সার্টিফিকেট নেই, তারপরও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিরসরাইয়ের শ্যামল চন্দ্র দাস !
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রাতিষ্ঠানিক ডাক্তারী সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি কোনটাই নেই। অথচ তিনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার! সার্টিফিকেট ছাড়াই চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় শ্যামল চন্দ্র দাস বিশাল বড় ডাক্তার বনে রাজ্যত্ব খুলেছেন । মেডিসিন থেকে চর্ম, যৌন থেকে হৃদরোগ-সব রোগেরিই চিকিৎসা পাওয়া যায় তার কাছে। সনদ না থাকলে এই হাতুরে ডাক্তার উপজেলার বারইয়ারহাট পৌর বাজার এলাকায় রামগড় বাসষ্ট্যান্ড এর পাশে ‘নাহার’ নামের একটি ফার্মেসিতে চেম্বার খুলে রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসা দিয়ে ঐ দোকান থেকেই ঔষধ ক্রয়ে বাধ্য করান রোগীদের। ঔষুধের দাম কম রাখবেন বলে দেখান লোভনীয় অফার। ফার্মেসিতে শুধু চেম্বার খুলেই ক্ষান্ত হননি তিনি। মাঝে মধ্যে রোগীদের কাছে দেবদূত পরিচয় দিয়ে করেন ছোট-খাট অপারেশন। বনে যান সার্জন। অথচ দেখার কেউ যেন নেই!
এই ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে রোগীদের আরও বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত শনিবার সরেজমিনে এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে নাহার নামের ঐ ফার্মেসিতে। সরেজমিনে দেখা যায়, তিনিই এখানকার একমাত্র চিকিৎসক, যার কাছে সকল রোগের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। স্থানীয় প্রশাসনের চোখে ধুলা দিতে তার চেম্বারটি খুব বেশি সুজ্জিত বা আকর্ষণীয় করেননি।
তবে রোগী দেখে প্যাড এ লিখে দেন ওষুধ কিংবা বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার নাম। আবার সেগুলো কোথা থেকে করাবেন সেই প্রতিষ্ঠানের নামও বলেদেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) অ্যাক্ট অনুযায়ী, চিকিৎসক না হয়ে কেউ ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারবে না।
মেডিকেল ও ডেন্টাল বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদেরই কেবল এই অনুমোদন দেয় বিএমডিসি। একজন চিকিৎসক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কোন ডিগ্রি তো নেই অথচ শ্যামল দাসের ফার্মেসি সামনে নেমপ্লেট ও সাইনবোর্ড এবং প্যাডে লেখা মা ও শিশু রোগে বিশেষ অভিজ্ঞ ডাঃ শ্যামল চন্দ্র দাস সি.এম.এস; ডি.এম.এ; এম.সি.এইচ; ঢাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ বেশ কয়েকবছর ধরে নিজেকে বড় ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ২০০টাকা ভিজিটে প্রতিদিন ৩০-৫০জন করে রোগী দেখে আসছেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বনে গেছেন মস্তবড় ডাক্তার।
তবে তার এই ডাক্তার হওয়ার পিছনে স্থানীয়ভাবে কাজ করছে তারই মত মস্তবড় একটি দালাল চক্র। বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে এই প্রতিবেদক ছদ্মবেশে শ্যামলের কাছে শর্দি এবং কাশির চিকিৎসার জন্য গেলে তিনি প্রেসার মেপে বলেন আমার অতিরিক্ত প্রেসার যা ১৬০/১০০ যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতি, এ বলে তিনি আমাকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করেন।
এরপর ইসিজি, সিএক্সআর এবং লিপিড প্রোফাইল নামের তিনটা পরিক্ষা করে পরেরদিন দেখা করতে বলে প্রেস্ক্রিপশনে ৬টা ওষুধের নাম লিখে দেন।
অথচ একই সময় অন্যজায়গায় প্রেসার পরিমাপ করলে দেখাযায় ১৩০/৮০ যা একজন মানুষের জন্য স্বাভাবিক। এভাবে প্রতিনিয়ত মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছেন এই ভুয়া ডাক্তার। এবিষয়ে শ্যামল চন্দ্র দাসের সাথে কথা বললে তিনি ডাক্তার লিখতে পারেন না স্বীকার করে বলেন, তিনি ডিপ্লোমা এবং উপজেলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
তবে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন না বলে অস্বীকার করেছেন। প্রেস্ক্রিপশনে ওষুধ লিখে দিতে পারেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, উপজেলা থেকে বিশেষ প্রয়োজন হলে দিতে বলেছে। এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, কেউ অভিযোগ না করায় ভুয়া ডাক্তারের বিষয়ে অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু জেনেছি খুব দ্রুত অভিযান করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন জানান, বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখছি। এরপর ব্যবস্থা নিবো।
সূত্র : চট্টগ্রাম মিডিয়া