সৌন্দর্যের সাগরকন্যা ‘মনপুরা’
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
মনপুরা দ্বীপ, এ যেন এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি ।চতুর্দিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজের সমারোহ।মনপুরা দেশের মানুষের কাছে যেমন আকর্ষণীয় ঠিক তেমনি বিদেশিদের কাছেও। হিমালয় থেকে নেমে আসা তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র বাহিত পলি দিয়ে মোহনার বুকে জেগে উঠেছে দ্বীপ জেলা ভোলা।
এ জেলার উৎপত্তির ইতিহাস যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও রয়েছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। বিশেষ করে এখানকার চরাঞ্চলের অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো, হরিণের ছোটাছুটি, নদীর বুকে সারি সারি জেলের নৌকা, দল বেঁধে বুনো মহিষের বিচরণ, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, আকাশ ছোঁয়া কেওড়া বাগান আর দিগন্ত বিস্তৃত সৈকত- সব কিছুই মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।
তবে মজার ব্যপার হলো,সাগরের কোলে জন্ম নেয়ায় স্থানীয়দের কাছে মনপুরা ‘সাগর কন্যা হিসেবে পরিচিত। এখানে ভোরে সূর্যের আগমনী বার্তা আর বিকেলে পশ্চিম আকাশে একটু একটু করে মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য অতুলনীয়। আবার রাতে দ্বীপের অন্য রূপ। ঘোমটা জড়ানো বধূর মতো নিস্তব্ধতায় ছেঁয়ে যায় পুরো দ্বীপ। প্রায় আটশ বছরের পুরনো মনপুরা উপজেলা বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চল তথা দেশজুড়ে পরিচিত একটি নাম।
মনপুরার ইতিহাস প্রাচীন। সাতশ বছর আগে এখানে পর্তুগীজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। যার প্রমাণ মেলে সেখানকার বড় লোমযুক্ত কুকুর দেখে। এখানকার পর্যটন সম্ভাবনা প্রচুর।
পর্যটকদের কাছে মনপুরার আর্কষণীয় বিষয় হচ্ছে, এখানকার হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এ ছাড়াও রয়েছে বাহারী প্রজাতির বৃক্ষ, তরুলতা। আরো রয়েছে হরিণ, বানর, ভালুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
মনপুরায় রয়েছে ৮ থেকে ১০টি বিচ্ছিন্ন চর। এগুলো চর তোজাম্মেল, চর পাতিলা, চর জামশেদ, চর পিয়াল, চর নিজাম, লালচর, বালুয়ারচর, চর গোয়ালিয়া ও সাকুচিয়ার চর নামে পরিচিত। চরগুলো দেখলে মনে হবে কিশোরীর গলায় মুক্তার মালা। চরাঞ্চলে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজের বিপ্লব। চোখ ধাঁধানো রূপ নিয়েই যেন চরগুলোর জন্ম। চরগুলোতে রয়েছে মানুষের বসতি। যাদের জীবন যাত্রা কিছুটা ভিন্ন। জেলে, চাষী, দিনমজুর, কৃষক এবং খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে এখানকার বেশীর ভাগ মানুষ।
খুব সহজেই ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে সাগরকন্যা মনপুরার।তবে শীত মৌসুমে এর চিত্র অনেকটাই পাল্টে যায়। সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলে যেন নতুন প্রাণ জেগে ওঠে।তখন সাগরকন্যা মনপুরা অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে মনপুরা আসা যায়। সময় লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা। এ ছাড়া ভোলা থেকেও ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাতায়াত করা যায়।
দেশের অন্যসব পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় মনপুরার চিত্র কিছুটা ভিন্ন।মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষের সমাহার দেখে প্রথমে একে ঠিক চর মনে হবে না।যেন ক্যানভাসে আঁকা শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়া। অপার সৌন্দর্যের এ দ্বীপে না এলে বোঝাই যাবেনা কত সুন্দর মনপুরা।