গোলাম আযমের আপিল অকার্যকর ঘোষণা
দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পর জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের মামলার আপিল আবেদনটি অ্যাবেটেড (মামলার কার্যক্রম বাতিল) ঘোষণা করলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২ নং কার্যতালিকায় আদেশের জন্য গোলাম আযমের মামলাটি রাখা হয়েছিলো। সেখানে লেখা ছিলো প্রফেসর গোলাম আযম বনাম চিফ প্রসিকিউটর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
জামায়াতের এই প্রয়াত নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই ৯০ বছরের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
সে রায়ের বিরুদ্ধে তিনি ২০১৪ সালের ৫ আগষ্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি আপিল আবেদন দায়ের করেন। এরপর ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর এ মামলার আপিল আবেদনটি শুনানীর জন্য দিন ধার্যক করা হয়। ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন গোলাম আযম।
মারা যাওয়ার দীর্ঘ্য প্রায় ছয় মাস পর তার মামলাটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করলো আপিল বিভাগ। অর্থাৎ এ মামলার কার্যক্রম আর চলবে না বলে ঘোষণা দিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী কোন মামলা চলাকালে যদি এ মামলার আসামি মারা যান তাহলে মামলাটি আর চলে না। তখন এ মামলার কার্যক্রম বাতিল করে দেয়া হয় আদালতের পক্ষ থেকে। গোলাম আযমের মামলার ক্ষেত্রেও তাই করা হলো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, গোলাম আযমের মৃত্যুর কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলাটি আজ থেকে অকার্যকর হয়ে গেল। এর আগে তিনি এ ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর পর কারো মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার বিধান নেই। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এ মামলার আপিল অকার্যকর ,বাতিল হয়ে গেল।’
জানতে চাইলে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মাদ মনির বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী কোন মামলা চলাকালে যদি এ মামলার আসামি মারা যান তাহলে সে মামলাটি আর চলতে পারে না। তখন আনুষ্ঠানিক ভাবে আদালত এ মামলার কার্যক্রম বিলুপ্ত/ বাতিল ঘোষণা করে দেন।
তিনি বলেন, যেহেতু গোলাম আযম তার রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলেন। সে আপিলটি এখনো চলমান কিন্তু তিনি মারা যাওয়ায় তার সাজার বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলের কার্যক্রম চলবে না, শুনানীও হবে না। কারন তিনি মারা গেছন।
তিনি আরও বলেন, মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা কোন ফৌজদারি মামলা চলে না। তাই আদালত তার মামলার কার্যক্রম অনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাবেটেট বা বিলুপ্তি ঘোষণা করলেন আদালত।
এর আগে একই অপরাধে অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আব্দুল আলীম মারা যাওয়ায় তার আপিল মামলাটিও অকার্যকর ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ।
উল্লেখ্য, ৯২ বছর বয়সী গোলাম আযম গত ২৩ অক্টোবর রাতে দণ্ড ভোগ করা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) মারা যান। অসুস্থতার কারণে রায়ের আগে থেকেই ওই হাসপাতালের প্রিজন সেলে রেখে বিচার করা হয়। রায়ের পরও সেখানেই ছিলেন তিনি।
মানবতাবিরোধী অপরাধে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের ৬১টি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। পাঁচ ধরনের অভিযোগেই তার ভিন্ন ভিন্ন সাজা হয়। সব মিলিয়ে তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বার্ধক্যজনিত কারণে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এর মধ্যে এক নম্বর ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১০ বছর, ২ নম্বর অভিযোগে পাক হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতায় ১০ বছর, ৩ নম্বর অভিযোগে ব্যক্তিগতভাবে নির্যাতনের দায়ে ২০ বছর, ৪ নম্বর পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ততায় ২০ বছর এবং ৫ নম্বর হত্যা ও গণহত্যায় জড়িত থাকায় ৩০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর রায়ে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে খালাস চেয়েছিলেন গোলাম আযম। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালের সাজা অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে তার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড ও জামায়াত নিষিদ্ধের আবেদন জানিয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষও।
অন্যদিকে বিচার চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে গত ১২ ফেব্রুয়ারি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২। মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা একেএম ইউসুফের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে ছিল।
প্রতিক্ষণ /এডি/রেশমা