জাবি প্রতিনিধি
‘শিক্ষকদের আবার কিসের রাজনীতি?! তারা দল করবে কেন? অতীতে এমনটা ছিল না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। এটা হওয়া উচিত নয়।’ বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক জাকারিয়া চৌধুরী।
শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদালয় সাংবাদিক সমিতি (জাবিসাস) কার্যালয় পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন। তিনি একাধারে ভাষা সৈনিক, মানবকণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক ।
সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে বসে তিনি ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং তৎকালীন রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন।
ভাষা আন্দোলনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ছিল আপামর ছাত্র-জনতার আন্দোলন। দল-মত নির্বিশেষে আমরা সবাই এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি।’
নিজেকে মার্কসবাদী পরিচয় দিয়ে প্রবীণ এই ভাষা সৈনিক বলেন, ‘ভিন্ন মতাদর্শের হয়েও আমারা দেশের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করেছি। ভিন্ন মতের সবাই আমরা মধুর ক্যান্টিনে একসাথে বসেছি, আবার তর্ক-বিতর্ক করেছি নিজ নিজ মতাদর্শের পক্ষে। কিন্তু কখনো নোংরামিতে জড়াইনি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থাকে হতাশাজনক অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় শিক্ষকদেরকে আমরা আদর্শ হিসেবে দেখতে পেতাম। তারা অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। আর শিক্ষকরা কোন রাজনৈতিক দলের বা মতের হবে এটাতো কল্পনাই করা যেত না।’
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলেও আওয়ামীলীগ-বিএনপির লোকজন পরস্পরের মুখ দেখেন না। দেখা হলেও বিপরীত দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। কী আশ্চর্য্য! আমাদের সময় এধরণের বিভাজন ছিলনা।’
এখন এই বিভজানের জন্য স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতিকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি এখন অর্থ উপাজর্নের মাধ্যম হয়ে গেছে। কিš‘ আগে এটা ছিল শুধুই মানব সেবার বিষয়।’
চিকিৎসা পেশা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররাও এখন ব্যবসা করছেন। ইউনাইটেড, অ্যাপলো অথবা বিদেশের কোন হাসপাতালে যান- দেখবেন চুপচাপ পরিবেশ। আর ডাক্তারদের কাজও এখন হয়েছে মেশিনে। ডাক্তাররা শুধু প্রেসক্রিপশন করেন। অথচ ফি নেন অনেক বেশি।’
বর্তমান তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে উপস্থিত সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের তিনি বলেন, ‘এখন সততা জিনিসটির বড়ই অভাব। তোমরা ভাল সাংবাদিক হবে, কারও পোষ্য সাংবাদিক হবে না। সাহসের সাথে কাজ করবে, দেশের স্বার্থে। তাহলেই দেশটা আর এগিয়ে যাবে।’
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদেরকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং এর ফলে অনেক নাগরিক সুবিধাও বেড়েছে- যা পাকিস্তান আমলে সম্ভব ছিলনা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপিস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বেলাল হোসাইন রাহাত, সাধারণ সম্পাদক মওদুদ আহম্মেদ সুজন, মানবকণ্ঠের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. সাইফ উদ্দিন আবির, বণিক বার্তার প্রতিনিধি মো. দিদার হোসেনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরা।
প্রতিক্ষণ/ এডি/জেডএমলি