সবার আবেগ আজ নিলামে উঠেছে!!

প্রকাশঃ অক্টোবর ২০, ২০১৫ সময়ঃ ১:৫১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৫০ অপরাহ্ণ

sharminকোন  সমুদ্রে আমরা এসে পড়লাম! কোনো কূল নাই, কোনো কিনার নাই ; নাই দরিয়ার মাঝি! চারদিকে শুধু নাই নাই রব। আজ আমরা এমন এক ছলনার জালে জড়িয়ে পড়েছি ছোট-বড়-বৃদ্ধ সবাই। কারো নিস্তার নেই এখান থেকে। বলছি ‘আবেগের অপব্যবহারের কথা’।

মাদের সবার আবেগ আজ নিলামে উঠেছে! যখন যে যেভাবে পারছে আমাদের আবেগ নিয়ে গভীর এক খেলা খেলছে। কেউ তা বুঝি আবার কেউ বুঝেও বুঝিনা। অবশ্য আরেকটি দল আছে, যারা সত্যিই বোঝেনা।এ খেলার মূল খেলোয়াড় কে?

কারা আমাদের আবেগকে প্রতিমুহূর্তে ব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থে? আমার চোখে সবচেয়ে বড় অপরাধী হল বর্তমান ‘মিডিয়া’ !! আজ মিডিয়ার সমস্ত মাধ্যমই এ কাজ করছে বেশ জোরেসোরে। তাঁদের অভিনয় এমুহূর্তে দুনিয়ার সবার কাছে বেশ সুস্বাদু।

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকাটির কথা আর কী বলব!! এদের ভাওতাবাজি দেশপ্রেমের খেলাটা দেশের মানুষ যত তাড়াতাড়ি ধরতে পারবে ততই নিজেদের মঙ্গল! ভলোবাসা শব্দটি এতো সস্তা নয় যে, যা খুশি তা করে বেড়াবেন। যেখানে পুরো পৃথিবীর মানুষগুলো এই একটা জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর সেটা নিয়ে করছেন ব্যবসা! ধর্ম ব্যবসা নিয়েতো অনেক কথা শুনি; এবার শুনুন ‘আবগের ব্যবসার কথা’। এ জাল থেকে বেরোনো এতো সহজ নয়। যেখানে দেশের সব মেধাবী-সম্মানীয় মানুষগুলো জড়িয়ে গেছে; সেখানে আমরাতো কোনছাড়!

দু:খজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী ব্যক্তিগুলো এখন এক একজন পণ্যে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। ডাক দিলেই তাঁরা পণ্য হওয়ার জন্য নিজেরায় হুড়হুড় করে ছুটে যাচ্ছে। সেই অতিব জনগুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাটির মহাসমুদ্রসম এই দেশপ্রেমের সাথে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন আমাদের রথী-মহারথীরাও। তাঁদের এত দেশপ্রেম যে কোথায় রাখি!! ঝাপিতেও হবে না জায়গা আবার আমাদের এ ছোট্ট একখানা হৃদয় তাতেও ভরবে না এত দেশপ্রেমের বুলি। তবে কোথায় রাখি বলুনতো? মাথায় রাখাটা অত্যধিক বাঞ্চনীয়, কী বলেন ঠিক বললাম না?

দয়া করে আমার ওপর চটবেন না। ঠিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়, এটাতো জানেন বেশ ভালোবাবেই; তাই না? তাহলে প্রস্তুত থাকুন; সেসকল ভন্ড দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকারীরা, তাদের লেজ ধরে উপর থেকে আরও উপরে উঠার স্বপ্ন দেখছেন যারা সেই অতি মেধাবী স্বপ্নবাজরা আর সবশেষে অবোধ-নিস্পাপ জনস্রোত। কারণ পাটকেল খাওয়ার সময় এসে গেছে। কয় যুগ আর এ আবেগীয় ব্যবসা চালিয়ে যাবেন? নষ্ট শশার দল! মনে রাখবেন, ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার সময় হয়ে গেছে। সাবধান, অতি পান্ডিত্য জাহিরকারীগণ ; আবেগ নিয়ে আর খেলবেন না। আবেগের ছোবল বড় ভয়ঙ্কর। তা সহ্য করতে পারবেনতো?

maediaমাদের নিশ্চন্ত নির্ভরতার সুযোগে, হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালার মতো আজ আমাদের আবেগকে নিয়ে আপনারা এক নিপুণ পুতুলখেলায় মেতেছেন। সে খেলার শেষ কোথায় আমরা জানিনা। সাপের খোলসের মতো আপনাদেরও উদার-অসাম্প্রদায়িক নামের যে খোলসটা আছে সেটা পড়ে; বাঘ-ভালুক-শকুন আর পেঁচার রূপে আমাদের ওপর নিজেদের ফরমালিন মিশ্রিত চিন্তাধারা চাপিয়ে দিচ্ছেন।

কী আর করা, কোমলমতি শিশুদের মতো নরম কদমাক্ত আবেগে আমরাও গোগ্রাসে আপনাদের দেখানো রিপোর্ট-অনুষ্ঠান-হেনতেন ইত্যাদি মজাদার-লোভনীয় আর বিশুদ্ধ বিশ্বাসে খেয়ে নিচ্ছি। আর ভাবছি, আহা কী মানুষ; আর কী তার…….। শূন্যস্থানে দয়া করে যে যার মতো বিষয় বসিয়ে দিবসে-নীশিতে মনের হরষে মিলিয়ে নেবেন।

তবে এতো পোকাধরা আমের মধ্যেও কিন্তু রাজশাহীর আমের কথাতো আলাদা করে বলতেই হয়। তাই না? ঠিক তেমনি, এই ঘুনেধরা মিডিয়া জগতে আসল হীরার দেখাও কদাচিৎ মেলে বৈকি। তারাই এখন আমাদের সবেধন নীলমণি।

 

শেষ করছি প্রমথ চৌধুরীর কথা দিয়ে, ‍‍“সমাজ শুধু একজনকে আর পাঁচজনের মতো হতে বলে। ভুলেও কখনো আর পাঁচজনকে একজনের মতো হতে বলে না। তাই আমরা এই শিক্ষাই পাই – ‘অপরের মতো হও’ কিন্তু ‘নিজের মতো হয়ো না।

 

 

শারমিন আকতার
নির্বাহী সম্পাদক, প্রতিক্ষণ ডট কম
[email protected]

এই লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজের। এখানে প্রতিক্ষণ ডট কমের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G