হোসেনি দালানের হামলা রহস্য উদঘাটন!
নিজস্ব প্রতিবেদক
পুরান ঢাকার হোসেনী দালান (শিয়া উপাসনালয় এবং কবরস্থান) বোমা হামলা ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
বুধবার রাতে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের(জেএমবি) সদস্য বলে পুলিশের দাবি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, হোসেনি দালানে বোমা হামলায় মোট পাঁচজন অংশ নেয় এরা হলেন মানিক, শাহজালাল, হাফেজ মাহমুদ, চান মিয়া ও রাশেদ। এদের মধ্যে জেএমবির মিলিটারি আমির শাহাদাত মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তিনি একজন সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য।
শাহাদাত বুধবার রাতে সোয়া ১১টার দিকে গাবতলীর দ্বীপনগর বালুর মাঠ এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
মনিরুল ইসলাম জানান, গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে শাহাদাত ওরফে আলবানিসহ তার সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে শাহাদাত গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানান, তাদের পরিকল্পনা ছিল মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের ওপর হামলা চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। এ জন্য মোহাম্মদপুরে বাড়ি ভাড়া নেন। পরে জানতে পারে, শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় মিলনস্থল হলো পুরান ঢাকার হোসেনি দালান। সেখান থেকেই প্রতিবছর সবচেয়ে বড় মিছিলটি বের হয়। তাই তারা হামলার স্থান পরিবর্তন করেন।
ঘটনার দিন আটককৃতরা হোসেনি দালান এলাকায় অবস্থান নেন। রাত একটু বেশি হতেই হোসেনি দালানের পাশে অবস্থিত কবরস্থানের ভেতর থেকে পাঁচটি গ্রেনেড ছোড়া হয়। ঘটনাস্থলে শাহাদাত ওরফে আলবানি, কবিরসহ পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। কবির জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য। ওই ঘটনায় অংশগ্রহণকৃত পাঁচজনের দুজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করলেও বাকি তিনজনকে এখনো পাওয়া যায়নি।
আটককৃতদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা হোসেনি দালানের পুরো ঘটনাটি ভিডিও করতে চেয়েছিলেন। তবে আলোস্বল্পতার কারণে তা করতে পারেননি। ২১ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে তারা গাজীপুরের শালবন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন। পথে গাবতলীতে এএসআই ইব্রাহিম মোল্লাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
আশুলিয়ায় শিল্প পুলিশের কনস্টেবল মুকুল হোসেনকেও হত্যা করেন শাহাদাত ওরফে আলবানি। সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিল, হত্যার পর হত্যাকারীদের একজন তাদের কাছে পানি পান করতে চান। তার দুই হাতে ঘা ছিল। নিহত শাহাদাত ওরফে আলবানির দুই হাতে সেই ঘায়ের চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায়ও শাহাদাত ওরফে আলবানি ছিলেন।
এ ছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রাক্তন চেয়ারম্যান খিজির খানের গলায় চাকু চালিয়েছিল শাহাদাত। পুলিশের ভাষ্যমতে, এটি ছিল গেরিলা চাকু। এই গ্রুপটি নতুনভাবে সংগঠিত হয় এ বছরের শুরুতে। অস্ত্র ক্রয়ের জন্যই তারা খিজির খানকে হত্যা করেছে।
পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে হোসেনি দালানের ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান আটককৃতরা। এসব ঘটনায় তারা আন্তর্জাতিক সংগঠনের নাম জড়িয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে পুরান ঢাকার হোসেনি দালানের সামনে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে পরপর পাঁচটি দেশে তৈরি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় শতাধিক লোককে আহত অবস্থায ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সঞ্জু নামের একজন মারা যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামাল নামে আরো একজন মারা যায়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি।
প্রতিক্ষণ/এডি/জেডএমলি