রাবি প্রতিনিধি:
ষাটের দশকে নির্মিত আবাসিক বাসা-বাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া ও সেই তুলনায় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন। গত কয়েক দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক আবাসিক বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক বাসা বরাদ্দের জন্য নতুন করে নোটিশ দিয়েও সাড়া মিলছে না বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভিসি, প্রো-ভিসির বাসভবনসহ শিক্ষক-অফিসারদের জন্য দ্বি-তলা, তিন তলা ও ৪ তলা মিলিয়ে প্রায় ৮৮টি ভবনে ‘এ’ ‘বি’ সি’ তিন ক্যাটাগরিতে ৩১৯টি বাসা আছে। এর মধ্যে ফিক্স রেন্টে ৬০টি, যা চার বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। অন্যদিকে ২৫৯টি বাসায় বেতনের উপর বাসা ভাড়া বাবদ সরকারী বরাদ্দের টাকা কেটে নেয়া হয়। এছাড়া সাধারণ ও সহায়ক কর্মচারীদের জন্য ১৩৮টি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে ৮৮টি ফিক্স রেন্টে ও ৫০টি বেতন কেটে নেয়া হয় হিসেবে।
বাড়ি ভাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম জানান, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সরকারি গেজেট অনুযায়ী বেতন স্কেলের ৮২৫০-৯৭০০ টাকা বেতনধারীদের ৫৫ শতাংশ, ৯৭০১-১৬০০০ টাকা পর্যন্ত ৫০ শতাংশ, ১৬০০১-৩৫৫০০ টাকা ৪৫ শতাংশ এবং ৩৫৫০১-তদূর্ধ বেতনধারীদের বেতনের ৪০ শতাংশ এই চারটি পর্যায়ে বাসা ভাড়া বাবদ পেয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বাসাতে থাকতে বেতনের গেজেট হিসাবে কোনো কোনো শিক্ষককে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া প্রদান করতে হয় বলে জানান তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক অধ্যাপক বেতনের চল্লিশ শতাংশ বাসা ভাড়া বাবদ পেয়ে থাকেন। সেই হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। যা রাজশাহীর মতো জায়গায় ব্যাপক ব্যয়বহুল। অথচ রাজশাহী শহরে এর চেয়ে কম দামে বাসা পাওয়া সম্ভব বলে জানান তাঁরা।
অবশ্যই সেই তুলনায় প্রভাষক, সেকশন অফিসার ও অন্য কর্মকর্তারা কম খরচে বাসায় থাকতে পারে। যার কারণে বাসা ছেড়ে যাওয়া অধিকাংশ শিক্ষকই সিনিয়র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবাসিক বাসা বাড়িতে থাকা এক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, আমাকে বাসা ভাড়া বাবদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ একই বিল্ডিংয়ে অন্য একজন কর্মকর্তাকে ৯ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এটা অসামঞ্জস্য বলে মনে করেন তিনি। প্রতিটি বাসার ভাড়া নির্ধারণ, আধুনিকায়ন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। অন্যথায় শিক্ষকদের ডিগনিটি নষ্ট হচ্ছে।
আবাসিক শিক্ষকদের অভিযোগ, ষাটের দশকে যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল সেভাবেই রয়ে গেছে আবাসিক বাসাগুলো। নষ্ট হয়ে গেছে পেইন্ট ও ফিটিংস। বাহির থেকে ভালো মনে হলেও ভবনগুলো পুরাতন হওয়ায় অনেক সময় ছাদ থেকে বালু, পলেস্তারা খসে পড়ে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, ওয়াশ রুমের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর দূর্গন্ধের কারণে রুমের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। এভাবে বসবাসে স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট হচ্ছে আবাসিক শিক্ষকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন মাসের ব্যবধানে প্রায় ৪০ জন শিক্ষক আবাসিক বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে প্রায় ৩৯টি বাসা। এদিকে এসব বাসায় শিক্ষকদের আবাসিকতা গ্রহণের উদ্দেশ্যে নোটিশ দিলেও তেমন একটা সাড়া পড়ছে না বলে জানান বাসা বরাদ্দ কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে বাসাগুলো সংস্কারের জন্য প্রশাসের কাছে দাবি করলেও কার্যকারী কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন একাধিক শিক্ষক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো.শহীদুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষকদের বাসাগুলোর অবস্থার প্রেক্ষিতে বাড়ি ভাড়া সম্পর্কে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। কিন্তু এখনও বিষয়টির সুরাহা পাওয়া যায়নি।’
ভাড়া যথার্থ দিয়েও সুবিধা না পাওয়ায় আবাসিক শিক্ষক প্রফেসর ইশতিয়াক হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বাসায় একজন শিক্ষক বা কর্মকর্তার যে ব্যয়, তার অর্ধেক ব্যয়ে রাজশাহীর সবচেয়ে বিলাসবহুল আবাসিক এলাকায় অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায়।’
বাসাগুলোর ভাড়ার অনুপাতে সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা বরাদ্দ কমিটির আহবায়ক জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর সাইফুল ইসলাম ফারুকী বলেন, ‘আবাসিক বাসাগুলোতে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে।’
প্রতিক্ষণ/এডি/সাই