হাতুড়ে ডাক্তার তৈরির মহা-আয়োজন
এম. জাকির হোসেন খান
‘১৮ সেপ্টেম্বর, রাত ১২টা ৩০ (মিনিট)- তার মানে পরীক্ষা শুারু হওয়ার কথা সকাল ১০টায়, সেখানে সাড়ে নয় ঘণ্টা আগে প্রশ্নটা এখানে আসল (অনলাইনে দেখা গেছে)। কাকতালীয়ভাবে ১০টা (প্রশ্ন) মিলতে পারে, ২০টা প্রশ্ন মিলতে পারে, ৩০টা প্রশ্ন মিলতে পারে, ধরেন ৫০টা বললাম; ৭৭টা প্রশ্ন মিলে যাওয়া- এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে না।’ গত ১১ অক্টোবর তারিখে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে সমন্বয়ক আসেফ বিন তাকি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিভিন্ন ‘তথ্য-প্রমাণ’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনের সময় এসব যৌক্তিকতা তুলে ধরলেন। এমনকি প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সে প্রমাণও ছাত্র-ছাত্রীরা দিয়েছে। ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীরা একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সরাসরি পরীক্ষা ফাঁসের প্রমাণ জানানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সরকার মনে করেছিল অতীতের মতো ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকেও দমন করতে পারবে। কিন্তু আইন-শৃংখলা বাহিনীর নানা বাধাবিপত্তি ও নিগৃহীত করায় এবং ছাত্রীসহ অসংখ্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আহত হলেও তাতে দমে না গিয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে টানা আন্দোলন করছে। ঢাকা মেডিকেল ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সিনিয়র শিক্ষার্থীরাও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করেছে। এ প্রেক্ষিতে প্রশ্ন হলো, ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি অনুযায়ী স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে বাধা কোথায়?
প্রশ্ন ফাসের অভিযোগ উত্থাপনের পর পরই সরকারের পক্ষ থেকে বারবার তা অস্বীকার করা হলেও প্রমাণ হাজির করার পর সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। আন্দোলনকারীরা কেউ কেউ জানিয়েছেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্দোলনরতদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক এটা কি আন্দোলনকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য, না ক্ষমতাসীনদের বাস্তবে শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে?
কারণ পরীক্ষার পরদিনই প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পত্রিকায় আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা আমলে না নিয়ে তাড়াতাড়ি ফল ঘোষণা করে ইতিমধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় সমাপ্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে র্যাব কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে আটককৃত এবং ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা স্বীকারকারী একজন ইউজিসি কর্মকর্তাকে আটকের পর র্যাবের ভাষ্য মতে তিনি কথিত হার্টঅ্যাটাকে মারা যান। তবে তার পরিবার এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করেছেন। তার এই মৃত্যু বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে, দায়স্বীকারকারী এই কর্মকর্তা অনেক তথ্যাদি জানতেন। তার মৃত্যুর মধ্যদিয়ে ওই তথ্যাদি আর জানার সুযোগ থাকলো না। দ্বিতীয়ত, তার মৃত্যর মধ্যদিয়ে কি প্রশ্নপত্র ফাসের সাথে জড়িতদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে? ওই কর্মকর্তাকে আদালতে নিলে তিনি নিশ্চয়ই এই প্রশ্নপত্র ফাসের সাথে বড় বড় কারা জড়িত তাসহ পুরো চক্রটি না হলেও অন্তত একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া যেতো। কিন্তু সে পথ বন্ধ করা হয়েছে কেন- সে প্রশ্নটি এখন বিশাল আকারে দেখা দিয়েছে।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে যেসব হাতুড়ে ডাক্তার ভবিষ্যতে বের হবে, এরাই টাকার জোরে এডহক বা বিসিএস এর মাধ্যমে সরকারি চাকুরি নিয়ে এক সময় সরকারি চিকিৎসক হিসাবে জেকে বসবে। আর এদের ভুল চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যু হলে তার দায় তো বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরকেই নিতে হবে। তথ্য প্রমাণ থাকার পরেও তার প্রতিকার না নিয়ে এভাবে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ দিলে ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হলে তা অত্যুক্তি হবে কি? জনগণের ভোটে ক্ষমতায় না আসার বাস্তব ফল এটাই যে, প্রকৃতপক্ষে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতাও তাদের নেই। কোনো সমালোচনা বা উদ্বেগকেই তারা আমলে নিচ্ছেনা। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত কয়েক বছরে এমন কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেই যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। অথচ টিআইবি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে (২০১২-২০১৫) বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় মোট ৬৩টি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাস্তবে টিআইবি’র প্রতিবেদন মতে, ‘প্রধানত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত গোষ্ঠীর একাংশের ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করার তথ্য পাওয়া যায়। এসব ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ব্যাপকভাবে সরকারি নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ থাকলেও কিছু অংশের পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথেও সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে’। অথচ প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা মিডিয়াতে প্রকাশ পেলেই মন্ত্রীরা ‘গুজব’ বা দেশের স্বার্থ-বিরোধী এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রগতিশীল রাজনীতি বিরোধী কর্মকান্ড বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। এভাবে অদৃশ্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তর্জন-গর্জন করে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের রেহাই দেওয়ার ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি স্বাভাবিক ঘটনায় দাড়িয়েছে, যা এখন শৈল্পিক রুপে ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে’ ফেসবুকের মাধ্যমে হাতের নাগালে।
২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো আত্মঘাতী কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনে পরীক্ষার দিন মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেব, প্রয়োজনে ফেসবুকও বন্ধ করে দেব। প্রশ্ন ফাঁস করে কেউ পার পাবে না। কেউ এখানে হাত দেবেন না, দিলে হাত পুড়ে যাবে, হাত ভেঙে দেব’। বাস্তবতা হলো, আপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং সর্বশেষ সংযোজন হলো ২০১৫ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ ইতিমধ্যে ফেসবুকে প্রকাশ পেয়েছে।
অথচ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) এবং জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্রে (২০১০-২০২১) দক্ষ ও নৈতিকভাবে শক্তিশালী মানসম্মত উন্নয়নের জন্য সকল পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা এবং সাধারণ শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো (জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র) করার কথা বলা হলেও বাস্তবে ক্ষমতাসীনদের অবস্থান উল্টো। অপ্রতিরোধ্য এ প্রশ্ন ফাঁস প্রক্রিয়ার সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণে এবং তদারকির সাথে সম্পৃক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ জড়িত। টিআইবি’র গবেষনায় প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘গবেষণায় প্রশ্ন ফাঁস ও ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়ানোর এবং বাজারজাতকরণে সম্ভাব্য অংশীজনের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত এক ধরনের সিন্ডিকেটের উদ্ভব ঘটেছে যারা অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করছে। মূলত রাজনৈতিক দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কোচিং সেন্টার মিলে একটি সিন্ডিকেট প্রশ্ন ফাঁসের সাথে সক্রিয় এমন তথ্য পাওয়া যায়’। এর মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য লাভের সুযোগ আসলেও প্রকৃতপক্ষে ‘মানুষ মারার ডাক্তার’ হওয়ার সুযোগ সৃষ্ঠি করে দিচ্ছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে দুর্নীতি এবং দলীয়করণ দুই-ই সম্ভব হচ্ছে। মেধাবী শিক্ষার্থীর পরিবর্তে দলীয় সমর্থকদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই এগুলো করা হচ্ছে তা বলা যায়। টিআইবি প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, প্রশ্ন প্রণয়নের দীর্ঘ প্রক্রিয়া, ম্যানুয়াল পদ্ধতির সাথে অনেকের সম্পৃক্ততা থাকায় প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকি বাড়ার কথা বলা হলেও মূল কারণ অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি। উল্লেখ্য, একই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পূর্বে, প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর এবং পরীক্ষায় প্রশ্ন মিলে যাওয়ার পর এককভাবে সর্বোচ্চ ১০হাজার টাকা এবং দলগতভাবে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা লেনদেনের হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়’। যারা দিনের পর দিন প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাতির ভবিষ্যতকে ফিঁকে করে দিচ্ছে, তারা ধরা-ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, ’৭২ এর নকল প্রবণ পরীক্ষা পদ্ধতি জাতির কাধে চাপানো হলো। একজন অভিভাবকের ভাষ্যে, ‘নিজে রাত জেগে মেয়েকে পড়িয়েছি। অথচ প্রতিটি পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মেয়ে এখন লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। পরীক্ষার পড়া রিভিশন দেয়ার চেয়ে বান্ধবীদের কাছ থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সংগ্রহতেই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে’।
অথচ বাংলাদেশের শিক্ষানীতির মুখবন্ধে শিক্ষামন্ত্রি নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, ‘পরীক্ষা পদ্ধতি বা শিক্ষার্থীর শিক্ষার মান যাচাই বা শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতির মৌলিক পরিবর্তন করতে হবে। …..পরীক্ষাকে পরীক্ষার্থীরা তার শিক্ষা জীবনের সার্থকতার মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি হিসাবে আনন্দের সাথে গ্রহণ করবে’। ক্ষমতাসীনদের কথা এবং কাজের এ ধরনের অমিল এবারই নতুন নয়। ২০১৪ সালে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের মিল-অমিলের ফাঁদে পড়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৩১ লাখ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের শুরুতেই অকল্পনীয় হোঁচট খায় বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ভাষ্য মতে, ‘সাজেশনের নামে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে ছোট ছোট শিশুদের অন্যায় করতে শেখানো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে জাতির মেরুদন্ড ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে’। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতির সূচকে বাংলাদেশ ১০ পয়েন্টের মধ্যে মাত্র ১.৪৯ পয়েন্ট পেয়ে বিশ্বের ২৮টি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের মধ্যে ২৭তম এমনকি মিয়ানমারের পেছনে অবস্থান করছে, যা সত্যিই আশংকাজনক।
এ প্রেক্ষিতে সচেতন নাগরিকদের জিজ্ঞাসা ক্ষমতাসীনরা আদৌ প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে চায় কিনা? উল্লেখ্য, বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গত ছয় বছরে ঢাকা মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দায়ের হওয়া ৭০টি মামলার একটিও এখন পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। শাস্তি পাননি কোনো অপরাধী। মামলা থেকে অব্যাহতি ও খালাস পেয়ে গেছেন অনেকে। অনেক আসামি জামিন নিয়ে আর আদালতে হাজিরা দিতেও যাচ্ছে না। প্রশ্নপত্রের ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। উল্টো ১৯৯২ সালে ‘পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন ১৯৮০’ সংশোধনের মাধ্যমে মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে অভিযুক্তদের ১০ বছরের শাস্তির বিধান কমিয়ে ৪ বছর করা হয়। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালার মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য তো বন্ধই হয়ই-নি, উল্টো কোচিংগুলো সরাসরি এ প্রশ্নপত্র ফাসের সাথে জড়িত হচ্ছে। অথচ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হাজার মামলার দ্রুত চার্জশীট প্রদান, আসামীদের আটক বা রিমান্ডের নামে নির্যাতন করতে পিছপা হচ্ছেনা আইন-শৃংখলা বাহিনী বা ক্ষমতাসীনরা। অথচ ক্ষমতাসীনরা ভালো করেই জানে, একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করাই যথেষ্ট।
এই প্রশ্নটিও উত্থাপন জরুরি যে, প্রশ্নপত্র ফাসের মাধ্যমে একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুকৌশলে ধ্বংস করার মধ্যদিয়ে অন্য কোনো দেশের আধিপত্য বিস্তারের এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল কিনা। বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো প্রতিদিন যার উন্নয়ন হচ্ছে, সে রকম একটি শিক্ষাকে অচল করে দিয়ে হাতুড়ে ডাক্তার তৈরির মধ্যদিয়ে এদেশের রোগীদের বিদেশমুখী করার চক্রান্ত কিনা – সে বিষয়টিও ভেবে দেখতে হবে। আর তাই যদি হয় তাহবে ভয়ংকর এবং ভয়াবহ।
এখানে পাশ্ববর্তী ভারতের উদাহরন দেয়া যেতে পারে সংগত কারণেই। ২০১৫ সালের ১৫ জুন ভারতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা পাওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কেন্দ্রীয় বোর্ডকে (সিবিএসই) ৪ সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এর ফলে ৬ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে আবারও অল ইন্ডিয়া প্রি-মেডিকেল টেস্টে (এআইপিএমটি) অংশগ্রহণ করতে হয়। বিচারক আর কে আগারওয়াল ও অমিতাভ রায়ের বেঞ্চ রায়ে বলেন, ‘পরীক্ষা সন্দেহজনক হয়ে গেছে, কোনোভাবেই এর সঙ্গে আপোস করা যায় না।’ আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশেও এমন উদাহরন সৃষ্টি হবেই। তা করা সম্ভব না হলে, যে শিক্ষার্থী এ মন্তব্যটি করেছে যে, ‘আমার বাবার টাকা নাই, প্রশ্ন কেনার সুযোগ নাই, জীবন বাঁচার গতি নাই। কত রাত জেগেছি, মন দিয়ে পড়েছি, ঘুম হারাম করেছি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে’ – তার এই মনোবেদনার জবাব, স¦প্ন ভঙ্গের জবাব কি রাষ্ট্র, সমাজ বা দলদাস বুদ্ধিজীবি কেউ এর যথাযথ উত্তর দিতে পারবে? নাকি আলবার্ট আইনস্টাইনের ‘অসৎদের মাধ্যমে নয় বরং অসততা দেখেও যারা অসৎদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা, তাদের মাধ্যমেই পৃথিবী ধ্বংস হবে’ কথাটিই আমাদের অবধারিত নিয়তি?
আমাদের বুধবার