শতবর্ষে পা দিল কালের সাক্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত পাবনার ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ আজ শতবর্ষে পা রাখছে। পদ্মা নদীর ওপরস্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি ১৯১৫ সালের ৪ঠা মার্চ উদ্বোধন করা হয়, যা আজ শত বছরের সাক্ষ্য বহন করছে।
উদ্বোধক লর্ড হার্ডিঞ্জ এর নামানুসারেই ব্রিজটির নামকরণ করা হয় ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’। পাবনার পাকশি ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ঘাটের সংযোগ স্থলে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণে ঠিকাদার ছিল বিখ্যাত বেইনস ওয়ালটি অ্যান্ড ক্রিক।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে সেতুটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে হার্ডিঞ্জ সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়।
১৮৮৯ সালে অবিভক্ত ভারত সরকার রেল যোগাযোগ সহজ ও দ্রুত করতে পদ্মা নদীর উপর একটি রেল সেতু তৈরির প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯০২ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত বিস্তারিত প্রকল্প প্রণয়ন করে রেল সেতু নির্মাণের মূল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প প্রণয়ন করেন স্যার ফন্ডিস স্প্রিং।
প্রকল্পটির মূল নকশা প্রণয়ন করেন প্রধান প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেলস। ১৯০৮ সালে রেল সেতু নির্মাণের মঞ্জুরি লাভ করার পর প্রধান ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেলস সেতু নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯০৯ সালে পদ্মা নদীর উপর দিয়ে সার্ভে শুরু করা হয়। ১৯১০-১১ সালে পদ্মার দুই তীরে সেতু রক্ষা বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রথম কাজ শুরু হয়। ১৯১২ সালে সেতু রক্ষা বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়। বাঁধ নির্মাণে ১৬ কোটি ঘনফুট মাটি ব্যবহার করা হয়।
পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশল কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯০৯ সালের প্রথম ভাগে প্রাথমিক জরিপ, জমি অধিগ্রহণ ও প্রয়োজনীয় পাথরাদি সংগ্রহের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম রেল সেতুগুলোর অন্যতম হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে তা শেষ হয়েছিল ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারি ব্রিজের ওপর দিয়ে মালগাড়ি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি আপ মালগাড়ির চলাচল শুরু হয়। এর পর ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ কর্তৃক আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে ব্রিজের ওপর দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি বা প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয়। পরে তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণে ২৪ হাজার শ্রমিক প্রায় ৫ বছর একটানা কাজ করে। এই ব্রিজ নির্মাণে তৎকালে ব্যয় হয়েছিল ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৮১ কিলোমিটার। এই সেতু নির্মাণে ৩০ হাজার টন ইস্পাত ব্যবহৃত হয়েছে।
ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজের শত বছরপূর্তির দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ঈশ্বরদী ও পাকশীতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ব্রিজের পাদদেশে মঞ্চ নির্মাণ করে সেখানে বিশাল আয়োজনে দিনভর নানা আনন্দ-আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্রিজের পাদদেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শতবর্ষের কেক কাটা, উদ্বোধনী সংগীত ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ব্রিজের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে উদযাপন কমিটি। এসব আয়োজনের জন্য গঠিত প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, দুপুরে কেক কেটে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হবে। পরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজকে ঘিরে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উদীচী, খেলাঘর ও স্পন্দন সাউন্ড সিস্টেমের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।
স্থানীয় নাগরিকদের উদ্যোগে রেলওয়ে সেতুর শতবর্ষপূর্তিতে এসব আয়োজন করা হলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টির প্রতি তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম জানান, দিবসটি উদযাপন করার জন্য কোনো আয়োজন করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি।
প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ