মুসলমান কি বিষণ্নতায় ভুগতে পারে?
ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
মনস্তাত্ত্বিক জরিপ মোতাবেক বর্তমান যুগে মানুষের একটা বড় অংশই কোনো না কোনো ধরনের বিষণ্নতায় আক্রান্ত এমনকি ছোট ছোট শিশুরাও। তাই আদর্শ মুসলমান হওয়ার সাথে এর সম্পর্ক নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলাম চায় মুসলমানের জীবনে ভারসাম্য আনতে। এ জন্য চায় জীবনের বিভিন্ন দিককে সঠিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন এবং অগ্রাধিকারের পুনর্বিন্যাস করতে। ইসলাম আরো চায় ব্যক্তি এবং তার ভেতর ও বাইরের পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্কগুলোর যাবতীয় বিষয়কে সমন্বিত করতে।
আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা আল কাসাসের ৭ নম্বর আয়াতে বলছেন ‘আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তার দ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান করো। তবে ইহকালে তোমার যে ন্যায্য অংশ, তাকে অবহেলা কোরো না। তুমি অনুগ্রহ করো, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে চেষ্টা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’
মানুষ বিষণ্নতা বা দুঃখ বোধ করে যখন এই সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। ইসলাম মানুষের এই মানসিক অবস্থার নিন্দা জানায় না। বরং মন ও মনস্তত্ত্বের দিক দিয়ে ভারসাম্য ফিরে পেতে তাকে সাহায্য করে।
বিষণ্নতা কী?
পরিস্থিতিগত বিষণ্নতা (অস্থায়ী গভীর দুঃখবোধ) এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে বর্ণিত বিষন্নতার মধ্যে যে পার্থক্য আছে, তা আপনি জানেন বলেই মনে হয়। ডাক্তাররা বিষণ্নতা বলতে যা বুঝিয়ে থাকেন সেটা মানসিক স্বাস্থ্যের এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। আপনার কাজকর্ম, পড়াশোনা, আহার, নিদ্রা, আনন্দ-বিনোদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই বিষণ্নতার সমস্যা সাময়িক ভার নয়। এটা নয় ব্যক্তিগত দুর্বলতার চিহ্ন। ইচ্ছা করলেই তা দূর করা যায় না। এটা হচ্ছে মস্তিষ্কের (স্নায়ু রসায়ন) রাসায়নিক পরিবর্তন। এর ফলে মনের বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হয়, যার প্রতিকারের উপায় হলো পেশাদার চিকিৎসকের সহায়তা।
বিষণ্নতার কারণ বহু। এতে বংশগত, মনস্তাত্ত্বিক এবং পরিবেশজাত নানা উপাদান প্রায় সময় জড়িত থাকে। তবুও বলতে হয়, আপনার মস্তিষ্কের রসায়ন এবং আপনার জীবন-অভিজ্ঞতার সম্পর্ক দু’মুখো পথের মতো। এ কথা সত্য যে, কিভাবে বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন, তা মস্তিষ্ক দ্বারা প্রভাবিত হয়। আবার এটাও তো বাস্তব যে, আপনি যেভাবে নিজের সমস্যার সমাধান এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে থাকেন, তা আপনার মস্তিষ্কের ভাব-রসায়নের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
এ কারণে যাদের আত্মমর্যাদাবোধ নিম্নমানের, যারা অব্যাহতভাবে হতাশাবাদী, যারা চাপের ফলে দ্রুত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, কিংবা যাদের মারাত্মক শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে, তারা সহজেই বিষণ্নতার শিকার হন।
মুসলমান কি বিষণ্ন হতে পারেন?
মুসলমান হওয়ার জন্য আপনি কেবল আল্লাহর কাছে আপনার ইচ্ছাকে সমর্পণ করেন, আর কারো কাছে নয়। আপনি বিশ্বাস করেন, আপনি যতক্ষণ তার সাথে সম্পর্ক রাখবেন, তিনি ততক্ষণ খুব ভালোভাবে আপনার যত্ন নেবেন, যা কিছুই ঘটুক না কেন।
মানুষ হিসেবে আপনি নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেন। অতএব আপনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে জীবনপথে এগিয়ে যান। আপনার জ্ঞান ও যোগ্যতার আওতায় যা আছে কেবল তা নিয়েই আপনি উদ্বিগ্ন। বাকিটা আপনি সোপর্দ করেন আল্লাহর প্রজ্ঞার ওপর।
অস্তিত্ববাদীদের যে উদ্বেগ, তা মারাত্মক দুঃখের হেতু হতে পারে। কারণ সে অবস্থায় একজন মানুষ বুঝতে চেষ্টা করে কেন আমি এখানে, আমি যাচ্ছি কোথায় এবং যেভাবেই হোক আমি যখন মরবোই, আমার বেঁচে থাকার অর্থটা কী।
মুসলমান হিসেবে অন্য সবার মতো আপনিও জীবনের দুঃখকষ্ট ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন। কিন্তু আপনি অন্যদের চেয়ে অনেক ভালোভাবে এসব কিছুর মোকাবেলা করতে সক্ষম। এর কারণ হলো, কোত্থেকে এসেছেন, কোথায় যাচ্ছেন এবং কেন এসবের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ আছে আপনার। অতএব আগে থেকেই আপনার বিশেষ সুবিধা আছে উৎস থেকে মৌলিক জ্ঞান লাভ করার।
অন্য কথায়, অস্তিত্ববাদীদের মতো কোনো শূন্যতা আপনাকে গ্রাস করতে পারে না। আমাদের জীবনের রয়েছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। সে মোতাবেক জীবনের যথাসাধ্য সদ্ব্যবহারের জন্য এর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই আপনার কাছে গুরুত্ব পাবে। আপনি এমন সব সিদ্ধান্ত নেন, যেগুলো মন্দ সময়ে আরো মন্দ বোধ করার কারণ ঘটাবে না।
সঙ্কটের সম্মুখীন হলে যিনি পুরোপুরি ভেঙে পড়েন এবং বোধ করেন চরম একাকিত্ব, তিনি অসহায় ও বিষণ্নতা বোধ করার আশঙ্কা আছে। কিন্তু যিনি অনুভব করেন যে, দয়াবান আল্লাহ তার সহায় হবেন (যিনি যথাযথভাবে যত্ন নেন, আকুল প্রার্থনায় যিনি সাড়া দেন আর যিনি বিপুল সাহায্য মঞ্জুর করেন) সে ব্যক্তি অনেক দ্রুত গতিতে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি। কেননা, জীবনের বিপদ-বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলে তাকে সাহায্য করার মতো শক্তিশালী হাত রয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ