সুতা সংকট নিরসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কারিগরি দতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা রেশমের তৈরি লাল পাড়ের গরদ শাড়ি, গরদের পাঞ্জাবি ও মটকা শুধু দেশে জনপ্রিয় নয়, বিদেশেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই রেশম চাষ দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। এ শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেমন বাড়বে করা যায়, তেমনি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এ শিল্পই হতে পারে বাংলাদেশটি বিশ্বে পরিচিত করার মাধ্যম।