রোগ প্রতিরোধে পেয়ারা
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
পেয়ারাকে বলা হয় দেশী আপেল। আর স্বাদে-পুষ্টিতে আপেলের চেয়ে কোন অংশে কম নয় পেয়ারা। আমাদের চিরচেনা এই ফলটি কতভাবে যে আমাদের স্বাস্থ্যের উপকার করে তা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। প্রতিদিন মাত্র ১ টি পেয়ারা অনেকগুলো ভয়ংকর রোগ প্রতিরোধ করে আপনার নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা খুব সহজেই দূর করে দিতে পারে।
পেয়ারাতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল (১০০ গ্রাম), ক্যালরি ৭, ভিটামিন-এ ২৫০ আই ইউ, থিয়ামিন ০.০৭ গ্রাম, নিয়াসিন ১.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ৩০২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৯ মিলিগ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৭.১ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম। পেয়ারায় আরও রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (প্যান্টোথেনিক এসিড, নিয়াসিন, পাইরিডক্সিন), ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, এবং কয়েকরকম খনিজ (ম্যাগনেশিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ)। কপার লৌহ রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে, ম্যাঙ্গানিজ এন্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমের সহকারী হিসেবে কাজ করে।
এখন পেয়ারার মৌসুম। আসুন দেখে নিই পুষ্টিতে ভরপুর পেয়ারা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে আমাদের সুস্থ রাখতে কীভাবে সাহায্য করে।
১। ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে – পেয়ারাতে ক্যালরি এবং ফ্যাট বলতে গেলে একেবারেই নেই। তবে তা ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট (পলিফেনোলিক ও ফ্ল্যাভেনয়েড) সমৃদ্ধ যা ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত সহায়ক। পেয়ারাতে ভিটামিন এ, বিটাক্যারোটিন, লাইকোপিন, লুটিন এবং ক্রিপ্টোজ্যান্থিন বিদ্যমান। সুস্থ দেহের জন্য এসব উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যারা ফুসফুস এবং মুখগহবরে ক্যান্সার হওয়া প্রতিরোধ করে। এছাড়া পেয়ারার লাইকোপিন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি হতে ত্বককে রক্ষা করে এবং প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
২। পেট পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে – পেয়ারা একটি উচ্চআঁশযুক্ত ফল। যা আপনার পেট পরিস্কার রাখার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। অন্ত্র ও পাকস্থলি থেকে বিষাক্ত উপাদানসমূহ দূর করতে এর জুড়ি নেই।
৩। রক্তনালি, ত্বক, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দৃঢ় রাখতে সহায়তা করে – পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান। অনেকে বাইরের সবুজ ত্বক খেতে চান না। কিন্তু ভিতরের শাঁস অপেক্ষা বাইরের ত্বকেই বেশি ভিটামিন বিদ্যমান। ভিটামিন সি নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরে যেকোনো ক্ষত হতে ঘা সৃষ্টি (ইনফেকশান) হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়, কোলাজেন সংশ্লেষণের হার ঠিক থাকে, যা রক্তনালি, ত্বক, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দৃঢ় রাখতে সহায়তা করে।
৪। হাই ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে – পেয়ারার পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। সুতরাং উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা দিনে অন্তত ১ টি পেয়ারা খান।
৫। হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে – রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে। হার্টের সমস্যায় ভুগলে পেয়ারা খেতে পারেন। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতেও পেয়ারা খেতে পারেন। পেয়ারায় উপস্থিত ভিটামিন-সি সক্রিয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় পেয়ারা।
৬। ডায়বেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে – অনেকের ধারণা লেবুতে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন থাকে। কিন্তু বহু লোক জানেন না, একটি পেয়ারায় লেবুর চারগুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধও পেয়ারা। পাতিলেবুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভিটামিন এ থাকে পেয়ারায়। এছাড়াও পেয়ারায় থাকে ভিটামিন B2, ভিটামিন K এবং E। শুধু ভিটামিনই নয়, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফেরাস, লোহা, তামা, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো প্রচুর খনিজও থাকে এই ফলে। পেয়ারার আরও একটি সুবিধে হলো, এই ফলের চাষ করতে রাসায়নিক প্রয়োজন হয় না। ফলে সব সময়ই খাঁটি। রোজ খাওয়ার পর দিনে একটি পেয়ারা খেতে পারলে ডায়াবেটিস হয় না। পেয়ারা ব্লাড সুগার নর্মাল করে দেয়।
এছাড়া মেন্সট্রুয়েশনের সমস্যায় পেয়ারা উপকারি। পেয়ারা পাতার জুস গ্যাস্ট্রোনটেস্টিনাল সমস্যায় উপকারী। কারণ, পেয়ারা পাতায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া পেয়ারা পাতা ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতার জুস সর্দি-কাশি উপশমে সাহায্য করে। আয়রন ও ফাইবারে সমৃদ্ধ পেয়ারা কনস্টিপেশন সারাতে উপকারী। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পেয়ারা ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রুখতে সাহায্য করে। একই কারণে অনেক বডি লোশন বা ফেস ক্রিমের উপাদানে পেয়ারা থাকে। বয়সের সঙ্গে জড়িত নানা রোগ, যেমন—অ্যালজাইমার, ছানি, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানে সমৃদ্ধ পেয়ারা ডিসেন্ট্রি প্রতিরোধ করে।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া