সহিংসতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ
জেলা প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাস, সহিংসতা ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে সরকারকে প্রয়োজন হলে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
মঙ্গলবার দুপুরে মাগুরা আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে ‘সহিংসতা ও মানবাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনীতির নামে একটি গোষ্ঠী সন্ত্রাস ও সহিংসতা চালিয়ে দেশের সাধারণ মানুষসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নারী-শিশু ও খেটে খাওয়া দিনমজুরদের স্বাভাবিকভাবে চলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে নাগরিকরা শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেশের নাগরিকদের প্রতি ওই গোষ্ঠীর নূন্যতম মমত্ববোধ থাকলে রাজনীতির নামে এ সহিংসতা তারা চালাতে পারতেন না।
নাশকতা বন্ধ না করলে সংলাপ হতে পারেনা বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগে নাশকতা বন্ধ, পরে সংলাপ। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারীদের কাছে রাষ্ট্র পরাজিত হতে পারে না। যে কারণে নাশকতাকাতা বন্ধ না করে সংলাপ হলে সন্ত্রাসীদের কাছে মাথা নত করা হবে।’
পেট্রোলবোমা মেরে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যা চলছে তা রাজনীতির নামে ব্যভিচার। রাষ্ট্রের পাশাপাশি এ হুমকিকে মোকাবেলায় দেশে সুস্থ চিন্তার মানুষকে একত্রিত হতে হবে। জনগনকে এ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ড. মিজান বলেন, ‘আশাকরি সরকার দ্রুত এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার সম্পন্ন করবে। তা না হলে এ দেশে সুস্থ চিন্তা বাধাগ্রস্থ হবে।’
মিজানুর রহামন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘একটি জাতীয় নির্বাচনে প্রায় ৬’শ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মাত্র ১ বছর আগে সে ব্যায় হয়েছে। এভাবে প্রতিবছর নির্বাচন কাজে এতো টাকা অপচয় করার মত সামর্থ বাংলাদেশের আছে কিনা তা ভাবতে হবে।’
পরীক্ষায় বাধা দিয়ে রাজনীতির নামে হরতাল অবরোধের অধিকার কারো নেই উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বাধা, ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী ও দরিদ্র শ্রমিকদের স্বাভাবিক আয়-উপার্জন বন্ধ করে দিয়ে রাজনীতির নামে হরতাল অবরোধের অধিকার কারো নেই। সেইসঙ্গে দেশে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সাথে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগসূত্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। একে প্রতিরোধ করতে হবে।’
রাষ্ট্রের সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘দেশব্যাপী নাশকতা প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে রাষ্ট্রের সহযোগিতা করতে হবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পৌঁছাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যেখানে মানববাধিকার সুপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে সেখানে আজ দেশের চলমান সহিংসতা বৃদ্ধিতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ায় সহিংসতা প্রতিরোধে আমাদের সভা-সেমিনার করতে হচ্ছে।’
এ সময় তিনি নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধ করতে গিয়ে আইনের বরখেলাপ, আটক বাণিজ্য, বেআইনি ভাবে নির্যাতন করা যাবে না বলে উল্লেখ করে এসব ব্যাপারে রাষ্ট্রকে সতর্ক থাকার আহবান জানান।
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান এর আগে মাগুরা সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, সহিংসতা ও চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনায় দেশে মুক্ত চিন্তার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার দ্রুত বিচার ছাড়াও সরকারের উচিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।
এ সময় তিনি বিভিন্ন হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন এবং হরতাল অবরোধের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় ভান্ডার থেকে মাগুরায় ওষুধ সরবরাহ অনিশ্চিত হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, আন্দোলনের নামে যেসব ঘটনা ঘটছে তা সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাসবাদ। যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে, সেই সন্ত্রাসীদের সাথে কোন সংলাপ করার অর্থ হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের কাছে মাথা নত করা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পার্টনার্স ইন ডেভেলপমেন্ট (পিআইডি) আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন- পিআইডির সভাপতি রফিকুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক আবু জায়েদ মোহাম্মদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কালা চাঁদ সিংহ, আনসার জেলা কমান্ডার কামরুজ্জামান, মহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রতিক্ষণ /এডি/রাহাত