ইতিহাসের আলো গান্ধী আশ্রম
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
ব্রিটিশ শাসনামলে উপমহাদেশের স্বাধীনতার অগ্রদূত মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশি মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিল ভারতবর্ষের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে গান্ধীর আদর্শ অনুপ্রাণিত করেছিল বাংলা ব-দ্বীপের লাখো মানুষকে। স্বদেশি চেতনায় সারা ভারতবর্ষের মতো বাংলায়ও এ সময় গড়ে ওঠে অনেক গান্ধী আশ্রম।
১৯৩৪ সালে জামালপুর মহকুমা কংগ্রেসের সম্পাদক নাসির উদ্দিন সরকার মেলান্দহ উপজেলায় গড়ে তোলেন এক গান্ধী আশ্রম।জামালপুর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঝিনাই নদীর তীরে তাঁর নিজের গ্রাম কাপাসহাটিয়ায় আশ্রমটির অবস্থান।
গান্ধীভক্ত নাসির সরকার এ আশ্রমে গ্রামের মানুষকে স্বদেশি চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে চরকায় সুতা তৈরি, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও শরীরচর্চা কার্যক্রম চালাতেন। এই আশ্রম তখন পরিণত হয়েছিল ওই অঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষের মিলনমেলায়।
বিভিন্ন সময়ে এ আশ্রমে এসেছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, কৃষক নেতা হাতেম আলী খান, আবদুস সাত্তার, হেমন্ত ভট্টাচার্য, খন্দকার আবদুল বাকীসহ অনেক বিশিষ্টজন। তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক বৈঠকেও মিলিত হয়েছিলেন এখানে।
দেশ ভাগের পর মুসলিম লীগের সমর্থকরা ১৯৪৮ সালে গান্ধী আশ্রমটি গুঁড়িয়ে দেয়। তাদের হামলায় বুকের পাঁজর ভেঙে গুরুতর আহত হন নাসির উদ্দিন সরকার। হামলার পর টিকে থাকে শুধু আশ্রমের অফিসঘরটি। কালের বিবর্তনে মেলান্দহের বাতিঘর গান্ধী আশ্রম বন্ধ হয়ে যায়।
বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই আশ্রমটি আবার পুনর্জাগরিত করেছেন ওই এলাকার মানুষ। শুধু তাই নয়, ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারণ করে আশ্রমে গড়ে তুলেছেন মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর। গান্ধী আশ্রম ও মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর ওই অঞ্চলের নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
ভারতবর্ষের ইতিহাসের ক্রমবিকাশ ও ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ ও পাকিস্তান পর্বসহ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে এই জাদুঘরের কর্মীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জাদুঘরটি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরছে ইতিহাসের আলো।
প্রতিদিন কাপাসহাটিয়ার গান্ধী আশ্রম ও মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘরে শিক্ষার্থী ছাড়াও আসেন অনেক দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী। এখানে স্বদেশি আন্দোলন সময়কার আশ্রমে ব্যবহৃত চরকা, চেয়ার-টেবিল, পুরোনো সিন্দুক, তখনকার ছাত্রীদের তৈরি নানা সূচিকর্ম ছাড়াও আশ্রমের পাঠাগারে রয়েছে দুর্লভ বইয়ের এক বিশাল সংগ্রহশালা। রয়েছে মুক্তিসংগ্রামের নানা স্মৃতিচিহ্ন, ছবি, বিভিন্ন বধ্যভূমির মাটি। নিয়মিত প্রদর্শন করা হয় ইতিহাসের প্রামাণ্যচিত্র। গ্রামের মানুষকে স্বনির্ভর করতে বিনা মূল্যে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এখানে।
এক একর জমির ওপর স্থাপিত জামালপুরের এই গান্ধী আশ্রম ও মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর হাজারো দর্শনার্থীর ইতিহাস চেতনাকে করছে সমৃদ্ধ। নতুন প্রজন্ম ও দর্শনার্থীর মনে ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশপ্রেম, সংগ্রামের সাহস ও প্রেরণা।
প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ