হারিয়ে যাওয়া প্রাণী এক রাতের জন্য জীবন্ত

প্রকাশঃ মার্চ ২, ২০১৫ সময়ঃ ১:৫৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৫৬ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপার্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

Attenborough___1882426a

আচ্ছা, ভেবে দেখুন তো! কোটি কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর বুকে জায়গা করে নেওয়া প্রাণীগুলো যদি এখন আপনার সামনে হেঁটে বেড়ায়, তবে কেমন হবে?  তারা আপনার কাছে এসে আপনার গায়ের গন্ধ নিচ্ছে,শিকার করছে,আবার তাদের ছোট্ট বাচ্চাগুলো আপনাকে দেখে লুটোপুটি খাচ্ছে,আবার কেউ কান ফাটানো হুঙ্কার দিচ্ছে! আপনি কি ভয় পাবেন? নাকি ঘুরে দেখবেন এ রহস্যময় রোমাঞ্চকর জগৎ?

তাহলে চলুন, স্যার ডেভিড অ্যাটেনবার্গের সাথে ঘুরে আসি লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে। যেখানে এই প্রখ্যাত প্রকৃতিবিদ কল্পনার চোখে দেখেছেন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অসংখ্য প্রাণীকে। অসাধারন থ্রি-ডি ইফেক্ট, CGI( Computer Generated Imagery) টেকনোলজী এবং সদ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার উপর ভিত্তি করে এক রাতের জন্য জীবন্ত হয়ে উঠেছিল ধরণীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া প্রাণীগুলো।

রাতের বেলা কিভাবে মিউজিয়ামে থাকবেন তা নিয়ে আপনাকে চিন্তিত হতে হবে না। স্যার ডেভিড, গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে আপনাকে লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করবেন। গার্ডের সদর দরজা বন্ধ করা মাত্রই শুরু হবে কোলাহল মুক্ত, শান্ত পরিবেশে আপনার অনন্য অভিযাত্রা।

প্রথমেই দেখবেন ১৮৬২ সালে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর রিচার্ড ওয়েন কর্তৃক সংরক্ষিত অর্ধেক সরীসৃপ, অর্ধেক পাখিরূপী ‘আর্কেওপ্টেরিক্স’ এর ফসিল। শুধুমাত্র ফসিলটি বিশ্লেষণ করে তার আকার আকৃতি কেমন হতে পারে ডেভিড অ্যাটেনবার্গের বর্ণনায় শুনে নিন আর কল্পনার চোখ মেললেই দেখতে পাবেন এটি ডানা ঝাপটে জাদুঘরময় উড়ে বেড়াচ্ছে! এটিই কি তাহলে সবচেয়ে বড় পাখি ছিল? প্রশ্ন করতেই কাঁচের দেয়াল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে ‘মোয়া’ যাকে বিশালতার দ্বন্দ্বে ঈগলের শত্রু মনে করা হয়! এদের ছোটখাট একটা যুদ্ধও দেখা হয়ে যাবে!

ঘুরে আসবেন বিভিন্ন আর্কাইভ, বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র, চিঠি, পোস্টার, হ্যান্ডবিল, গবেষণাগার। জানবেন অনেক অজানা তথ্য। প্রযোজক অ্যান্থনি গিফেন এর মতে,একটানা ১০ রাত সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৪:৩০ পর্যন্ত পরিশ্রম করে ৯০ মিনিটের এই তথ্যচিত্র বানিয়েছেন ৮৭ বছর বয়সী স্যার ডেভিড ফ্রেডরিক অ্যাটেনবার্গ।

শব্দকৌশলের কারিগরিতে শিহরণ জাগাবে বিশালাকৃতির ‘লেভিয়াথন’, যা কি না হাতির আত্মীয় শ্রেণীর। এর গঠন নিয়েও বিজ্ঞানী কশ এবং ওয়েন এর মধ্যে ছিল তর্ক-বিতর্ক। আপনার সহযাত্রী স্যার ডেভিড এর হাড্ডিগুলোর পুনর্বিন্যাস করে আপনাকে এর আসল কাহিনী বুঝিয়ে দিবেন!

কখনো তৈলচিত্রের পাখি ‘ডোডো’ জীবন্ত হয়ে উঠবে,যা কি না দেখতে অনেকটা কবুতরের মত ছিল,আবিষ্কার করবেন তুষার মানবের অস্তিত্বের রহস্য, পাতাগনিয়ার ‘গ্রিজলি বিয়ার’, বিশালাকৃতির বিড়াল ‘স্মাইলডন’ এবং ২৫ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া দৈত্যাকৃতির সাপ ‘জাইগান্টোফিস’ এর শিকার করার কৌশলটাও দেখবেন।

ফিশ লিজার্ড-‘ইকথায়োসরস’ যা অনেকটা ডলফিনের মত। আসলেই কি এরা সমগোত্রীয়? একটা প্রতিযোগীতার আয়োজন করেই জেনে নিন না আসল রহস্যটা! দেখা মিলবে ডাইনোসর, রাইনোসর,ট্রাইসেরটপ্স এর সাথে, যাদের নিয়ে গবেষণা এখনো বিদ্যমান। দুষ্টুমিতে মেতে উঠবেন ছোট্ট ‘সরোপড’ এর সাথে। সবচেয়ে বড় প্রাণী যেটি পৃথিবীর বুকে হেঁটেছিল, ‘ডিপ-লো-ডো-কাস’ ডাক নাম ‘ডিপ্পি’, রক্ত-মাংসের মিশেলে সে ই বা দেখতে কেমন ছিল তাও কল্পনা করে নিতে পারবেন।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, একটু পরেই আবারো দর্শনার্থীর আগমনে মুখর হয়ে উঠবে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম।এক রাতের জন্য জেগে ওঠা হারিয়ে যাওয়া বন্ধুগুলো আবার ফিরে যাচ্ছে নিজের জায়গায়।প্রকৃতির বিরূপ আচরণ এদের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়েছে চিরতরে। আমরা কি পারবো পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াল থাবা থেকে আজকের বন্ধুদের টিকিয়ে রাখতে? পারবো তো জীববৈচিত্রের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে?

প্রতিক্ষণ/এডি/রানা.সূত্র:ওয়েবসাইট

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G