সন্তান কি আপনাকে অন্ধভাবে অনুকরণ করছে?

প্রকাশঃ এপ্রিল ৩০, ২০১৭ সময়ঃ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:১৯ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

ফারিয়া(ছদ্মনাম)।  বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ব্যস্ত বাবা মেয়েকে সময় দিতে পারেন না একটুও। তবে চোখে পড়লে সন্তানের ভুলগুলো কঠোরভাবে সংশোধন করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য ফারিয়ার খুব রাগ বাবার ওপর। সে বুঝতে পারে না; বাবা কেন তাকে এভাবে বকা দেন। মা-ই হল তার সব। মা যখন যার সাথে যেভাবে যে আচরণ করে কিংবা বলে; ফারিয়া ঠিক সেরকমভাবে অন্যদের সাথে বলার ও করার চেষ্টা করে। রত্না(ফারিয়ার মা)জানে না মেয়ে তার প্রতিটি পদক্ষেপ এভাবে অনুকরণ করছে। মেয়েকে কখনও সে ভালো-মন্দের পার্থক্যটিই বুঝিয়ে দেয়নি। অবশ্য রত্নার মায়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক একইরকমভাবে সত্য। আজ ফারিয়ারও একটি সন্তান আছে। সে তাকে কখনও কিছু শেখাতে যায় না; কারণ মায়ের কাছ থেকে সে এটাই শিখেছে। হয়তো ফারিয়া নিজেই জানে না; কখন সে মায়ের সবকিছু শিখে নিল।  

বাবা-মায়ের আচার-আচরণের উপর নির্ভর করেই সন্তান নিজের ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণ করে। অনেকটা নিজের অজান্তেই এ দুই ব্যক্তির(মা-বাবা) যেকোনো একজনের সবকিছু অনুকরণ করে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে। যা হয়তো সে সন্তান সচেতনভাবে নিজেও বলতে পারে না। তবে কিছুকিছু ক্ষেত্রে বাহ্যিকভাবে অনেককে দেখে মনে হয়; সে তার বাবা-মায়ের মতো মোটেও নয়। এরপরও একটা কথা থেকেই যায়। খুব ভালোভাবে এদেরও লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোনো না কোনো কাজে তারাও পরিবারে দেখা আচার-আচরণগুলোকেই হুবহু অনুকরণ করছে। অর্থাৎ, এ থেকে কোনো সন্তানের মুক্তি নেই। এটাই সত্য যে, পরিবারকে-পরিবারের স্মৃতিকে আরেক প্রজন্ম জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বয়ে বেড়াবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেলে বাবাকে, মেয়ে মায়ের সবকিছু নিজের নতুন জীবনের অংশ করে নেয় তাদের অজান্তে।

তাই বাবা-মাকে বলছি, আপনারা সন্তানকে এমন কিছু দেখাবেন না, যা তার জীবনকেও আপনাদের মতো করে ধ্বংস করে দেবে। সন্তানের জন্য হলেও নিজেদের স্বভাবগুলোকে খারাপ থেকে ভালোর দিকে নিয়ে আসুন। তার সামনে সর্বোচ্চ সুন্দর পরিবারের উদাহরণ তুলে ধরুন। তাহলে সে তার পরবর্তী জীবনে আদর্শ অনুকরণ হিসেবে আপনাদেরকেই বেছে নেবে। খারাপ সংস্পর্শে যাওয়ার আগে আপনাদের কথা ভেবে দূরে থাকবে। মনে রাখবেন, আপনাদের অবহেলা, সাংসারিক মনোমালিন্য, একজনের প্রতি অন্যজনের অসম্মানবোধ, মানবিকতার অভাব, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকতে না পারার আফসোস দেখে বড় হওয়া সন্তানটি কী করে এগিয়ে যাবে ঘর থেকে বাহিরে। কারণ আপনারাতো তাকে সে শিক্ষাই দিলেন না।

খেতে দিলেন আর পড়তে দিলেন; সেটাই যদি সবকিছু হতো তাহলে এত কথা বলার আর প্রয়োজন পড়তো না। এখনও সময় আছে, আপনার সন্তানকে সময় দিন। সত্য, ন্যায়, বাস্তবতা, সহ্যক্ষমতা, সক্ষমতা; এ শব্দগুলোর সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন।

জীবন কোনো একতরফা আরাম-আয়েশের জায়গা নয়। এখানে বেঁচে থাকতে হলে প্রতি মুহূর্তে সংগ্রাম করতে হয়; মিথ্যা থেকে দূরে থাকার জন্য, সত্যকে সত্য হিসেবে চেনার জন্য, খামখেয়ালিপনা এড়িয়ে বাস্তবকে জানার জন্য, সমস্ত ভুল থেকে নিরাপদে নিজেকে সরিয়ে রেখে সুন্দর, স্বচ্ছ, নির্মল জীবন গড়ে তোলার জন্য; অনেক কষ্ট করতে হয়। এই সত্যটা তাকে একটু একটু করে শিখিয়ে দিন, দেখিয়ে দিন এবং গল্পের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিন। সবসময় সবকিছু মুখে বলতে হয় না; কাজ দিয়েও নীরবে থেকে অনেক কথা বলা যায়।

আপনার সন্তান আপনাকে অন্ধভাবে অনুকরণ করছে; সে খবর কি রাখেন? আপনি কি তার অনুকরণের যোগ্য? যদি না হয়ে থাকেন; তাহলে এখনই সব অযোগ্যতাকে পেছনে ফেলে যোগ্য হওয়ার চেষ্টা করুন। অন্তত সে দেখতে পাবে জীবনে সৎভাবে বেঁচে থাকার জন্য আপনার কী অসহ্য লড়াই। এটাই তাকে ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার শক্তি দেবে।

 

বি:দ্র:  প্রতিক্ষণের যেকোনো লেখা অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না। এটি কপি রাইট আইনে দন্ডনীয় অপরাধ।

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G