১৮ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে শিক্ষকতা
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির চেষ্টা শুরু করি। সে সময় এনজিওতে কয়েকবার সুযোগ পেয়েছিলাম চাকরি করার। কিন্তু সাইকেল চালানোর ভয়ে চাকরির সেসব সুযোগ হাতছাড়া করেছি। আর এখন সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতে প্রতিদিন ১৮ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হয়।’বলেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বারমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষক সোমা ভট্টাচার্য্য।
দুর্গাপুর উপজেলা সদরে সোমা ভট্টাচার্য্যের বাড়ি। ছয় বছর আগে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। দুর্গাপুর সদর থেকে বারমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব নয় কিলোমিটার। প্রতিদিন এই নয় কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন।
নয় কিলোমিটার কাঁচা সড়কে ভাড়া করা মোটরসাইকেল ছাড়া নেই কোনো যানবাহন। বর্ষা মৌসুমে সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে ওঠে।
সোমা ভট্টাচার্য্য জানান, প্রতিদিন মোটর সাইকেলে যাওয়া-আসা অনেক খরচের ব্যাপার। তা ছাড়া সারা বছর যেসব মোটর সাইকেল ভাড়ায় চলে, সেগুলোর চালকেরা খুবই অদক্ষ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এসব চালকের মোটরসাইকেলে চড়া খুবই ঝঁুিকপূর্ণ। তাই তিনি প্রতিদিনের যাওয়া-আসার জন্য কারোর ওপর নির্ভর না করে নিজেই সাইকেল কিনে নিয়েছেন।
প্রতিদিন ১৮ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে কষ্ট হয় কি না জানতে চাইলে সোমা বলেন, ‘কষ্টতো হয়ই, কিন্তু অন্য কোনো উপায় যেহেতু নেই, তাই কষ্টটাই মেনে নিয়েছি।’
পরিবারের মানুষদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সোমা বলেন, বাবা-মা ও শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাশুর, দেবর সবাই খুবই প্রশংসা করেন তাঁর এই সাহসী উদ্যোগের। আর স্বামী উত্তম চক্রবর্তী আরও বেশি ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ।
গ্রামের মানুষজন কোনো মন্তব্য করে কি না জানতে চাইলে সোমা বলেন, প্রথম প্রথমএকটু-আধটু করত। কারণ, গ্রামের মানুষ এর আগে সালোয়ার-কামিজ পরা এনজিওকর্মীকে দেখেছেন সাইকেল চালাতে। কিন্তু শাড়ি পরে একজন স্কুল শিক্ষিকাকে সাইকেল চালাতে দেখার অভিজ্ঞতাটা তাঁদের কাছে নতুন ছিল। প্রথম প্রথম গ্রামের মানুষেরা আড়াল থেকে মোবাইল ফোনে ছবি উঠাত। আস্তে আস্তে সবার কাছে বিষয়টা স্বাভাবিক হয়ে যায়। আর এখন রাস্তার দুই পাশের গ্রামের মেয়েদের এবং তাঁদের পরিবারের কাছে সোমা ভট্টাচার্য্য অনুপ্রেরণা ও জীবন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন।