লিটন হত্যার মূলহোতা কাদের: পুলিশ
সুন্দরগঞ্জে আবার এমপি হওয়ার জন্য এ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুল কাদের খান মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে পুলিশের ভাষ্য। এছাড়া কাদের ওই আসনে পুনর্নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীকে হত্যার পরিকল্পনাও করেছিলেন বলে পুলিশ দাবি করছে। বুধবার গাইবান্ধা পুলিশ সুপার অফিস চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক।
লিটন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল, পিস্তলের ম্যাগজিন, শটগানের কভার ও ১০টি গুলির খোসা, মোবাইল সিমসহ একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার উদ্ধার করার কথা সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
লিটন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চারজনের মধে্যে কাদের খানের গাড়িচালক আবদুল হান্নান, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহিন মিয়া ও মেহেদী গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাকিম আদালতে ‘১৬৪ ধারায় জবানবন্দি’ দেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই কাদের খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার কাদেরকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
ডিআইজি ফারুক বলেন, “লিটনকে সরিয়ে দিতে পারলেই পুনরায় ওই আসনে কর্নেল কাদের এমপি নির্বাচিত হবেন। এই উচ্চাভিলাষ, লোভ ও ক্ষমতার মোহেই সাবেক এমপি কাদের খান গত একবছর থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া কিলারদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে গত ছয় মাস থেকে কাদের নিজেই গাইবান্ধা ও বগুড়ার একাধিক স্থানে তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেন।”
লিটন হত্যাকাণ্ডের পরথেকে পারিবারিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং জামাত-শিবিরসহ নানা দিক নিয়ে তদন্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর কথা জানান ডিআইজি ফারুক।
কাদের খানের গাড়ি চালক আবদুল হান্নান হত্যাকাণ্ডে কিলারদের পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করেন। হত্যাকাণ্ডে তার ভাগ্নে কাম ও বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহীন মিয়া ও রাসেদুল ইসলাম ওরফে মেহেদী হাসানসহ চারজন অংশ নেয় বলে ডিআইজি জানান। এর মধ্যে রানা নামে একজন পলাতক রয়েছে।
কাদের খান এক বছর ধরে সাংসদ লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চারজনকে একটি গুদামে ছয় মাস ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহম্মেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া লিটনের স্ত্রী সৈয়দ খুরশিদ জাহান স্মৃতি, বোন তাহমিদা বুলবুল কাকলীসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. আতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত ১ ডিসেম্বর গভীর রাতে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের ধোপাডাঙ্গার নয়া বাজার এলাকায় একটি মোবাইল ছিনতাই ঘটনার উল্লেখ করে ফারুক বলেন, ওই মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের সময় ছিনতাইকারীরা ঘটনাস্থলে ছয়টি গুলিসহ একটি ম্যাগজিন ফেলে যায়। এর সূত্রে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ কাদের খানকে তার লাইসেন্স করা পিস্তল ও গুলি থানায় জমা দিতে বলে।
“কাদের খান মোট চল্লিশ রাউন্ড গুলির মধ্যে মাত্র ১০ রাউন্ড থানায় জমা দেন। বাকি গুলির কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।
“এছাড়া লিটন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুলির সাথে তার পিস্তলের গুলির মিল পাওয়া য়ায়। ফলে ওই ছিতনাইকারীদের খোঁজা শুরু হয়। বের হতে থাকে লিটন হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য।”
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার ভোর রাতে জেলা শহরের ব্রিজ রোড় এলাকা থেকে ওই ছিনতাইকাজে অংশ নেওয়া কর্নেল কাদেরের দূর সস্পর্কের ভাগ্নে ও তার বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহীন মিয়া (২৩), গৃহকর্মী রাসেদুল ইসলাম ওরফে মেহেদী হাসান (২২) এবং গাড়ি চালক আব্দুল হান্নানকে (২৭) আটক করা হয়।
ওসি আতিয়ার বলেন, কাদের এ পর্যন্ত কিলারদেরকে তিন লাখ টাকা দিয়েছেন এবং এমপি হলে আরও অনেক কিছু করে দেওয়ার প্রলোভন দেখান বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডা. কাদের খানের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খানপাড়া গ্রামে। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি সুন্দরগঞ্জের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/নাজমুল