ঠোঁট যার সৌন্দর্যের উপমা!
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ঠোঁট কোন পাখির? বেশিরভাগের মতেই সেটা ধনেশ পাখির ঠোঁট। এদের ঠোঁটের গড়ন যেমন অদ্ভুত ও অনন্য, তেমনি বাহারি তাদের রং। ধনেশের ইংরেজি নাম Hornbill. বিভিন্ন প্রজাতির ধনেশের ঠোঁটের সৌন্দর্যে পার্থক্য রয়েছে। কিছু ধনেশের ঠোঁটে নয়নাভিরাম কালো দাগকাটা থাকে। কিছু ধনেশের আবার ঠোঁটের উপর গন্ডারের শিঙ্গের মত বাড়তি অংশ রয়েছে। তবে, সব ধনেশের ঠোঁটের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো- এগুলো বড়, ভারী আর নিচের দিকে বাঁকানো।
ধনেশ হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র পাখি যাদের ঘাড়ের প্রথম দুইটি হাড় ‘এক্সিস’ ও ‘এটলাস’ একটি অপরটির সাথে লাগানো থাকে। এর ফলে ধনেশ তার বড় আর ভারী ঠোঁট সহজে ধারণ করতে পারে ও ভারসাম্য রাখতে পারে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকা, এশিয়া মহাদেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে অধিকসংখ্যক ধনেশ দেখতে পাওয়া যায়। এক সময় বাংলাদেশেও প্রচুর ধনেশ ছিলো। বাংলাদেশে এরা এখন বিলুপ্ত প্রায়।
ধনেশ আকারে বেশ বড় হয়। কিছু কিছু ধনেশ আকারে শকুনের চেয়ে বড় হতে পারে। দেহ সাধারণত কালো হয়। কালোর উপর সাদা ডোরা কাটা থাকে। ঠোঁট আর ঘাড়ে লাল, হলুদ, কমলা রং থাকে। কিছু ধনেশের চোখের চারপাশে নীল বলয় থাকে।
ধনেশেরা জঙ্গলের গহীনে জোড়ায় জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে। এরা বেশ হৈ চৈ প্রিয়। অকারণের ডাকাডাকি করে, পাখা ঝাপটিয়ে নিজেদের বাসার কাছটা কোলাহলপূর্ণ করে রাখে। এমনিতে গাছের ডালে বাসা বানায়। কিন্তু, ডিম দেয়ার সময় স্ত্রী ধনেশ গাছের কোটরে ঢুকে সামান্য একটু ফাঁকা রেখে কোটরের মুখ বন্ধ করে দেয়। সেখানে বসে ডিম পারে আর ডিমে তা দেয়। পুরুষ ধনেশ খুঁজে খুঁজে খাবার নিয়ে আসে। স্ত্রী ধনেশ কোটরের ছোট্ট ফাঁকা দিয়ে ঠোঁট বাইরে বের করে দেয় আর পুরুষ ধনেশ স্ত্রী ধনেশের ঠোঁটে খাবার তুলে দেয়।
খাবার নিয়ে ঠোঁটটা আবার ভেতরে টেনে নেয় স্ত্রী ধনেশ। ধনেশেরা ফল থেকে শুরু করে কীটপতঙ্গ,গিরগিটির মত ছোট প্রানী সব খায়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত মা ধনেশ কোটরের ভেতরে থাকে আর বাবা ধনেশ খাবার এনে দেয়।
সাপ আর শিকারী পাখির হাত থেকে ডিম আর ছোট্ট ছানাকে রক্ষা করার জন্য এই ব্যবস্থা। ডিম থেকে ছানা বের হলে বাবা ধনেশ বাইরে থেকে কোটরের মুখ ভেঙ্গে দেয়।
এত ব্যবস্থা করেও অনেক সময় শেষ রক্ষা হয় না। পাহাড়িরা কোটর ভেঙ্গে ডিম বের করে এনে খায়। তাঁরা ধনেশের মাংস খায়, আর বাজারে ধনেশের তেল বিক্রি করে।
তাদের মতে ধনেশের তেল ও মাংস ঔষধিগুণ সম্পন্ন। অসুস্থদের জন্য অন্যতম প্রধান পথ্য! কিছু কিছু দেশের আধিবাসীরা ধনেশের ঠোঁট, পালক এমনকি কংকাল পর্যন্ত নিজেদের সাজসজ্জায় ব্যবহার করে। ফলে পৃথিবী জুড়েই অস্তিত্বের তীব্র সঙ্কটে পড়েছে আকর্ষনীয় ঠোঁটের সুন্দর এই ধনেশ পাখিরা।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল