হার্ভাডের অন্যতম সেরা ড্রপার জুকার বার্গ!
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
তাকে বলা হয় হার্ভাডের অন্যতম সেরা ড্রপার। ২০০৪ সালে সে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন তবে আবারও ফিরে আসেন, তবে ছাত্র হিসেবে নয়। ফিরে আসেন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে ভাষণ দিতে। এই উদ্যোক্তাকে স্বাগত জানাতে পূর্ব নির্ধারিত ২০০ জন ছাত্রছাত্রী, ৫০ জন সাংবাদিক আর ২০টি ক্যামেরা দাড়িয়ে ছিল হার্ভার্ডের উঠোনে। বলছিলাম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা জুকার বার্গের কথা। আজ ‘জীবনের জয়গান’ পাতায় থাকছে এই তরুণ উদ্যোক্তার জীবনের টুকিটাকি এবং তার প্রতিষ্ঠিত ফেসবুকের গল্প।
মার্ক জুকারবার্গ পৃথিবীর সব থেকে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮৪ সালের ১৪ মে নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন এলাকাতে মা সাইকোলজিস্ট ক্যারেন ও বাবা ডেন্টিস্ট এডওয়ার্ড জুকারবার্গের ঘরে জন্ম নেন মার্ক জুকারবার্গ। জুকারবার্গ চার ভাই বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তার ছোট তিন বোন হচ্ছে র্যান্ডি, ডোনা এবং এরিএল। জুকারবার্গের সম্পূর্ণ নাম মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ।
শৈশবে মার্ক জুকারবার্গ:
মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ শৈশবেই আর্ডসেলি হাই স্কুলে গ্রীক এবং ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি ফিলিপস এক্সটার একাডেমীতে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি বিজ্ঞান এবং ক্লাসিক্যাল শিক্ষায় পুরস্কৃত হন। তিনি অসি ক্রীড়া তারকা ছিলেন এবং অসিক্রীড়া দলের অধিনায়ক ছিলেন। কলেজে তিনি মহাকাব্যিক কবিতার লাইন থেকে আবৃত্তি করার জন্যও পরিচিত ছিলেন। জুকারবার্গের শৈশব বয়স থেকেই কম্পিউটারের প্রতি ছিল প্রচণ্ড আগ্রহ। তাই মাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে শখে সফটওয়্যার লেখা শুরু করেন জুকারবার্গ।
সফটওয়্যার বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান:
মার্ক জুকারবার্গের বয়স যখন বারো তখন তিনি আটারি বেসিক ব্যবহার করে ‘জুকনেট’ (Zucknet) নামে একটি বার্তা প্রোগ্রাম তৈরি করেন। তাঁর পিতা অফিসে প্রোগ্রামটি ব্যবহার করত, যাতে রিসেপশনিস্ট নতুন রোগীর বিষয়ে তাকে সহজেই জানাতে পারে। পরিবারের সবাই ‘জুকনেট’ দিয়ে গৃহের মধ্যে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করতো। মার্ক এর কম্পিউটারের উপর দ্রুত দক্ষতা গড়ে ওঠা দেখে তার বাবা ডেভিড নিউম্যানকে কম্পিউটারের গৃহশিক্ষক রাখেন। যখন তিনি হাই স্কুলে তখন, তিনি একটি সফটওয়্যার প্যানডোরা (Pandora) তৈরি করেন, যা স্যানপাসি (Synapse)এর প্রথম সংস্করণ। এওএল (AOL) এবং মাইক্রোসফট ছাড়াও আরো অনেক প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যারটি কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে কিন্তু তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত উচ্চমাধমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। এরপর ২০০০ সালে তিনি পিল্লিপ্স এক্সেটার একাডেমীতে পড়াশুনা করেন।
হার্ভার্ডে জুকারবার্গ:
২০০২ সালে জুকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করার জন্য জুকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গো-টু ক্যাম্পাস সফটওয়্যার (go-to campus software) ডেভেলপার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সেই সময় তিনি একটি কোর্সম্যাচ (CourseMatch) নামক প্রোগ্রাম তৈরি করেন, যার সাহায্যে ছাত্রছাত্রীরা তাদের কোর্সের ভিত্তিতে ক্লাস নির্বাচন করতে পারত।
হার্ভার্ড কলেজের ডাটাবেজ হ্যাক:
হার্ভার্ডে থাকা অবস্থায় ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ ‘ফেসম্যাশ ডট কম’ নামে একটি সাইট প্রতিষ্ঠা করে। এই ফেসম্যাশ সাইটের কাজ খুব একটা ভালো কিছু ছিলোনা। এই সাইটে দুইটা ছবি পাশাপাশি রাখা হত। এই দুই ছবি থেকে ভিজিটররা কে “হট” আর কে “হট না/নট” তা তুলনা করতো। হার্ভার্ড কলেজের ডাটাবেজ হ্যাক করে স্টুডেন্টদের ছবি নিয়ে তা ফেসম্যাশে ব্যবহার করে ভিজিটরদের “হট” অথবা “নট” বের করার সুযোগ দেন। প্রথমদিকে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ৪৫০ ভিজিটর ২২০০০ ছবিতে অন লাইন এর মাধ্যমে ভোট দেন। পরে কলেজের স্টুডেন্টরা এই সাইট বন্ধ করতে তাকে বাধ্য করে।
ফেসবুক প্রতিষ্ঠা :
২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হার্ভার্ডে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট “দি ফেসবুক ডট কম” যা ‘ফেসম্যাশ ডট কম’ এর পরিবর্তিত রূপ। ব্যবহারকারীরা নতুন নতুন বন্ধু অ্যাড করা, বার্তা প্রেরণ করা এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী আপডেট করা ও তথ্য আদান প্রদান করতে পারত প্রথম দিকে। সেই সাথে একজন ব্যবহারকারী শহর, কর্মস্থল, বিদ্যালয় এবং অঞ্চল-ভিক্তিক নেটওয়ার্কেও যুক্ত হতে পারত। মার্ক জুকারবার্গ হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণকালীন তার রুমমেট এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিৎস এবং ক্রিস হিউজেসের যৌথ প্রচেষ্টায় ফেসবুক নির্মাণ করেন। ওয়েবসাইটটির সদস্য প্রাথমিকভাবে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পরে সেটা বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ, আইভি লীগ এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আরো পরে এটা সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, হাই স্কুল এবং ১৩ বছর বা ততোধিক বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
ফেসবুক নিয়ে বিতর্কে জুকারবার্গ:
“দি ফেসবুক” যাত্রা শুরু করার ঠিক ছয়দিনের মাথায় জুকারবার্গের সেই সহযোগী বন্ধুরা তার বিরুদ্ধে আইডিয়া চুরির অভিযোগ এনেছিল। সেসময় এ নিয়ে তেমন আর কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হলেও ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এসে জুকারবার্গের সেই তিন বন্ধু ক্যামেরুন, টেলর ও ডিভিয়া মামলা করে বসে ‘দি ফেসবুক’ এর নামে।
ইয়াহু এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান:
২০০৫ সালে ফেসবুকে যখন ৫.৫ মিলিয়ন ব্যবহারকারী যুক্ত হয় তখন বিভিন্ন অ্যাডভেরটাইজমেন্ট ফার্ম ফেসবুকে অ্যাড দিতে শুরু করে। ফেসবুকের জনপ্রিয়তা দেখে একই সময় ইয়াহু এবং এমটিভি নেটওয়ার্ক কোম্পানি ফেসবুক কিনতে চেয়েছিল এক বিলিয়ন ডলারে কিন্তু মার্ক জুকারবার্গ সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলো।
দি ফেসবুক ডটকম নাম পাল্টে ফেসবুক ডটকম:
২০০৫ সালে মার্কিন কলেজ এবং স্কুলগুলোতে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। আগস্টে জুকারবার্গ “দি ফেসবুক ডটকম” নাম পাল্টে শুধু “ফেসবুক ডটকম” রাখেন। বছর শেষে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫ লাখে। ২০০৬ সালের প্রথম দিকে মার্কিন অফিস এবং পরবর্তীতে সর্বসাধারণের জন্য ফেসবুক উন্মুক্ত করা হয়। কৌশলগত কারণে মাইক্রোসফট তখন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। বছর শেষে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক কোটি ২০ লাখ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোন দেশে ফেসবুক তখনও একটি অপরিচিত নাম। ২০০৭ সালে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। সেই বছর ফেব্রুয়ারীতে ভার্চুয়াল গিফট চালু করেন জুকারবার্গ।
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সর্ব প্রথম ফেসবুক ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমে কানাডা ও ব্রিটেন এবং পরবর্তীতে ফ্রান্স ও স্পেন। এপ্রিলে ফেসবুক চ্যাট চালু হয়। বছরের মাঝামাঝিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে জুকারবার্গের ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা শুধু বাড়তেই থাকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ধীরে ধীরে কার্যক্রম শুরু হয় এ সাইটের। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ কোটি থেকে বেড়ে ৩৫ কোটিতে। ২০১০ সাল ফেসবুকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০কোটি!
প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর