সম্ভাবনাময় পরিবেশ বান্ধব বায়ো ফুয়েল
জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য যখন দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে ঠিক সেই সময় পাম, জাত্রফা গাছ থেকে বায়োফুয়েল তৈরির প্রযুক্তি দেশের মানুষকে আশাবাদী করে তুলছে। দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় এ গাছ চাষ উপযুক্ত হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বায়োফুয়েল উৎপাদন দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে বলে ধারনা দেশীয় বিজ্ঞানীদের।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও সীমাবদ্ধ জ্বালানির নতুন বিকল্প উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা ব্যস্ত। সারাবিশ্বে ব্যবহৃত খনিজ জ্বালানি তেলের মজুদ একটা সময়ে এসে নিঃশেষ হয়ে যাবে। ফুয়েল সেল, সোলার সেল, হাইড্রোজেনকে বিদ্যুতের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। জ্বালানির এসব বিকল্প এতটাই ব্যয়বহুল যে তা সাধারণের নাগালের বাইরে।
খনিজ ফুয়েলের সাথে তুলনা করলে বায়োফুয়েল যথেষ্ট পরিবেশবান্ধব। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়োফুয়েল ব্যবহারে খনিজ ফুয়েলের চেয়ে ৭৮ শতাংশ কম কার্বন, কার্বন চক্রে প্রবেশ করে, ৩৫শতাংশ কম কার্বন মনোক্রাইড তৈরি করে, ৩২ শতাংশ কম ক্ষতিকর কণা নির্গত করে, ৮ শতাংশ কম সালফার ডাই অক্সাইড তৈরি করে। ৩৭ শতাংশ কম হাইড্রোকার্বন তৈরি করে এবং ৭৯ শতাংশ কম পরিমাণ পানি দূষণ ঘটায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট (ব্রি), গাজীপুরে পাম ওয়েল দিয়ে শ্যালো পাম্প চালানোর উপযোগিতার উপর এক গবেষণা চালানো হয়। পাম ওয়েল ও ডিজেল দিয়ে কোনরূপ বাধা ছাড়াই শ্যালো পাম্প চালু করে পর্যায়ক্রমে অর্ধঘণ্টা করে চালানো হয়। এতে ব্যয় হয় ২৪০ ও ২৭০ মি.লি. পাম ওয়েল ও ডিজেল। ডিজেল দিয়ে চালানোর পর নির্গত ধোয়া কালো ও কটু ঝাঝঁ যুক্ত হয়। কিন্তু পাম ওয়েল দিয়ে চালানোর পর নির্গত ধোয়ায় কোন প্রকার রং ও কটু ঝাঝঁ পাওয়া যায় নি। পাম ওয়েল দিয়ে শ্যালো পাম্প চালানোয় এর যন্ত্রাংশে ক্ষয় জনিত কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হয় নি।এ ফুয়েল ব্যবহারে ইঞ্জিনে ধোঁয়া কম হয় এবং টেকেও বেশি দিন। ফসিল ফুয়েলের মতো এটি বায়ু দূষণকারী নয় বরং পরিবেশবান্ধব।
একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে বিস্ময়কর ও আলোচিত গাছ পাম, জাত্রফা থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে বায়ো ফুয়েল। বর্তমানে ভারত, থাইল্যান্ড, মাদাগাস্কার, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে বাণিজ্যিকভাবে জাত্রফা, পাম গাছ চাষ করা হচ্ছে। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রপ রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য সেমি এরিড ট্রপিকস(ইকরিস্যাট) জাত্রফা, পাম গাছ থেকে বায়োডিজেল উৎপাদনের বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এক হেক্টর জমিতে জাত্রফা চাষের মাধ্যমে বছরে আড়াই হাজার লিটার বায়োডিজেল উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি লিটার বায়োডিজেল উৎপাদন খরচ পড়ে ২০ থেকে ২২ টাকা। প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে বায়োডিজেল উন্নত করা যায় এবং ডিজেল ইঞ্জিনে সরাসরি ব্যবহার করা যায়।
উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত তেলকে ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যাবে, এ ধারণা সভ্য সমাজের জানা ছিল না। বিস্ময়কর হলেও সত্য, চমকপ্রদ এ প্রযুক্তিটাই জানত পাহাড় ও বন-জঙ্গলে বসবাসকারী আদিবাসীরা। ভারত ও আফ্রিকার এসব আদিবাসী দীর্ঘকাল আগে থেকেই হারিকেন ও কুপিবাতিতে এ ধরনের গাছের তেল ব্যবহারের করে আসছে। সম্প্রতি তাদের ফুয়েল প্রযুক্তির সাথে সভ্য সমাজের বিজ্ঞানীরা পরিচিত হয়ে অবাক ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি কিছু দেশ চমকপ্রদ এ ফুয়েল প্রযুক্তি লুফেও নিয়েছে।