বুক জ্বালায় কি করবেন?
হেলথ ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
বুক জ্বালা-পোড়া করা বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ মানুষেরই একটি কমন সমস্যা। সাধারণত খাবার খাওয়ার পর এ সমস্যাটি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গ হিসেবে বুক জ্বলে, বুকে চাপ চাপ লাগে। শুয়ে পড়লে বা বসলে সমস্যাটি না কমে আরো বাড়ে।
বুকজ্বলা নিয়ন্ত্রণে থাকলে রোগটি সহনীয়। তবে নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অনেক কষ্ট করতে হয়। রোগটি থেকে অন্য অসুখও হতে পারে। বুকজ্বলা থেকে ইসোফেজাইটিস, আলসার, রক্তপাত, স্টিকচার ও ইসোফেজিয়াল ক্যান্সারও হতে পারে।
যদি কারও সপ্তাহে অন্তত দুবার বা তার বেশি এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তবে ধরে নিতে হবে তিনি ক্রনিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন।আমরা যখন খাবার গেলার পরে সেটা ইসোফেগাস হয়ে পাকস্থলীতে যায়। ইসোফেগাস ও পাকস্থলীর মধ্যে একিট ভাল্ব থাকে। পাকস্থলীতে খাবার প্রবেশের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। পাকস্থলীতে খাদ্য হজমের জন্য এসিড তৈরি হয়। যদি কোন কারণে এই ভাল্ব যথাসময়ে বা ঠিক মতো বন্ধ না হয় তবে পাকস্থলী থেকে কিছু এসিড ইসোফেগাসে চলে আসে। তখনই বুক জ্বালা বা ব্যাথা করে। খাবারের অনিয়মের পাশাপাশি আরও যেসব কারণে রোগটি হয় তার মধ্যে আছে-
* অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া করা
* খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া
* শরীরের ওজন বেশি হওয়া
* রাতে দেরি করে খাওয়া
* লেবু, টমেটো, চকোলেট, রসুন, পেঁয়াজ, মসলাযুক্ত ও ঝাল খাওয়া
* অ্যালকোহল, কোমলপানীয়, কফি, চা পান করা
* ধূমপান করা
* গর্ভধারণ করা
* ব্যথানাশক, মাসল রিল্যাক্স্যান্ট ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেবন ইত্যাদি।
এ সময় শুধু যে বুকজ্বলা, বুকে ব্যথা লক্ষণ হিসেবে থাকে তা নয়। লক্ষণ হিসেবে আরো থাকতে পারে-
* বুকে ও পাকস্থলীর ওপরিভাগে অস্বস্তিবোধ
* গলায় তেতো স্বাদ
* টক ঢেকুর ওঠা
* কালো রঙের পায়খানা
* বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া
* গলায় খাবার আটকে আছে, এমন অনুভূতি
* বারবার হেঁচকি ওঠা, সহজে হেঁচকি বন্ধ না হওয়া
* বমি ও বমি বমি ভাব
* আকস্মিকভাবে ওজন কমে যাওয়া
* গলার স্বর কর্কশ হয়ে যাওয়া
* গলায় বারবার ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।
সাধারণত জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কিছু নিয়ম মেনে চললে গ্যাস্ট্রিক থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা সম্ভব। যেমন:
* ওজন কমান
* ধূমপান পরিহার করে চলা
* ভারী খাবার এড়িয়ে চলা
* অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ঝাল খাবার কম খাওয়া
* টকজাতীয় খাবার কম খাওয়া
* একসঙ্গে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া
* শোয়ার সময় উঁচু বালিশ ব্যবহার করা
* শোয়ার দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া
* ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া
* দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে বিছানায় না শুয়ে আরাম কেদারা বা চেয়ারে অল্প সময় ঘুমের অভ্যাস করা
* টাইট কাপড় বা বেল্ট ব্যবহার না করা
* প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটা বা কিছু ব্যায়াম করা
* পর্যাপ্ত পানি পান করা
* খাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম না করা
* অ্যান্টাসিড-জাতীয় ওষুধ সেবন করা।
সাধারণ অ্যান্টাসিড-জাতীয় ওষুধ ও জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তনের পরও যদি যন্ত্রণা লাঘব না হয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল