সিটি নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য নেতা চাই

প্রকাশঃ এপ্রিল ৩, ২০১৫ সময়ঃ ৫:৫৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৪ অপরাহ্ণ

সাহাদাত সাঈদ

unnamedরাজনীতি মানে নাকি রাজার নীতি। আর একটু বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝি নীতির রাজা বা শ্রেষ্ঠ নীতি। অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ নীতির আদর্শে যে নীতি গঠিত হয় সেটাই রাজনীতি।

কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি রাজনীতি মানে নীতি-নৈতিকতাহীন নেতা ও রাজনীতি। রাজকীয় নীতি রাজনীতি থেকেই বের হয়। রাজনীতির সাথে নেতা ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। নেতা ছাড়া রাজনীতি কল্পনাই করা যায় নায়। যাদের হাত ধরে নীতি সংসদ ভবন থেকে বের হয়। তাদের থেকে যদি নীতি-নৈতিকতা নির্বাসন হয়। তাহলে দেশ ও জাতির কল্যাণ তো হবেই না, হবে দেশ ও জাতির গোরস্থান।

আসছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন কোম্পানীর বিজ্ঞাপনী অফারের মত নানা লোভনীয় অফার দিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। রাস্তার বিলবোর্ড ছেঁয়ে গেছে তাদের নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে। এখন ভাববার বিষয় আপনি কি তাদের প্রতিশ্রুতিতে ভুলে নীতিহীন নেতা নির্বাচন করবেন, না সৎ, যোগ্য নীতিবান নেতা নির্বাচন করবেন।

নির্বাচন এলে প্রার্থীরা যেমন গাল ভরা প্রতিশ্রুতি দেন, তেমনি শোনা যায় তারা টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হন ভোটারের দোর গোড়ায়। তখন তারা সবাই ব্যস্ত থাকেন ধনী-গরীব,আবাল-বৃদ্ধবনিতা সবার সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার। যাদের দিকে তারা কখনো ফিরেও তাকাতো না তাদেরকেও নেতারা জাড়িয়ে ধরেন, বুকে টেনে নেন।

জাতীয় ও সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের নানা ধরনের তথ্য গণমাধ্যমের কল্যাণে সবার সামনে উন্মোক্ত। দেখা যায় প্রার্থীর আয়ের চেয়ে স্ত্রীর বা অন্য আত্মীয়-স্বজনের আয় বেশি। তার মানে কি দাঁড়ায়? অবশ্যই সে আয়ের হিসাব গোপন রাখছে।
এছাড়াও নানা ধরনের দুর্নীতি, খুন, রাহাজানীর মামলাতো তার উপর আছেই। কারো কারো নামে দেখা যায় ভূমি দখল, সরকারি কোষাগারে রাখা গরীবের খাবার মেরে দেয়ার অভিযোগ।

আজকে রাজনীতির মাঠে নীতিহীন নেতার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তারা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজীসহ নানা ধরনের অপকর্মের মহোৎসব পালন করে। সমাজসেবার নামে ফটোবাজি করে সমাজের বারোটা বাজায় এসব রাজনীতির নামে ঘৃণ্য দালালরা। এমপি মন্ত্রীদের ছবির সাথে রঙচটা পোষ্টার ছাপিয়ে তারা বড় নেতা বনে যায়। অনুষ্ঠানের নামে চলে চাঁদা তোলার মহড়া। এসব নেতারা স্বার্থের জন্য কারো পায়ে মাথা ঠেকাতেও দ্বিধা করে না। আবার স্বার্থের জন্য কারো কপাল ফাটাতেও দ্বিধা করে না।

এ ধরনের নেতা কি আসলেই আপনার নেতা হওয়ার যোগ্য। সে কি থাকবে নির্বাচনের পর আপনার পাশে, নাকি সে নির্বাচন শেষে অচিনপুরে পাড়ি জমাবে। কোন দিন খোঁজ খবর নিবে না। পাঁচ টাকার চা, দুই টাকার বিড়ি দিয়ে যদি আপনি ভোটটা অপাত্রে ফেলেন, তাহলে মনে রাখবেন আপনার এই সাত টাকা বিনিয়োগ করে সে কামাই করবে ৭ শত কোটি টাকা। সুতরাং সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নেবার।

নীতিহীন রাজনীতিকরাই রাজনীতিকে বেশি কলুষিত করেছে। এরা খুবই ভঙ্গুর চরিত্রের। আজকের নেতারা নীতির চর্চা করেন না তাইতো জাতি আজ নৈতিকতাহীন ও মেধা শূন্য হয়ে পড়ছে। তারা তাদের লাভের আশায় দেশের বারোটা বাজাতে একটু চিন্ত্ওা করছে না। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, খুনি,ছিনতাইকারী,মাদক ব্যবসায়ীরা যখন সমাজের নেতৃত্বে আসে তখন তারা মানুষের জন্য কি করবে? ধান্দাবাজদের নেতৃত্বে সমাজ কখনোই এগিয়ে যাবে না। তাই সমাজ থেকে এদের উৎখাত করতে হবে।

বাংলাদেশে মেধাবী সৎ, নীতিবান ভালো মানুষের অভাব নেই। যদি ভালো মানুষের চেয়ে খারাপ মানুষ বেশী হত, তাহলে ঘরবাড়ির চেয়ে জেলখানা বেশী থাকত। আসল কথা হচ্ছে অল্প কিছু খারাপ মানুষের দাপটে ভালো মানুষেরা নিশ্চুপ। এছাড়াও যারা ভালো মানুষ সেজে বসে আছে তারাও আসলে ভাল মানুষ নয়- ভালো মানুষের মত অভিনয় করা খারাপ মানুষের দল। এদের ভয়ে বসে থাকলে চলবে না। মনে আপনি একা কিন্তু সবাই মিলে আমরা একা নই। সাহস করে এগিয়ে আসুন সঙ্গী পাবেন।

তাই এখন সময় এসেছে আপনি কাকে আপনার নীতির কারিগর বানাবেন। কে আপনার নেতা হবে। পাঁচ টাকার চা, দুই টাকার বিড়ির কাছে আপনার বিবেককে বিকিয়ে দিবেন। নাকি সৎ, যোগ্য ও শিক্ষিত লোক যদি আপনাকে কিছু নাও খাওয়াতে পারেন তাকে আপনার ভোটটা দিবেন।

লেখক: সাংবাদিক ও লেখক

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G