২৪ বছরের নারী, মুখভর্তি দাঁড়ি!!
সিফাত তন্ময়
প্রথম দর্শনে যে কেও ই ভূল করে বসবেন। আর ভূল করাটাই যে স্বাভাবিক, কারণ আমরা জানি শুধু মাত্র পুরুষরাই হতে পারেন মুখ ভর্তি দাঁড়ির অধিকারী কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটলো লন্ডনে । হারনাম কাউর, লন্ডনে একটি স্কুলের সহকারী এই শিক্ষিকা ২৩ বছরের যুবতী । কিন্তু তার মধ্যে রয়েছে পুরুষালি চিহ্ন, সামনাসামনি দেখলেই মিলবে তার মুখ ভরা কালো কুচকুচে দাড়ির । এই দাঁড়ি কিন্তু নকল নয়, আসল।
প্রতিদিন তিনি যখন স্কুলে যান, রাস্তায় বের হন, কোন ফাস্টফুডের দোকানে প্রবেশ করেন তখন সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাকে নিয়ে মজা করে। হাসাহাসি করে। তাতে হারনামের কিছু এসে যায় না। তাকে নিয়ে এই হাসাহাসির কারণ ওই কুচকুচে কালো দাড়ি। যা দেখে তিনি যে মেয়ে তা ঠাহর করা কঠিন। হারনাম এসব মেনে নিয়েছেন। বিশ্বাস করেন, বিধাতা ইচ্ছে করে তাকে দান করেছেন দাড়ি। তা তিনি কাটবেন না। কেউ হাসাহাসি করলে তাতে তার কি!
হারনাম বলেন, ঈশ্বরই আমাকে এভাবে সৃষ্টি করেছে। এতেই আমি খুশি। এই যুবতী পলিসিস্টিক ওভারি নামের একটি রোগে ভুগছেন। এই রোগ তার মুখে এই দাঁড়ি গজানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। তার শরীরেও আছে অতিরিক্ত লোম। এগার বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ছিলেন স্বাভাবিক একটি মেয়ে। এরপরই তার মুখে দেখা দিতে থাকে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এক সময় বিরক্ত হয়ে যান তিনি। অন্য মেয়েদের মতো কোমল মসৃণ ত্বক রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে মুখ শেভ করেন, ব্লিচিং করেন। সপ্তাহে দু’বার এ ধারা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হয় না। স্কুলে সবাই তাকে ক্ষেপাতে থাকে। দাড়ির ইংরেজি বিয়ার্ড বলে অনেকে তাকে বিয়ার্ডো নামে ডাকতে থাকে। কেউ বা তাকে নারী-পুরুষ বলে ডাকতে থাকে।
এতে এক সময় তিনি বিরক্ত হন। নিজেকে আটকে রাখেন ঘরের মধ্যে। নিজের সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। অনেকবার সিদ্ধান্ত নেন আত্মহত্যার। বয়স যখন ১৬ বছর তখন তিনি শিখ হিসেবে দীক্ষা নেন এবং দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন। আস্তে আস্তে তার মধ্যে আস্থা ফিরতে থাকে। তিনি বলেন,আমি নিজেকে লুকিয়ে রাখতাম এবং জনসম্মুখে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। আমার বেডরুমই ছিল আমার স্বর্গ। আমি নিজেকেই নিজেকে নিয়ে কাউন্সিল করতে শুরু করলাম।আমি নিজেকের মনকে বলতে শুরু করলাম : যে শক্তি দিয়ে তুমি তোমার জীবন শেষ করতে যাচ্ছো সেই শক্তি তুমি তোমার জীবনের পরিবর্তনের জন্য ব্যয় কর যা তোমার জীবনে সন্তোষজনক কিছু এনে দেবে।
আমি আমার শরীরকে ভালবাসতে শুরু করলাম এবং সেটা কোনো শর্ত ছাড়াই। তিনি তার আত্মহত্যা প্রবণতা, হতাশা এবং ক্ষতিকর সব আচরণ অতীতে কাছে ফিরিয়ে দিলেন। আর সমাজে তিনি তার দাঁড়ি নিয়ে একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করলেন। আমি আমার দাঁড়ি ধর্মের কারণে রাখতে শুরু করলাম। আর এখনতো আমি বিশ্বকে আমার দাঁড়ি দিয়ে ভিন্ন অনুভূতি দিতে পারছি এবং নিজেকে অনেক আত্মপ্রত্যয়ী মনে হচ্ছে। এখন আমি আমার দাঁড়ি নিয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করি।
প্রতিক্ষণ/এডি/এস. টি.