হ্যাপি ফেসবুকিং : বিপদে পড়ার আগেই সতর্ক হোন !

প্রকাশঃ এপ্রিল ৬, ২০১৬ সময়ঃ ৩:০৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:১২ অপরাহ্ণ

photo-2

প্রতিক্ষণের পাঠকদের জন্য জাহিদ আল আমিনের  চমৎকার চিন্তার লেখাটি  ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার জন্য তার ফেইসবুক পাতা থেকে  হুবহু নেওয়া হলো: 

 

এই মুহুর্তে বাংলাদেশে যদি একটি রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করে, আর তার নাম হয় ‘বাংলাদেশ ফেসবুক লীগ’, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফেসবুক দল’ অথবা ‘জাতীয় ফেসবুক পার্টি’। তারপর যদি মোটামুটি একটি নিরপেক্ষ গণভোট হয়, আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে, ফেসবুক পার্টির ভূমিধ্বস বিজয় হবে।
photo-1
এই মুহুর্তে বাংলদেশে যদি একটি নতুন দৈনিক পত্রিকা আত্নপ্রকাশ করে, আর তার নাম হয় দৈনিক ফেসবুক, আমি নিশ্চিত, বিদ্যমান নীতি-নৈতিকতাহীন, ক্ষুদ্রমনা, পচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়ানো অধিকাংশ পত্রিকা ডাস্টবীনে ছুড়ে ফেলে দিয়ে পাঠকগণ চোখ বন্ধ করে দৈনিক ফেসবুকের গ্রাহক হবেন।
photo-3photo-4
এই মুহুর্তে কোন একটি দাবী আদায়ের আন্দোলন শুরু হয় ফেসবুকে, সেটা একটি সফল গন্তব্যে পৌছবেই।বাংলাদেশে এখন ফেসবুকই ‘তাহরীর স্কোয়ার’। প্রায় একদশক আগে সেই ‘ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের’ রাজনৈতিক মঞ্চ সুকৌশলে বাক্সেটবল, কাবাডি আর দোকান-পাটের দখলে চলে গেছে। তাই ফেসবুকই ভরসা।
কোন একটি খবর সর্বপ্রথম ছড়ায় ফেসবুকে। তারপরে আসে মুল ধারার গণমাধ্যমে। তনুর আন্দোলন এখনও টিকিয়ে রেখেছে ফেসবুক। সাগর-রুনী সাংবাদিক হলেও এখনও সংবাদপত্র-টেলিভিশনে তাদের খবর প্রকাশ ও প্রচার করা হয় শুধু তাদের হত্যাকান্ডের দিবস কেন্দ্রিক।
রামপালের কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, সুন্দরবন ধ্বংস, বাশখালিতে পুলিশ কর্তৃক নিরীহ মানুষের গণহত্যা, রাস্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক রাজকোষ লুট এমন সব খবরই ফেসবুককে ঘিরে।
রাষ্ট্র থেকে ব্যক্তির বড়-ছোট সব আবেগ-বাস্তবতাকে দখল করে নিয়েছে ফেসবুক। একটি সার্বজনীন যায়গায় পৌছে গেছে। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
বুঝে হোক না বুঝে হোক, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে মানুষ ফেসবুকের বুকে আশ্রয় নিচ্ছে। বিরহের যন্ত্রণা, বুক ভরা কষ্ট, নির্ঘূম নি:সঙ্গ রাত, ভালো লাগার গল্প, কবিতা, আবেগ-অনুভূতি সব আবেগের স্রোত মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ফেসবুকে।
যদিও এধরণের কোন সমীক্ষা এখনও পরিচালিত হয়নি, তবে বাংলাদেশে ফেসবুক ম্যানিয়া তথা গণমানুষের মাঝে ফেসবুকের যে প্রভাব, বোধকরি পৃথিবীর অন্যকোন দেশে এর এক চতুর্থাংশও নেই।
কিন্তু সর্বাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে সামাজিক যোগাযোগের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় ফেসবুক ব্যবহার সম্পর্কে আমরা কতটুকুন জানি। ফেসবুকের নীতি-নৈতিকতা। আচরনবিধি। নিরাপত্তা, সতর্কতা।
ফেসবুক কি শুধুই আবেগ নিংড়ে দেয়ার যায়গা। এটা কি শুধুই আশীর্বাদ। এটা কি কখনো কখনো কারো জন্য অভিশাপ হয়ে দেয়া দিতে পারেনা ? আমাদের সরল বিশ্বাস, সুস্থ চর্চার মাঝেও কিছু মানুষরূপী ‘শয়তান’ সবসময় তৎপর হয়ে থাকে। আপনার সরলতার কিংবা অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে এক মুহুর্তেই আপনার জীবনটাকে নরক বানিয়ে ফেলতে পারে।
এই দুষ্টচক্র নিত্য-নতুন কৌশলে আপনাকে বিভ্রান্ত করে আপনার আইডির দখল নিয়ে নিতে পারে। মাঝরাতে অথবা খুব ভোরে আধো আধো ঘুম ভেঙ্গে স্মার্টফোন হাতে নিয়ে যদি দেখেন আপনার আইডিটি হ্যাক হয়ে গেছে, কিংবা আপনার প্রিয়জনের সঙ্গে একান্ত আলাপ-চারিতা পাবলিক করে দিয়েছে কোনো ‍দুবৃত্ত-দুর্জন, কোন একান্ত ছবি, অডিও, ভিডিও। কী হবে আপনার অবস্থাটি ! এই আশীর্বাদের ফেসবুক তখন নরক যন্ত্রণা নিয়ে আপনার সামনে হাজির হবে মুর্তিমান অভিশাপ হয়ে।
আমাদের সতর্ক হবার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারি: 
১. ফেসবুকের পাসওয়ার্ডটি যথাসম্ভব বড় এবং জটিল করে দিতে পারি। অক্ষর, সংখ্যা ও সাংকেতিক চিহ্নের ব্যবহার করতে পারি।
২. নিয়মিত, সম্ভব হলে প্রতিমাসে একবার করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারি।
৩. অপরিচিত কোন ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এ্যাকসেপ্ট করা থেকে বিরত থাকতে পারি।
৪. কোন গ্রুপ বা পেজে লাইক কমেন্ট, শেয়ার দেয়ার আগে সেই পেজ এর কার্যক্রমগুলো ভালো করে কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করতে পারি।
৫. ঘন ঘন প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন বা নিজের ব্যক্তিগত ছবি, পারিবারিক তথ্য শেয়ারে যথাসম্ভব সংযম বজায় রাখতে পারি।
৬. নিজের বাসা, অফিসের ঠিকানা, লোকেশন, গন্তব্য এসব কিছু খুব প্রয়োজন না থাকলে পারসোনাল করে করে রাখতে পারি।
৭. কাউকে ঘোষণা দিয়ে ব্লক করা কিংবা কাউকে যথার্থ কারণ সত্ত্বেও বকাঝকা না করা, বরং নির্বিঘ্নে তার রাস্তা থেকে সরে আসা বাঞ্ছনীয়। অপ্রয়োজনীয় বাদানুবাদের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই লোকটি আমার ক্ষতির কারন হয়ে যেতে পারে কোন এক দুর্বল মুহুর্তেই।
*** একজন ভুক্তভোগীর অনুরোধে নিজের সামান্য অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাৎক্ষনিকভাবে লেখা। আপনাদের সকলের অভিজ্ঞতা ও মতামত জানতে পারলে সামাজিক এই যোগেোযোগ মাধ্যমে আমাদের পথচলা আরও সুন্দর হবে।
 
পাদটীকা:
ব্যকরণ মেনে সতর্কতা হয়না। এটা একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর কৌশল ও পথও পাল্টায়।
বিপদে পড়ার আগেই সতর্ক হোন। দেখে, শুনে, বুঝে পথ চলুন।পা হড়কাবেন না।
হ্যাপি ফেসবুকিং।
 
প্রতিক্ষণ/ এডি/ শাআ
=======

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G