স্মৃতির ভেলায় ভেসে বেড়ালো সিইউজেএডি পরিবার

প্রথম প্রকাশঃ জানুয়ারি ২৮, ২০১৭ সময়ঃ ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:২৩ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

IMG_0056

এখানে থমকে গেছে সময়। স্মৃতি কুঁড়িয়ে নিতে স্মৃতি জাগানিয়ার দল একত্রিত হলেন বহু দূর দুরান্ত থেকে; বাস্তব ব্যস্ততার ভীড় মাড়িয়ে ক্ষণিকালয়ের আশ্রয়ে। ভাবনার গহীনে সমান্তরাল পথের সন্ধানে ছুটেছে অস্থির হৃদয়। যে গল্পগাঁথার কল্পনারা শীতল শীতের কুয়াশায় আবছা হয়ে গেল নিজের অচেতন মনের কুঠুরিতে; আজ সময় এসেছে তা ফিরিয়ে নেবার; বিস্মৃতিকে বিদায় দেবার। তাইতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্রছাত্রীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা চিটাগং ইউনিভার্সিটি জার্নালিজম এসোসিয়েশন (সিইউজিএডি) ২য় বারের মতো
আয়োজন করে বনভোজনের; শহরের কাছে মিরপুরে অবস্থিত তামান্না ওয়াল্ড ফ্যামিলি পার্কে। 

CUJAD_

যাত্রা পথের দীর্ঘসূত্রিতা, সময়ের সময় ক্ষেপন কোনোকিছুই পারেনি একঝাঁক স্বপ্নস্মৃতি খুঁজে বেড়ানোর দলকে ভাঙনের সুরে নিমজ্জিত করতে। তাইতো মাঘ লুকুচুরি খেলেছে রবির নিপুণ সমর্থনে। যেন ভোরের আলোর চোখ ফুটে তাকানোর সময়ই হয়নি এখনও!

অবশেষে শেষ হল পথ, অজানাকে জানার নিমিত্তে। অত:পর খেলায় খেলায় ভীষণ হেলায় মাতলো পুরো দল। প্রথমে স্মৃতির স্মরণে বিমুগ্ধ মন স্মরণিকার পাতায় নাম হাতরে বেড়ালো। এই মনে আসে বুঝি, এই গেল হারিয়ে। এভাবেই চলে জং ধরা ভুলো মনের আসা-যাওয়ার খেলা। কেউ মনে করতে পেরে ভীষণ আনন্দিত, কেউ ভুলে যাওয়ার দু:খ নিয়ে আফসোসে রত।

এরই মাঝে সব ভুলে ব্যস্ত হয়ে গেল বন্ধ চোখে অন্ধকারে মনের ঘোরে হাত ধরে আপন সঙ্গীকে খুঁজে বের করার নেশায়। তবে কাঙ্খিত আশা রূপ নিল আতঙ্কে আর প্রবল আশংকায়। সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ, কণ্ঠ উৎকষ্ঠিত। অতি চেনা জনকে অচেনার গাম্ভির্যে চেনা দায়। হঠাৎ ফজলু ভাইয়ের বিজয়ী উচ্ছাসে বিজিতের মনেও প্রশ্ন ঘুরে বেড়ায়, হায় আমার এ কী হইল?CUJAD_!

বেদনার রঙে ধূসর দম্পতির মুখে আনন্দের হাসি ফুটতে বেশি সময় লাগেনি। মনের সকল বন্ধ দুয়ার আজি এক নিমিষেই গেল খুলিয়া। হৃদয় উজার করে খুলে বলল নিজের ভাবের অন্দরে লুকিয়ে রাখা সেই কথা। ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী জসিম ভাইয়ের সহধর্মীনীর মুখে বরিশালের রোমান্টিক ডায়ালক ছিল অনেকের চোখে অসাধারণ আবেগী অনুভূতিমাখা।

গানের তালে তালে নাচের পর্ব শুরু হল গোলাম রসুল আর আজাদ স্যারের মধ্য দিয়ে। সবাই অবাক চোখে চেয়ে দেখে গুরু-শিষ্যের নৃত্য পারদর্শীসুলভ পটুতা। বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শবনমও অবশ্য কম যায় না। নৃত্যে নৃত্য পটিয়সীই বটে।

মুখরিত জীবনে চলার বাঁকে অজানা হাজার শত কাজের ভীড়ে ফেলে আসা স্মৃতিদের গানের সুরে সুরে মনে করিয়ে দিলেন ষষ্ঠ ব্যাচের মইন ভাই। প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত সাবেকদের মুগ্ধ করেছে আলমগীরের মাঠ মাতানো উপস্থাপনায়।

CUJAD-2দিকে সিইউজেএডি’র দক্ষ সমন্বয়ক তন্ময় ভাইয়ের এক চিলতে নিরেট হাসি আড়াল করে রেখেছে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও অপ্রতুলতাকে। তার ঝড়ের বেগে চুম্বকীয় ধাঁচের কথা বলে যাওয়াটা অনেকের ভালো লেগেছে।

জসিম ভাইয়ের ধারাভাষ্যসুলভ দুষ্টুমিতে ভরা অনর্গল অগ্রজ-অনুজদের অঢেল প্রশংসাবাণে সরগরম করে রেখেছিল নিরাভরণ হলকে। এরকমই আনন্দঘন মুহূর্তে মঞ্চে এলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক রাকিব হাসান। বিভাগের প্রতি ভালাবাসার বিচ্ছুরণ ছিলো যার প্রতিটি কথায়। সাবেকদের মেল-বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে সিইউজেএডির প্ল্যাটফরমকে আরো মজবুত করার আহ্ববান জানান তিনি।

বনভোজনের এই আনন্দ কোলাহলের মাঝে আজাদ স্যারের প্রতি শিক্ষার্থীদের অঝোর ধারায় অবিরাম শ্রদ্ধাবর্ষণ দেখে মনে হচ্ছিল শ্রাবণের বারিধারাও বুঝি ম্লান হয়ে যাবে। একত্রিত হওয়ার যে আনন্দ সবার মধ্যে দেখেছিলাম তা পুর্ণতা পেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সরব উপস্থিতিতে। সব না এর পালিয়ে বেড়ানোয় ছিল একমাত্র অবলম্বন। আজ সব হাত যে এক হয়েছে দুর্গম বাধা পেরোবার। এই শিষ্যদের সাথে যোগ দিতে বহু দিনের চেনা নগরী থেকে ছুটে এলেন শিক্ষকদ্বয়।

IMG_0075

তরুণ শিক্ষক মাধপ দীপের তারুণ্যদীপ্ত হাস্যজ্জ্বোল আত্মবিশ্বাস চারপাশের মিনশে আলোকে ভালোই ভুলিয়ে দিয়েছিল। এখান থেকেই আজাদ স্যারের মাধ্যমে বিনিতভাবে প্রস্তাব এল এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন গঠনের। সবাই একাত্ম হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করলো নির্দিধায়। এমনই এক আশা জাগানিয়া আনন্দঘন মুহূর্তে হঠাৎ কেন করুণ সুরের ছন্দ শোনা গেল। কারো চোখ কেন ছলছল, কণ্ঠ ক্ষীণকায়? এত আনন্দের ভীড়ে স্বেচ্ছায় কষ্টের দীর্ঘ পথে হেঁটে চলেছে অনেকেই; সবার খুব কাছের অতি আপনের চেয়েও আপন যিনি; সেই শিক্ষক এ্যান্ড্রু অলক দেওয়ারীর জন্য? নিরব মনের কাছে শুধু প্রশ্ন ছিল একটাই, এ শ্বাসরুদ্ধকর দীর্ঘশ্বাসের শেষ কোথায়?

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G