হামটি ডামটি!
পৃথিবী বিখ্যাত ছোটদের “ হামটি ডামটি ” কাবিতাটা ছোটবেলায় কেউ পড়েননি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। কবিতাটা আজও বিখ্যাত হয়েই আছে। কিন্তু এই কবিতার পেছনের কথা আমরা কখনো ভেবে দেখিনা। আমরা অনেক কিছুই পেছনে তাকিয়ে দেখিনা, আর গভীরে যেয়ে দেখার কোনো তাগিদ তো অনুভব করিই না। আজ আমরা এই কবিতাটার পেছনের দিকে একটু ফিরে তাকাবো এবং একটু তলিয়ে দেখার চেষ্টা করবো।
বহুল প্রচলিত যে কবিতাটা আমরা জানি, তার আগে কবিতাটা এই আকারে ছিলোনা। প্রচলিত কবিতায় আছে –
Humpty Dumpty sat on a wall,
Humpty Dumpty had a great fall.
All the king’s horses and all the king’s men
Couldn’t put Humpty Dumpty together again.
১৭৯৭ সালে, স্যামুয়েল আরনল্ডের “ জুভেলিনিনি অ্যামুউজমেন্ট “ এ ছাপা হয় –
Humpty Dumpty sat on a wall,
Humpty Dumpty had a great fall.
Four-score Men and Four-score more,
Could not make Humpty Dumpty where he was.
সূত্র : উইকিপিডিয়া।
আমরা যদি দুটো কবিতা পাশাপাশি পড়ি, তাহলে বিশাল এক পার্থক্য দেখাতে পাবো, শেষ দুটো লাইনে। প্রচলিত কবিতায় হামটি ডামটি ( সাধারণত যেটা “ ডিম “ মনে করা হয় ) ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। কিন্তু ১৭৯৭ এর কবিতায় হামটি ডামটিকে আর আগের জায়গায় পাওয়া যায়না। অর্থাৎ হামটি ডামটির কোথায় যেন পতন বা পরিবর্তন হয়েছে। সে আর আগের জায়গায় নেই। বিদেশে কবিতাটা নিয়ে বহু রকমের ব্যাখ্যা হয়েছে, ব্যাঙ্গ করা হয়েছে, কিন্তু আমরা কখনো এর ব্যাখ্যার দিকে তাকাইনি। হয়তো বিদেশি কবিতা বলে ততটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করিনি। কিন্তু একটু গুরুত্বের সঙ্গে দেখলে এখান থেকে অনেক অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে।
প্রথমত: হামটি ডামটি রূপক আকারে “ ডিম “ কে নির্দেশায়িত করলেও, তা কিন্তু মোটেও ডিম না। সে মানুষও হতে পারে। দ্বিতীয়ত: হামটি ডামটির কি দোষ ছিলো, দুটোর কোনো কবিতাতেই আমরা জানতে পারিনা। তৃতীয়ত: যে দেয়ালে সে বসে থাকে, সেই দেয়ালটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা যে কোনো দেশের দেয়াল নির্দেশ করতে পারে। আমরা বর্তমান সময়ে এমনি এক দেয়ালে বসে আছি। এ বড় ভয়াবহ দেয়াল। এখান থেকে যে কেউ , যে কোনো সময় পড়ে যেতে পারে আর একবার পড়ে গেলে, সে আর আগের জায়গায় যেতে পারবেনা। চারিদিকে যেভাবে ৫৭ ধারার জুজুর ভয় দেখানো হচ্ছে, সেটা ফেসবুকে হোক অথবা পত্রিকা বা মিডিয়ার পাতাতেই হোক, খুব সাবধানে চলতে ফিরতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঐ দেয়ালে বসে অনেকেই পড়ে গেছেন ( প্রকৃত পক্ষে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে)। যদিও তাদের দোষ ছিলো সত্য বলার অপরাধ, হামটি ডামটির মতো অদৃশ্য দোষ ছিলোনা। এবং তারা আর তাদের পূর্বাবস্থানে আর ফিরে যেতে পারছেন না।
অনেক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চালু চ্যানেলগুলোকে “ দাস “ দের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। তার মানে, হয় এখন “ দাস “ হতে হবে, নাহলে, হামটি ডামটির মতো পড়ে যেতে হবে …. এভাবে পড়ে যেতে যেতে একসময় গোটা দেশটাও যখন তলিয়ে যাবে, তখন সেটা কি খুব ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে ?
ফ্লোরা সরকার
লেখিকা
ই মেইল-[email protected]
এই লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজের। এখানে প্রতিক্ষণ ডট কমের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই