সব থাকতেও বৃদ্ধাশ্রমে!
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
সায়রা বেওয়া! বয়স সত্তর বা তার কিছুটা বেশী।জন্ম ভারতের বিহারে। কিন্তু ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর ভারতের বিহার থেকে স্ব-পরিবারে চলে আসেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে, বসবাস শুরু করেন সৈয়দপুরের কিস্তানীজ ক্যাম্পে। বাবা ছিলেন দিনমজুর, মা গৃহিণী।যখন সায়রা বেওয়ার বয়স ছিল ১০-১২ তখন সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সায়রা বেওয়ার মা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ইট ভাঙ্গার কাজ করতেন।
মাকে সাহায্য করতে তিনিও মায়ের সাথে ইট ভাংতেন। হাতুড়ি দিয়ে প্রত্যেকদিন সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইট ভেঙ্গে দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টার মাঝে কেটে গেলো অনেকদিন।
একদিন বিয়ে হয় সায়রা বেওয়ার, পর্যায়ক্রমে কোলে আসে ৫টি ফুটফুটে সন্তান।সায়রা বেওয়ার স্বামীর আর্থিক সচ্ছলতা থাকায় ইটের মধ্যে হাতুড়ির আঘাত বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু এরই মাঝে সু-চিকিৎসার অভাবে তার দুই সন্তান মারা যায়। ঠিক তার বছর পাঁচেক পর সায়রার স্বামীও চলে যায় না ফেরার দেশে।
কষ্টের দিন যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ।আবার সায়রা বেওয়ার সংগ্রামী জীবনের শুরু, অন্য তিনটি সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে সায়রা আবার হাতে নিলো হাতুড়ি।এভাবেই কষ্টের মাঝে তিল তিল করে বড় করতে থাকেন বুকের ধন তিন ছেলেকে। একসময় ছেলেরাও বড় হয়, উপার্জন করতে শেখে। সায়রা বেওয়া মনে মনে ছেলেদের নিয়ে স্বপ্ন দেখে। তিনি মনে করেন এই বুঝি তার কষ্টের দিন শেষ হলো। কিন্তু না, তার কষ্ট আর শেষ হয় না!
তিনি যাদের এত কষ্ট করে মানুষ করলেন আজ তারা বড় হয়েছে, ভালো চাকুরি করছে , বিয়ে করে সংসার করছে।কিন্তু সে সংসারে ঠাঁই পাননি সায়রা বেওয়া! জীবনের পড়ন্ত বেলাতে এসে তার শেষ ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম।
শেষ বয়সে একটু প্রশান্তি, আনন্দ-ভালবাসায় সময় কাটাতে চান তারা। কিন্তু সে সৌভাগ্য হয় না অনেকেরই। নিরবে-নিভৃতে চোখের জলে সময় কাটে তাদের।
শয্যাশায়ী অবস্থায় প্রিয় একটি হাত এক টুকরো রুটি মুখে তুলে দেবে এমন প্রত্যাশা ছিল যাদের, তারা আজ স্মৃতিভারে আক্রান্ত। সব থাকতেও বৃদ্ধাশ্রমের এক প্রান্তে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
বৃদ্ধাশ্রমে শুধু সায়রা বেওয়ারাই নয়, তার মতো অনেক বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাই দু মুঠো খাবার আর মাথা গোঁজার ঠাই পেতে বেছে নিয়েছে এই আশ্রম।