সাঈদ হত্যায় পুলিশ কনস্টেবলের স্বীকারোক্তি

প্রকাশঃ মার্চ ১৫, ২০১৫ সময়ঃ ৯:১৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

জেলা প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

saidসিলেটের স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে (৯) অপহরণের পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান।

রোববার বিকেলে সিলেট মহানগর হাকিম আদালত-১ এর বিচারক শাহেদুল করিমের কাছে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।

বুধবার স্কুল থেকে ফেরার পথে সাঈদকে অপহরণ করা হয়েছিলো।

এরপর এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শনিবার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমানকে আটক করা হয়।

পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঐদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট নগরীর কুমারপাড়া ঝর্ণার পাড় এলাকার ওই কনস্টেবলের বাসা থেকেই নিহত স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাঈদ নগরীর রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ও ওই এলাকার দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নং বাসার মতিন মিয়ার ছেলে।

এ ঘটনায় র‌্যাবের এক সোর্স ও ওলামা লীগের এক নেতাকেও আটক করা হয়েছে।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুলিশ কনস্টেবল বলেন, মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই সাঈদকে অপহরণ করা হয়েছিল। এ কাজে র‌্যাবের সোর্স গেদা মিয়া ও জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিবও জড়িত। অপহরণের পর সাঈদ তাদের চিনে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয়।

আদালতে এবাদুলের স্বীকারোক্তি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. রহমত উল্লাহ।

বুধবার সাঈদকে অপহরণের পর তার বাবা ও মামার কাছে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ না দিলে সাঈদকে হত্যা করা হবেও তখন হুমকি দেয়া হয়েছিল। এরপর সাঈদের বাবা ও মামা কোতোয়ালি থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন।

সাঈদের মামা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘অপহরণকারীরা ৫ লাখ টাকা দাবি করলে আমরা বলি এতো টাকা দেয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। পরে তারা ২ লাখ টাকা দিতে বলে। টাকা নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার শরীফে যেতে বলা হয়। আমরা টাকা নিয়ে সেখানে গেলে ফোন করে আমাদের বাইশটিলা এলাকায় যেতে বলা হয়।

সেখানে যাওয়ার পর তারা ফোন করে বলে, আমরা কেন ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েছি। অপহরণকারীরা সাঈদকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে ফোন রেখে দেয়।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার স্কুল থেকে ফেরার পথে আবু সাঈদকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর সাঈদের বাবা ও মামার কাছে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। টাকা না দিলে সাঈদকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয় তারা। এরপর শিশুটির স্বজনরা এসএমপির কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (নং-৫৬১) করেন।

এদিকে কোতয়ালী থানা পুলিশ সাঈদকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে। যে মোবাইল দিয়ে সাঈদের বাবা ও মামার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, সেই মোবাইল ট্র্যাকিং করে পুলিশ। একপর্যায়ে জানতে পারে নাম্বারটি এসএমপির বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুলের।

গত শনিবার কোতয়ালী থানায় কনস্টেবল এবাদুলকে ডেকে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে কনস্টেবল এবাদুল প্রথমে ঘটনাটি অস্বীকার করলেও পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং সাঈদকে হত্যার কথা জানায়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসএমপির কোতয়ালী থানার এসআই ফয়াজ আহমদ বলেন, কনস্টেবল এবাদুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় দিকে নগরীর ঝেরঝেরিপাড়ার সবুজ ৩৭নং বাসা থেকে সাঈদের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়া এবাদুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নগরীর কোর্ট পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকা থেকে র‌্যাবের সোর্স গেদা মিয়াকে এবং বন্দরবাজার থেকে জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রাকিবকে আটক করা হয়।

এদিকে কোতয়ালী থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, রবিবার সকালে নিহতের বাবা মতিন মিয়া বাদী হয়ে এসএমপির কনস্টেবল এবাদুল, নুরুল ইসলাম রাকিব ও গেদা মিয়ার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনকে আসামি করে কোতয়ালী থানায় মামলা করেছেন।

প্রতিক্ষণ /এডি/বেলায়েত

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G