স্ত্রীর নির্যাতনে স্বামীর প্রতিকার
আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমি দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্সে খুব ভালো ফল করি। সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রথম শ্রেণীর চাকরিও পাই।
তার কিছুদিন পর এক মেয়েকে পছন্দ হলে আমার এক সহকর্মী ওই মেয়ের অভিভাবকের কাছে আমার বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মেয়ের অভিভাবক আমার চাকরি ও সামাকি মর্যাদা দেখে পছন্দ করেন। তাঁদের মেয়েকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হন।
তাঁরা আমার পরিবার ও বাড়িঘর দেখার দরকার মনে করেননি। আমি আমার দু-তিনজন নিকটাত্মীয়সহ কয়েকন সহকর্মীকে নিয়ে বিয়ে করে ফেলি। বিয়ের পর আমাকে সে পছন্দ করে না বলে বৈবাহিক সম্পর্কে আপত্তি করতে থাকে। তার অন্য এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পারি। আমি তার মা-বাবাকে বিষয়টি জানালে তাঁরা তাকে প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং পরে এক প্রকার জোর করে সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
মেয়েটি ওই ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে। কিছুদিন ফোনে ও বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগও করে। আমি ছেলেটিকে চিনে ফেলায় এবং তাদের যোগাযোগে বাধা দেওয়ায় আমার ওপর সে ক্ষিপ্ত হয়। ধীরে ধীরে সে তার পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনে। তার পরিবারকে বোঝাল সে সংসারে খুব মনোযোগী। বাস্তবে আমার সঙ্গে সে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আচরণ করতে থাকে।
আমার বাবা, মা ও আত্মীয়স্বনের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে মা-বাবাসহ সবাই আমাদের বাসায় আসা বন্ধ করে দেন। এমনকি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও আমাকে সে বিভিন্নভাবে মানসিক যন্ত্রণায় রাখে। আমাদের একটি সন্তান হয়। আমার আয় সীমিত।
সন্তানের এই দরকার, সংসারের ওই দরকার—এ রকম বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সে আমার ওপর অর্থনৈতিক চাপ দিতে থাকে। সে সন্দেহ করে, আমি নাকি আমার মা-বাবাকে টাকা দিয়ে থাকি। সন্দেহ দূর করার ন্য আমার বেতন-ভাতা বাবদ সব আয়ের হিসাব তাকে দেখাই।
কিন্তু কিছুতেই সন্দেহ দূর করতে পারি না। এদিকে তার মা-বাবাকে বিষয়গুলো জানালে তাঁরা বলেন, তোমাদের সংসার, তোমরা আলোচনা করে নাও। এভাবে ছয় বছর কেটে গেল। সম্প্রতি আমাকে গাড়ি কিনে দেওয়ার ন্য প্রচণ্ড চাপ দিতে থাকে। আমি তাকে বলি, আমার আয় দিয়ে সংসার চালিয়ে গাড়ি কেনা সম্ভব নয়।
সামাজিক দিক বিবেচনা করে ও সন্তানের দিকে তাকিয়ে সবকিছু নিজের মধ্যে চেপে রাখি। কী করব বুঝতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো মানসিক রোগী হয়ে যাব। পত্রিকায় শুধু নারী নির্যাতন ও যৌতুকের কথা লেখা হয়।
সমাজের কত পুরুষ স্ত্রী দ্বারা মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়, তা কোনো দিন লেখা হয় না। পুরুষের আয় ও সাধ্যের বাইরে বিভিন্ন নিয়ে ঝগড়া ও মানসিক নির্যাতন করলে এটাকে কি যৌতুক বলা যায় না? একজন নারী দ্বারা যে পুরো একটা পরিবার বৃদ্ধ পিতা-মাতা (ছেলের) নির্যাতিত ও অবহেলিত হয়, তা কখনো কেউ লেখালেখি করে না।
এ রকম ক্ষেত্রে একজন পুরুষের কী করা উচিত? আইনে কি প্রতিকারের পথ আছে? নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ: প্রথমত বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করুন। স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। যদি এতে কাজ না হয় তাহলে দুজনে বিচ্ছেদ চান কি না সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
দ্বিতীয়ত আপনার কাছে যদি বিয়ে ভাঙার শর্তে কোনো অন্যায় দাবি-দাওয়া করে তাহলে এটিও ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন অনুযায়ী যৌতুক হিসেবে গণ্য হতে পারে। এ আইনে যৌতুক শুধু স্বামীই দাবি করবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। যে কোনো পক্ষ দাবি করার কথা বলা আছে। তাই স্বামীও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এই আইনে প্রতিকার চাইতে পারেন। তবে আপনার স্ত্রীর দাবি যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন— এলিনা খান আইনীবী ও মানবাধিকারকর্মী
প্রতিক্ষণ/এডি/সাইমুম